Cvoice24.com


সপ্তমবারের মতো কারাগারে ঈদ কাটলো বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর

প্রকাশিত: ১২:১৫, ৭ জুন ২০১৯
সপ্তমবারের মতো কারাগারে ঈদ কাটলো বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর

সপ্তমবারের মতো কারাগারে ঈদ কাটলো বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর।২০১৬ সাল থেকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা মিলে টানা সপ্তমবারের মতো পরিবার পরিজন ছেড়ে কারা অভ্যন্তরে অন্যান্য আসামিদের সাথেই তিনি ঈদ করেন। তার একমাত্র মেয়ে দীর্ঘ চারবছর বাবাকে ছাড়াই ঈদ করছেন। বছরের পর বছর জেলেই তার ঈদ কাটানোর বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে নির্মম ও নিষ্ঠুরতার সাথে তুলনা করে আগামি ঈদুল আযহার আগেই তার মুক্তি দাবি করেন। 

তার পরিবাবের দাবি, আসলাম চৌধুরী উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা, হৃদসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান মেনদি এন সাফাদি ভারত সফর করেন। সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেন সাফাদি। এতে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে গ্রুপ ছবি তোলেন সবাই। ওই ছবিতে আসলাম চৌধুরীও ছিলেন। মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের খবর আসার পর থেকে বিএনপির এই নেতা নজরদারিতে ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার পর তিনি গা ঢাকা দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৭ মে তার  বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার জারি করে। এরপর দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরে ও স্থলবন্দরগুলোয় সতর্কবার্তা পাঠায় গোয়েন্দা সংস্থা। এই ঘটনার কিছুদিন পর একই বছরের ১৫ই মে রাজধানীর কুড়িল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারের পর ২৬ মে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রব্বানী। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় তাকে কয়েকবার পুলিশি রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বর্তমান সরকার মেধাবী রাজনীতিবিদদের টুটি চেপে ধরেছে। আসলাম চৌধুরীর মতো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামের অন্যতম যোদ্ধাকে বছরের পর বছর জেলে রেখে সরকার অমানবিকতার পরিচয় দিচ্ছে। দেশে একদলীয় শাসনের প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও আসলাম চৌধুরী সহ লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী কারাগারে ঈদ কাটাতে হয়। এটি কত কষ্ট, যন্ত্রনার সেটা পরিবার আর নেতাকর্মীরা ছাড়া কেউ বুঝবে না।

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, সরকার আসলাম চৌধুরীর জনপ্রিয়তাকে এবং রাজনৈতিক আদর্শকে ভয় পায়। তা না হলে তার একমাত্র মেয়ের চোখের কান্নায় সবার মন ভিজলেও সরকারের অহংকার আর দাম্ভিকতায় সেই জল স্পর্শ করছে না। অন্য ৬ বারের মতো এবারো তাকে কারাগারে ঈদ করতে হচ্ছে। আমরা অনতিবিলম্বে এই নেতার মুক্তি দাবী করছি।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. বদরুল আনোয়ার চৌধুরী বলেন, দেশে এখন আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ। সরকার অন্য সব সেক্টরকে নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি আইনে বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণ করার আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসলাম চৌধুরীর দীর্ঘদিন কারাবাস এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদাহরণ। একটা মানুষ বছরের পর বছর কারাগারে কষ্ট পাচ্ছেন, একটি মামলায় জামিন পেলে অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হচ্ছেন এটা মেনে নেওয়া যায়না। ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দেওয়া মানে তার অধিকার হরণ করা। আমরা আশা করছি সংশ্লিষ্টদের বিবেকের জানালা খুলবে, আসলাম চৌধুরীকে সকল মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি দিবে।

আসলাম চৌধুরীর আইনজীবী এড. নাছিমা আক্তার চৌধুরী বলেন, দীর্ঘবছর আইন পেশায় রয়েছি এমন জঘন্য কাণ্ড কখনো দেখিনি। একটি মানুষ সব মামলায় জামিন পেয়ে যখন পরিবারের কাছে ফিরে যাবেন বলে মানসিক প্রশান্তি খোঁজেন ঠিক সেই সময়ে আরেকটি মিথ্যে মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়। একে একে ৮০ টি মামলা দিয়ে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে নিঃশেষ করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো আর্থিক চাপের মুখে রেখেছে। অর্থের জন্য মামলা দায়ের করছে। ব্যবসায় যদি না করতে পারে তবে কিভাবে ব্যাংক ঋণ শোধ হবে? আমি মনে করি সরকারের রোষানলে পড়ে একজন মেধাবী রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী কারাগারে দিনের পর দিন ধুঁকে ধুঁকে মরছে। ঈদের পর ঈদ যায় পরিবারের সাথে ঈদ করতে পারেন না। সরকার অনতিবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেন, একজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে মিথ্যা মামলায় এভাবে বছরের পর বছর কারাগারে রাখার নজির বাংলাদেশে নাই। বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে মানবিকতা বিতাড়িত হয়েছে বিধায় চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের নেতা আসলাম চৌধুরী এখনো অন্ধকার জেলে ঈদ কাটাতে হয়। এটি রাজনীতির জন্য যেমন অশনি সংকেত, দেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের জন্যও হুমকি।

তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে সরকারের রোষানলে পড়েছেন আসলাম চৌধুরী। মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকাই তার জন্য কাল হয়েছে। মাননীয় আদালত জামিন দিলে অন্য মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়ার জামিন যেমন সরকারের উপর নির্ভর করছে আমাদের নেতা আসলাম চৌধুরীর জামিনও সরকারের উপর নির্ভর করছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি এই নেতার মুক্তি দাবি করছি।

মামলার পাহাড়ে চাপা আসলামের জামিন: ২০১৪ সালে দেশব্যাপী সংঘটিত নাশকতার ঘটনায় আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার পর থেকে একের পর এক তার মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। একটি মামলায় জামিন পেলে অন্যদিকে নতুন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয় বলে অভিযোগ করেন তার আইনজীবী এড. নাছিমা আক্তার চৌধুরী। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ৮০ টি মামলা চলমান রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে দুদকের একটি মামলা ছাড়া বাকি সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন। ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে এই মামলাটি দায়ের করা হয়। এছাড়া আসলাম চৌধুরী কারাগারে যাওয়ার পর বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং দুদক বাদি হয়ে একডজনেরও বেশি মামলা দায়ের করেছেন। এর মধ্যে পূবালী ব্যাংকের সিডিএ কর্পোরেট শাখার তৎকালীন সহকারী মহাব্যবস্থাপক এস এম ইয়াহিয়ার দায়ের করা ৮ টি মামলা অন্যতম। এসব মামলাও বেশ ভোগাচ্ছে তাকে।

-সিভয়েস/এনএইচ/এএস/এমএম

মুহাম্মদ নাজমুল হাসান

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়