Cvoice24.com


চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথে বেড়েছে যাত্রী, বগি বাড়ানোর দাবি

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১২ জুন ২০১৯
চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথে বেড়েছে যাত্রী, বগি বাড়ানোর দাবি

যাত্রীদের ভিড় চট্টগ্রাম- দোহাজারী রেলপথে

চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথে বেড়েছে যাত্রী। সে সাথে বেড়েছে আয়। এ পথে ৫টি বগি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে দুই জোড়া যাত্রীবাহী রেল। যাত্রী বাড়ায় গাদাগাদি করে রেলবগিতে যাতায়াত করছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। অনেকে ছাদে উঠে পড়ছেন বগিতে ঠাঁই না হওয়ায়। আবার অনেক বৃদ্ধ ও মহিলা ট্রেনে উঠতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন । 

যাত্রীর চেয়ে রেলের বগি কম হওয়ায় উপচেপড়া ভিড়। এতে নির্ধারিত গন্তব্য যাত্রায় নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। রেলযাত্রীদের দাবি, এ ভোগান্তি লাঘবে যদি আরো কয়েকটি বগি বাড়ানো হয় এবং আরও এক জোড়া ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে   যাত্রীদের যাত্রা হতো স্বস্তিদায়ক।

রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার পথটি রেলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। এক সময় চার জোড়া যাত্রীবাহী রেল আসা-যাওয়া করতো। কিন্তু ট্রেনের কোচ ও ইঞ্জিন সংকটের কারণে ধীরে ধীরে সার্ভিস কমিয়ে দেয়া হয়। নব্বইয়ের দশকে সংস্কারবিহীন এ পথে যাত্রীবাহী রেল এক জোড়ায় নামিয়ে আনা হয়। এতে বিপাকে পড়েন দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীসাধারণ। 

গত একদশকে রেল লাইন, সেতু, রেল গেইট ও স্টেশন নির্মাণের মধ্য দিয়ে নতুন রূপ দেওয়া হয় এ রেলপথকে। চট্টগ্রামবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর আরো একজোড়া রেল যুক্ত করা হয়। ফলে দুই জোড়া রেল সকাল-বিকেল এ পথে চলাচল শুরু করলে রেলমুখী হয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীরা। 

বোয়ালখালী উপজেলা সদরের বাসিন্দা মো. আজিজুর রহমান বলেন, সড়ক পথে নগর যাতায়াত খুবই কষ্টকর। বোয়ালখালী নগরের কাছের উপজেলা হলেও কালুরঘাট সেতুতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকা পড়তে হয় ও বোয়ালখালীতে গত দুই দশক ধরে বাস সার্ভিস বন্ধ । এসব ঝক্কি ঝামেলা এড়িয়ে সময় ও অর্থ বাঁচাতে রেলে যাতায়াত নিরাপদ। এ সময় পাশে থাকা আরেক যাত্রী আকুবদন্ডী গ্রামের সাগর নাথ বলেন, যানজটমুক্ত ও কম খরচে নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা হচ্ছে রেল। এ রুটে যদি আর এক জোড়া ট্রেন চলাচল করতো, তাহলে সড়ক পথে চাপ কমতো এবং দুর্ঘটনাও অনেকাংশে হ্রাস পেতো। 

বগি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে সরকারি চাকরিজীবী মো. আমজাদ হোসেন বলেন, প্রতিদিনই যাত্রী ভিড় থাকছে এ রেলপথে। বিশেষ করে সকালে নগরমুখী রেলে অনেক যাত্রীর ভিড় থাকে। এ সময় অনেকেই ট্রেনে উঠতেই পারে না। বগি কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

গোমদন্ডি স্টেশন এলাকার আজম খান জানান, সকাল ও সন্ধ্যায় প্রচুর যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে ৪টি রেল। কালুরঘাট সেতুর ভোগান্তি এড়াতে রেলমুখী হয়েছে বোয়ালখালীর মানুষজন। সে অনুযায়ী যদি সেবাও বাড়ানো হয় তবে সরকারি রাজস্ব আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রয়েছে ১৭টি স্টেশন। এর মধ্যে রয়েছে কালুরঘাট সেতুর পর গোমদন্ডি, বেঙ্গুরা, ধলঘাট, খানমোহনা, পটিয়া, চক্রশালা, খরনা, কাঞ্চন নগর, হাশিমপুর, খাঁনহাট ও দোহাজারী স্টেশন। গোমদন্ডি স্টেশন থেকে দোহাজারী স্টেশন পর্যন্ত প্রতি যাত্রীর টিকিট মূল্য ৮ টাকা ও গোমদন্ডি স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম নগরে যাওয়ার টিকিট মূল্য ৬ টাকা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, এ রেলপথের ১৭টি স্টেশনের মধ্যে গোমদন্ডি রেলওয়ে স্টেশনে গত বছরের অক্টোবর মাসে সাড়ে ১৬ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে, যাত্রী ছিলেন ৩ হাজার ১শত ৫৭ জন। দুই জোড়া রেল চালুর পর নভেম্বর মাসে টিকিট বিক্রি হয়েছে ২৭ হাজার ৯শত ১৫ টাকার ও যাত্রী ছিলেন ৫হাজার ৯৭ জন। ডিসেম্বর মাসে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৪৩ হাজার ৬শত ৫৮ টাকা,  যাত্রী ছিলেন ৭হাজার ৮ শত ২১ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হয়েছে ২ লক্ষ ১৩ হাজার ১শত ২৩ টাকার ও যাত্রী ছিলেন ৩৬ হাজার ৫৭ জন। 

গোমদন্ডি রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগের তুলনায় এ স্টেশনে যাত্রী বেড়েছে দ্বিগুণ। রেলযাত্রীরা এখন অনেক সচেতন। নিজে তো রেলের টিকিট কাটেনই পাশাপাশি অন্যযাত্রীও টিকিট নিয়েছেন কি না জানতে চান যাত্রীরা।

তিনি আরো বলেন,  আপ-ডাউন রেলে ৫টি বগি নিয়মিত আসা যাওয়া করছে। যাত্রীদের কথা বিবেচনা নিয়ে আরো দুইটি বগি বাড়ানো হলে উপকৃত হতো যাত্রীরা।

সিভয়েস/আই

রাজু দে, বোয়ালখালী  

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়