Cvoice24.com

প্রশাসনের নীরবতায় অবৈধ ৬ লক্ষ ঘনফুট পাথর মজুদ
লামা-আলীকদমে থামছে না অবৈধ পাথর উত্তোলন

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ২৯ মে ২০১৯
লামা-আলীকদমে থামছে না অবৈধ পাথর উত্তোলন

লামা-আলীকদম এলাকায় অবৈধ পাথর মজুদ করছে শ্রমিকেরা

প্রশাসনের উদাসীনতা ও পরোক্ষ সহায়তায় লামা-আলীকদমে বিভিন্ন নদী, ঝিরি, খাল, ছড়া ও ঝর্ণা হতে পানির উৎসসমূহ নষ্ট করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রায় ৬ লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর পাচারের জন্য মজুদ করা হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। বান্দরবান জেলা প্রশাসন থেকে কোন প্রকার সরকারি অনুমোদন বা ইজারা না দিলেও অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা।

লামা-আলীকদমের বেশ কয়েকটি স্থানে বিশাল বিশাল মজুদ করে উত্তোলনকৃত এসব অবৈধ পাথর রাখা হয়েছে। বিষয়টি সবার জানা থাকলেও একে অন্যের দায়িত্ব বলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে পাথর ব্যবসায়ীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।     

বান্দরবান জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি বছরে লামা-আলীকদমে পাথর তোলার অনুমোদন বা ইজারা দেয়া হয়নি। অবৈধ পাথর ব্যবসায়ী ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
  
এলাকাবাসী বলছে, লামা-আলীকদম উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে রাতের আধাঁরে পাচারের জন্য মজুদ করা হয়েছে লাখ লাখ ঘনফুট অবৈধ পাথর। বিশেষ করে লামার ইয়াংছা কাঠাঁল ছড়া, বনপুর, হরিণঝিরি এবং আলীকদমের ১০ কিলো, ৬ কিলো, রেপারপাড়ি, চৈক্ষ্যং আবাসিক এলাকায় বিশাল বিশাল পাথরের মজুদ করা হয়েছে। পাহাড়-খাল-নদী-ছড়া খুঁড়ে উত্তোলনকৃত এসব অবৈধ পাথর থেকে কোন রাজস্ব পাচ্ছেনা সরকার। সামনে বর্ষা মৌসুম। তাই ইতোমধ্যে পাথর ব্যবসায়ীরা কোয়ারী ও দূর্গম জায়গা থেকে পাথর আহরণ করে গাড়ির পয়েন্টে এনে রাখছে। অজ্ঞাত কারণে বিপুল পরিমাণের এই মজুদকৃত পাথর নিয়ে প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। 

সরজমিনে গিয়ে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙ্গালিদের কাছ থেকে জানা যায়, লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজার, কাঁঠালছড়া, ইয়াংছা মেম্বার পাড়া, গুলির মাঠ, শামুক ঝিরি, বদুর ঝিরি, মিরিঞ্জা, বনপুর বাজার, ছমুখাল, পাইক ঝিরি, ওয়াক্রা পাড়া, খ্রিস্টান পাড়া, মরার ঝিরি, চচাই পাড়া, কেরানী ঝিরি, কইতরের ঝিরি, বুদুম ঝিরি, চিনির ঝিরি, গয়ালমারা, বালস্ট কারবারী পাড়া ঝিরি, জোয়াকি পাড়া, বাকঁখালী ঝিরি, হরিণ ঝিরি, রবাট কারবারী পাড়া ঝিরি, বালুর ঝিরি, আলিক্ষ্যং ঝিরি হতে নির্বিচারে পাথর তুলে মজুদ করা হয়েছে।

এছাড়া গজালিয়া ইউনিয়নের ব্রিকফিল্ড, নিমন্দ মেম্বার পাড়া, মিন ঝিরি, ফাইতং রাস্তার মাথা, আকিরাম পাড়া, নাজিরাম পাড়া, ফাইতং ইউনিয়নের মিজ ঝিরি অংশ, লম্বাশিয়া, মেহুন্ধা খাল, শিবাতলী পাড়া এবং সরই ইউনিয়নের লুলাইং, লেমুপালং এ কয়েক হাজার স্তুপে লক্ষাধিক অবৈধ পাথর জমা করা হয়েছে। বর্তমানে লামা উপজেলায় পাচারের জন্য ৪ লক্ষাধিক পাথর মজুদ করা হয়েছে। এখান থেকে প্রতিরাতে চুরি করে পাথর পাচার হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা। পাথর উত্তোলন, পাচার করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা পানির উৎস নদী, খাল, ছড়াগুলো ধ্বংস করছে। এছাড়া ভারি ট্রাকে করে পরিবহণ করতে গিয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙ্গে নষ্ট করছে। এতে করে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। 


 
অপরদিকে, আলীকদম উপজেলার ২৮৭ নম্বর তৈন মৌজার ছোট ভরি, বড় ভরি, ঠান্ডা ঝিরি, মাংগু ঝিরির শাখা প্রশাখা, আলীকদম-থানচি সড়ক, চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের পাট্টাখাইয়া সড়কের পথে পথে পাথরের স্তুপ, চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ভরিখাল, কলার ঝিরির শাখা প্রশাখা, রেপারপাড়া এলাকার ডপ্রু ঝিরি, চিনারি দোকান এলাকার ভরিমুখ, মমপাখই হেডম্যান পাড়া, থানচি সড়কের ১০ কিলো, ৬ কিলো থেকে সরকারি অনুমতি ছাড়াই পাথর আহরণ ও পাচার করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এসব পয়েন্টে কমপক্ষে ২ লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর মজুদ করা হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানায়, এখানে উত্তোলনকৃত অধিকাংশ পাথর বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকা থেকে তোলা। পাথর সিন্ডিকেটের সাথে সরকারি কিছু কর্মচারী ও স্কুল শিক্ষক জড়িত রয়েছে। এছাড়া সরকারি বড় একটি উন্নয়ন কাজকে পুঁজি করে পাথর ব্যবসায়ীরা লামা-আলীকদমে অবৈধ পাথর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীরা প্রায় সময় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়েও পাথর নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

অবৈধ পাথর মজুদ ও উত্তোলনের বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আলীকদমের অতিরিক্ত দায়িত্বরত ইউএনও নুর-এ জান্নাত রুমির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানোর অনুরোধ জানান।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বান্দরবানের উপ-পরিচালক একেএম সামিউল আলম বলেন, আমরা বান্দরবানে নতুন অফিস সেটআপ করছি। দ্রুত লামা-আলীকদমের অবৈধ পাথরের বিষয়ে অভিযান চালানো হবে। 

সিভয়েস/এএস/এসএ
 

রফিকুল ইসলাম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়