Cvoice24.com


ওয়েল ফুডের স্বার্থেই জনগণের কষ্ট বাড়ালেন ছালাম

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ২৬ মে ২০১৯
ওয়েল ফুডের স্বার্থেই জনগণের কষ্ট বাড়ালেন ছালাম

ছবি : মিনহাজ ঝন্টু

নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো মুরাদপুরে একটি ওভারব্রিজ স্থাপন। অবশেষে সেই দাবী পূরণ হলেও ওভারব্রিজ নির্মাণের সঠিক নিয়ম না মানায় জনগণের কষ্ট ও ভোগান্তি বেড়ে গেছে। নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ওয়েল ফুডের স্বার্থ রক্ষা করে ওভারব্রিজটি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার চালু হওয়ার কারণে মুরাদপুরে বসবাসকারীদের রাস্তা পারাপারে বেশি সমস্যা হচ্ছে। জনগণের ভোগান্তি নিরসনে মুরাদপুরে একটি ওভারব্রিজ স্থাপনের দাবী উঠলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সে দাবী পূরণে ওভারব্রিজটি নির্মাণ করে। ওভারব্রিজটিতে উঠার এবং নামার জন্য একটি মাত্র পথ বা সিঁড়ি রাখা হয়েছে। ফলে একই পথে উঠতে এবং নামতে ওভারব্রিজ ব্যবহারকারীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ওভারব্রিজে উত্তর-দক্ষিণমুখী এবং দুই পাশের পশ্চিম দিকে উঠার এবং নামার সিঁড়ি রাখা হয়েছে। একটি সিঁড়ি রাখার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ওভারব্রিজটির পাশঘেঁষে রয়েছে একটি বহুতল ভবন। সেই ভবনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ওয়েল ফুড রেস্টুরেন্ট। ওভারব্রিজটিতে পূর্বদিক দিয়েও উঠার সিঁড়ি থাকলে তাঁর প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড এবং প্রবেশমুখে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনায় তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে।

আরও জানা গেছে, নগরীর ব্যস্ততম এলাকা হচ্ছে মুরাদপুর। উত্তর চট্টগ্রামের ৪টি উপজেলা এবং পার্বত্য এলাকার মানুষের শহরে আসার প্রবেশ পথ বলতে গেলে মুরাদপুরই। তাই এই মোড়টা সবসময় জনমানুষে ভরা থাকে। কিন্তু ঠিক মোড় ঘেঁষেই গড়ে তোলা হয়েছে ওভারব্রিজটি। ফলে মানুষ মোড় থেকেই উঠে এবং মোড়ে গিয়েই নামে। মানবজটের মধ্যে আরও মানুষের সমাবেশ ঘটে দক্ষিণ দিকে চকবাজারমুখী এবং উত্তর দিকে মুরাদপুরমুখী মানুষের কারণে। এতে অক্সিজেন সংযোগ সড়কে গাড়ি চলাচলেও সমস্যার সৃষ্টি হয়।

মুরাদপুর ফ্লাইওভারের পাশে দাঁড়িয়ে আব্দুল আলিম নামের একজনের সাথে কথা বললে তিনি সিভয়েসকে বলেন, আমরা সব সময় দেখি ওভারব্রিজে দুইদিক দিয়ে উঠার নামার ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু মুরাদপুরের মতো একটি ব্যস্ত এলাকায় কেন একদিকে উঠা-নামার সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে সেটি আমাদের বুঝে আসে না।

চট্টগ্রাম কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল হোসেন বলেন, ওভারব্রিজে উঠা-নামার জন্য একটি সিঁড়ি থাকায় মুখোমুখি হতে হয় সবাইকে। মানুষ বেশী হওয়ায় ওভারব্রিজ পারাপারে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে মহিলা ও বয়স্কদের বেশী সমস্যা হয়।

