Cvoice24.com


অর্থাভাব ও ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়ে অচলপ্রায় আমিন জুট মিল

প্রকাশিত: ১৬:২১, ২৬ মে ২০১৯
অর্থাভাব ও ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়ে অচলপ্রায় আমিন জুট মিল

ছবি : মিনহাজ ঝন্টু

সময়মতো বরাদ্দ না থাকা, ৫ যুগ আগের যন্ত্রাংশ দিয়ে মিল চালানো, ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয় ও সাম্প্রতিক সময়ের শ্রমিক আন্দোলনে প্রায় অচল দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাটকল আমিন জুট মিল। অথচ একসময় পাটজাত পণ্য উৎপাদনে বেশ নামডাক ছিলো এই মিলের। শ্রমিকদের দম ফেলার ফুরসতও মিলতো না। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে প্রায় বিপরীত চিত্র আমিন জুট মিলের।

নগরীর ষোলশহরে অবস্থিত এই জুট মিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিলের যেসব যন্ত্রাংশ রয়েছে তা ৫০ এর দশকে স্থাপনকৃত। অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখা হয়েছে। আবার কিছু কিছু যন্ত্রপাতি একেবারেই অচল। কিছু যন্ত্রপাতি ঠিক করা হলেও কয়দিন সচল থাকার পর কার্যত আবার অচল হয়ে পড়ে। ফলে অর্জিত হচ্ছে না উৎপাদনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা।

কথা হয় সেখানকার শ্রমিক ও আমিন জুট মিল শ্রমিক ইউনিয়ের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোস্তফার সাথে। তিনি সিভয়েস’কে জানান, ৩৪ বছর হলো এখানে কাজ করছি। এমন দুরাবস্থা আগে কখনো দেখিনি। নানামুখী সংকট বিরাজ করছে এখানে। জানুয়ারি মাসের পর থেকে বেতন বন্ধ। প্রায় দুই মাস বেতনবিহীন এখানকার তিন হাজার শ্রমিক। ঠিক মতো আর্থিক বরাদ্দ নেই। এসব কারণে আমরা আন্দোলনে নামি গত ১৩ মে থেকে। অবশেষে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আমরা পুনরায় কাজে ফিরি ২১ মে থেকে। কিন্তু সাময়িক আশ্বাস তো আর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারেনা। আমরা জানি সরকার শ্রমিকদের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু আর্থিক বরাদ্দ যদি নিয়মিত না থাকে তবে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়তেই থাকবে। কারণ আমরা দিনে আনি দিনে খাই।

এছাড়াও রয়েছে যন্ত্রপাতি সংকট। ৫২ সালের যন্ত্রপাতি দিয়ে এখনো এই মিল চালু রয়েছে। প্রায় পাঁচ যুগ আগের এসব যন্ত্রপাতি এখন বলতে গেলে প্রায় বিকল। তাই যে লক্ষ্যমাত্রার উৎপাদন হওয়ার কথা তা হচ্ছেনা।

মিলের এই অচলাবস্থা নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক সমন্বয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুনুর রশিদের সাথে।

তিনি সিভয়েস’কে জানান, আমিন জুট মিলের পাটজাত পণ্যের বাৎসরিক উৎপাদন ১১০০-১২০০ কোটি টাকা। কিন্তু এই উৎপাদনের পেছনে খরচ হয় ১৮০০ কোটি টাকা। ফলে ৭০০-৮০০ কোটি টাকার একটি ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে। এই ঘাটতির অন্যতম কারণ হলো সঠিক সময়ে কাঁচামাল কিনতে না পারা। কাঁচামাল ক্রয়ের মৌসুম হলো জুলাই থেকে অক্টোবর । কিন্তু সেসময় আমাদের বরাদ্দ থাকেনা। ফলে মৌসুম শেষে মন প্রতি দ্বিগুণ দামে কিনতে হয় কাঁচামাল। আর এই ঘাটতির প্রভার গিয়ে পড়ে শ্রমিকদের মজুরির উপর। ফলে সৃষ্টি হয় শ্রমিক অসন্তোষ। বন্ধ থাকে মিল। ফলে ব্যহত হয় উৎপাদন।

এছাড়া দেশে এখন বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রাণাধীন ২৬টি পাটকলের বিপরীতে বেসরকারি পাটকল রয়েছে ২০০ টি। বেসরকারিগুলোতে কোন শ্রমিক আন্দোলন নেই। কারণ তারা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে। ওখানের সিস্টেম ‘নো ওয়ার্ক নো পে’। তাদের সর্বোচ্চ মজুরি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। ফলে উৎপাদন ব্যয়ও কম। কিন্তু পাটকল কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন মিলগুলোর শ্রমিকদের বেতন বেশি। প্রায় এগারো হাজার টাকা। ফলে উৎপাদন ব্যয়ও বেশি। কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে উৎপাদন ব্যয়ের এই তারতম্যের কারণে বেসরকারি পাটকলের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছি আমরা। এছাড়াও বিশ্ববাজারে ভারতীয় পাটজাত পণ্যের কদরও বেশি। কিন্তু তাদের মান যে খুব একটা ভালো তা নয়। শুধুমাত্র উৎপাদন ব্যয়ের কারণে পিছিয়ে পড়ছি আমরা।

মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ আরও বলেন, আমিন জুট মিলের যে সব যন্ত্রপাতি রয়েছে তা প্রায় পাঁচ যুগ আগের। এসব মেশিন বিএমআরই( সার্ভিসিং) করা হয়নি এখনো। ফলে এসব মেশিনের কর্মক্ষমতা কমে গেছে প্রায় ৫০ ভাগ। এছাড়া এসব মেশিন অটোমেটেড নয়। ফলে বেসরকারি মিলগুলোতে যেখানে প্রতি মেশিনে তিন জন শ্রমিক কাজ করে সেখানে আমিন জুট মিলে লাগে দশ থেকে এগারো জন। এটাও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে সরকার খুব আন্তরিক। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে যন্ত্রপাতির বিএমআরই  (সার্ভিসিং) । পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী সম্প্রতি নরসিংদির ইউএমসি জুট মিলে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এছাড়াও পাটকলগুলোর উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে সরকার। আশাকরছি চলমান অচলাবস্থার অবসান ঘটবে শীঘ্রই।

উল্লেখ্য, দেশে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ২৬ টি পাটকল রয়েছে যার মধ্যে বন্ধ রয়েছে একটির উৎপাদন। সচল রয়েছে বাকি ২৫টি। চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে নয়টি, ঢাকা বিভাগে রয়েছে সাতটি, খুলনা বিভাগে রয়েছে নয়টি। এর মধ্যে ১৯৫২ সালে চট্টগ্রামের ষোলশহরে স্থাপিত হয় রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল আমিন জুট মিল । এখানে বর্তমানে চার ধরণের পাটজাত পণ্য উৎপাদিত হয়। এগুলো হলো- হেসিয়ান, পাটের বস্তা, সিবিসি কাপড় ও টোয়াইন সুতা।

-সিভয়েস/এসএ

 

হিমাদ্রী রাহা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়