Cvoice24.com


পুনঃনিরীক্ষায় কৃতকার্য নিষিদ্ধ পণ্য; প্রশ্নবিদ্ধ বিএসটিআই

প্রকাশিত: ১০:২৪, ৩০ মে ২০১৯
পুনঃনিরীক্ষায় কৃতকার্য নিষিদ্ধ পণ্য; প্রশ্নবিদ্ধ বিএসটিআই

অবশেষে নিষিদ্ধ করা পণ্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিএসটিআই’এর পুনঃনিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো বেশকিছু পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে ওয়েলফুড ও মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইয়ের লবন, নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডুডলস নডুলস। নিষিদ্ধ করার ১৭ দিনের মাথায় পুনরায় পণ্যগুলোর উপর স্থগিতাদেশ তুলে নিলো বিএসটিআই।  পুনঃনিরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য উৎপাদন ও বিপনণে আর কোন বাধা রইলো না। 
বুধবার (২৯ মে) বিএসটিআই এর জারিকৃত এক প্রজ্ঞপনে এই আদেশ দেওয়া হয়। তবে পণ্যসমূহ একবার নিষিদ্ধ করার পর আবার পুনঃনিরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ায় খোদ প্রশ্নবিদ্ধ বিএসটিআই।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, নিষিদ্ধ করা পণ্যের প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৮ মে বিএসটিআই নিষিদ্ধ ঘোষিত পণ্যসমূহের কারখানা থেকে পুনরায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষান্তে সংশ্লিষ্ট মান অনুযায়ী কৃতকার্য হওয়ায় গত ১৬ মে জারিকৃত লাইসেন্স স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মধুবনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন সিভয়েসকে জানান, আমাদের কোন নোটিশ না দিয়েই বিএসটিআই আমাদের উৎপাদিত লাচ্ছা সেমাই নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর প্রেক্ষিতে আমরা পুনরায় আবেদন করি। পরে পুনঃনিরীক্ষায় আমাদের পণ্যটি কৃতকার্য হয়। ফলে মধুবনের লাচ্ছা সেমাই উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে আর কোন বাধা রইলো না। কিন্তু প্রশ্ন হলো বিনা কারণে আমাদের সুনামের যে ক্ষতি হলো তার দায় কে নেবে?

ওয়েল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম সিভয়েসকে জানান, বিএসটিআই বাজার থেকে ‘ওয়েল ফুড এন্ড বেভারেজ’ নামের একটি কোম্পানির লাচ্ছা সেমাই পরীক্ষা করে নিষিদ্ধ করে। অথচ আমাদের গ্রুপের নাম শুধুমাত্র ‘ওয়েলফুড’ এবং আমাদের পণ্য আমাদের নির্ধারিত আউটলেট ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না। 

এ বিষয়ে আমরা বিএসটিআই বরাবর লিখিত আবেদন করি। এরই প্রেক্ষিতে বিএসটিআই পুনরায় আমাদের উৎপাদিত লাচ্ছা সেমাই পুনঃনিরীক্ষা করে এবং পণ্যটি কৃতকার্য হয়। ফলে ওয়েলফুডের উৎপাদিত লাচ্ছা সেমাই বাজারজাতকরণে আর কোন বাধা নেই। কিন্তু নাম বিভ্রাটের কারণে আমাদের স্বণামধন্য প্রতিষ্ঠানটি যে অহেতুক হয়রানির শিকার হলো তার ক্ষতি পুষিয়ে দেবে?

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সেলিম রেজা সিভয়েসকে জানান, আমরা যেকোন পণ্যের লাইসেন্স দেওয়ার পর প্রতি ছয় মাস ও এক বছর অন্তর পুনরায় পুনঃনিরীক্ষা করে থাকি। তারই অংশ হিসেবে আমরা যেসব পণ্যের পুনঃনিরীক্ষা করি তার মধ্যে ৫২টি পণ্য নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ওয়েল ফুড ও মধুবনের লাচ্ছা সেমাই অকৃতকার্য হয়। ফলে পণ্য দুটির উৎপাদন ও বাজারজাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পণ্যগুলোর পুনঃনিরীক্ষা করলে কৃতকার্য হয়। যাতে আগেরবারের চেয়ে পণ্যের গুণগত মান বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড করা হয়েছে। ফলে ওয়েল ফুড ও মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইয়ের লবন, নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডুডলস নুডুলস উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে আর কোন বাধা নেই।

একবার নিষিদ্ধ করার পর আবার পুনঃনিরীক্ষায় ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ কামরুল ইসলাম বলেন, দেখুন আগেই বলেছি আমরা ছয় মাস পর পর পুনঃনিরীক্ষার জন্য মাঠ পর্যায়ে পণ্য সংগ্রহ করে থাকি। সেখানে যদি বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড বহির্ভূত পণ্য পাওয়া যায় সেগুলো আমরা নিষিদ্ধ করে থাকি। এটি প্রক্রিয়াগত অংশ। এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত হওয়ায় নামি-দামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২ ব্র্যান্ডের পণ্য জব্দ, ধ্বংস ও পণ্য উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ মে) কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটির পক্ষে হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান জনস্বার্থে এ বিষয়ে একটি রিট দায়ের করেন।

জব্দকৃত ৫২টি পণ্য হলো - প্রাণের হলুদ গুড়া, ফ্রেশের হলুদ গুড়া, মোল্লা সল্টের আয়োডিন যুক্ত লবণ, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারী পাউডার, সিটি ওয়েলের সরিষার তেল, গ্রীণ ব্লিচিংয়ের সরিষার তেল, শমনমের সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের সরিষার তেল, কাশেম ফুডের চিপস, আরা ফুডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আল সাফির ড্রিংকিং ওয়াটার, মিজানের ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ণ ডিউয়ের ড্রিংকিং ওয়াটার, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি নুডলস, শান্ত ফুডের সফট ড্রিংক পাউডার, জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশের হলুদের গুড়া, এসিআইর ধনিয়ার গুড়া, বনলতার ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচ গুড়া, মিস্টিমেলার লাচ্ছা সেমাই, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মিঠাইয়ের লাচ্ছা সেমাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইর আয়োডিন যুক্ত লবণ, কিংয়ের ময়দা, রুপসার দই, মক্কার চানাচুর, মেহেদীর বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশাল ঘি, নিশিতা ফুডস এর সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিলের হলুদ গুড়া, মধুমতির আয়োডিন যুক্ত লবন, সান ফুডের হলুদ গুড়া, গ্রীন লেনের মধু, কিরনের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিনের মরিচের গুড়া, ডলফিনের হলুদের গুড়া, সূর্যের মরিচের গুড়া, জেদ্দার লাচ্ছা সেমাই, অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপারের আয়োডিন যুক্ত লবণ, মদীনার আয়োডিন যু্ক্ত লবন ও নুরের আয়োডিন যুক্ত লবণ ডানকানের ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, আরার ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার এবং দিঘীর ড্রিংকিং ওয়াটার।

এইচআর

হিমাদ্রি রাহা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়