আয়রিন সুলতানা নামের এক গৃহিণী বলেন, ওভারব্রিজটি মানুষের জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমার মনে হয় দুই পাশে দুটি সিঁড়ি থাকলে বেশী ভালো হতো। এখানে মেয়েরা উঠা-নামার সময় ছেলেদের সাথে গা ঘেঁষে উঠতে নামতে হয়। এটি খুবই অস্বস্তিকর এবং কষ্টদায়ক।
ওবারব্রিজের পাশে অবস্থিত বেসরকারি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওভারব্রিজটি নির্মাণে মূলত একজন ব্যক্তির ইচ্ছে অনিচ্ছের ফলে জনগণের কষ্ট বেড়েছে। আপনি দেখেন এখানে (ওভারব্রিজের পূর্ব দিক্ষণে) দুটি ফাইলিংও করা হয়েছে পূর্বদিকে সিঁড়ির জন্য কিন্তু অজানা কারণে সেটি তৈরি করা হয়নি । একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য এটি করা হয়েছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ সিভয়েসকে বলেন, নগরে ছোট-বড় সব উন্নয়নই পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে হয়। পরিকল্পনায় কোন ধরনের অনিয়ম বা ঘাটতি হয় সেখানে জনদুর্ভোগসহ নানা সমস্যা তৈরি হয়। জনগণের জন্যই যেহেতু উন্নয়ন পরিকল্পনা সেহেতু এসব পরিকল্পনা জনমুখী হওয়া বাধ্যতামূলক।

তিনি আরও বলেন, মুরাদপুর অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা। ওভারব্রিজ নির্মাণ করে মানুষকে রাস্তাপারাপারে ঝুঁকি মুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু এখানে প্রচুর মানুষের নিত্য যাতায়াত সেক্ষেত্রে ওভারব্রিজের দুই পাশে উঠাৎ-নামার সিঁড়ি করা প্রয়োজন।

ওভারব্রিজটি নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সিভয়েসকে বলেন, মুরাদপুর অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা। এই এলাকায় মানুষের যাতায়ত সুবিধার জন্য ওভারব্রিজ নির্মাণ অত্যন্ত প্রয়োজন ছিলো। আমরা মানুষের ঝুঁকিমুক্ত পারাপারের জন্য ওভারব্রিজটি নির্মাণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখানে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম হয় সেজন্য আমরা প্রথম দিক থেকেই দুই পাশে সিঁড়ি তৈরির পরিকল্পনা ছিলো।

একটি সিঁড়ি দেওয়া এবং ওয়েল ফুড প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কথা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমরা সেখানে আরও একটি ওভারব্রিজ করবো, যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। সেটিতেও একটি সিঁড়ি থাকবে।

ওভারব্রিজটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন সিডিএ প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান তিনি বলেন, মুরাদপুরে ওভারব্রিজ নির্মাণে আমাদের পরিকল্পনা ছিলো দুই দিক দিয়ে সিঁড়ি করা। সেজন্য কাজও এগিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা দেখবেন পূর্বপাশে ইলেকট্রিক লাইন আছে। সেখানে সিঁড়ি তৈরি করতে গেলে মানুষের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। মানুষের জন্য ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে গিয়ে মানুষকে আমরা ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারি না।

ওয়েল ফুডের জন্য একদিকে সিঁড়ি করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ আরও বলেন, দেখেন ওয়েল ফুডের কোন প্রতিষ্ঠান আছে কি না আমরা জানিও না। ওয়েল ফুড একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আর সিডিএ সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের কার্যক্রমে বাধা হবে এমনটা হতেই পারে না।
তিনি আরও বলেন, মূলত ইলেকট্রিক সংযোগের জন্যই পূর্বপাশে সিঁড়ি করা হয়নি। আমরা মুরাদপুরে আরও একটি ওভারব্রিজ তৈরি করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এবং সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে কোন সাড়া মেলেনি।

সিভয়েস/এনএইচ/এএইচ

মুহাম্মদ নাজমুল হাসান

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়