Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


অর্ধেক রাস্তা হকারের দখলে, দুর্ভোগ পথচারী-যাত্রীদের

প্রকাশিত: ১৬:০৪, ২৫ মে ২০১৯
অর্ধেক রাস্তা হকারের দখলে, দুর্ভোগ পথচারী-যাত্রীদের

ছবি সিভয়েস

নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে তিনপুল পর্যন্ত অর্ধেক রাস্তা হকারদের দখলে। ফুটপাত থেকে রাস্তার ঠিক মধ্যবর্তী জায়গা পর্যন্ত খাবারের ভ্যান, শরবতের দোকান, টি-শার্ট দোকানীদের বসতে দেখা যায়। ফলে সড়কে যানজট লেগে আছে। এতে দুর্ভেোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী ও গন্তব্যে ফেরা লোকজনকে। আবার এসব হকারদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে নিচ্ছেন হকার্স সমিতির কয়েকজন নেতা। ওই এলাকায় রাস্তার উপর হকার্স বসে প্রায় একশো'র মত। প্রতি হকার থেকে ১০০ টাকা করে নিলে তা দাড়ায় ১০ হাজার টাকা। যা মাসের হিসাবে ৩ লাখ টাকা, আর বছরে ৩৬ লাখ টাকা। বিশাল অংকের এই টাকা যায় কোথায় ? প্রশ্ন জনমনের।

কয়েকদিনে নিউমার্কেট এলাকায় সরেজমিনে তদন্ত করে জানা যায়, প্রত্যেক হকার ভ্যানগাড়ি থেকে হকার্স সমিতির নামে যেসব টাকা উত্তোলন করা হয় তা সমিতির কাছে যায় না। শুধুমাত্র যেসব দোকান ফুটপাতে বসেছে সেগুলোর টাকা সমিতি পায়, বাকিগুলো চলে যায় চার জনের পকেটে। তারা হলেন, হকার্স সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু, সহ-সভাপতি ফরিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  আনোয়ার (যিনি কোতোয়ালী থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্বে আছেন) এবং অর্থ সম্পাদক শাহ আলম।

টাকা নেওয়ার বিষয়টি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু। তিনি বলেন, আমাদের নাম দিয়ে হয়তো কেউ টাকা নিতে পারে। কিন্তু এখানে আমরা সম্পৃক্ত নয়।

হকারদের শৃঙ্খলায় আনতে আন্তরিকতার কমতি নেই সিটি মেয়রের। তাই হকারদের তালিকা করে বসার সময়ও (বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা) বেঁধে দিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সেটির তোয়াক্কা না করে এবং সিটি কর্পোরেশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা ফুটপাত বাদ দিয়ে এখন রাস্তা দখল করে বসে আছে।

শনিবার (২৫ মে) সন্ধ্যার দিকে নিউ মার্কেট এলাকায় গিয়ে এসব দৃশ্যের দেখা মেলে।

জানা যায়, রেয়াজুদ্দিন বাজারের ডাটা বাজারের সামনে থেকে শুরু করে মিউনিসিপ্যাল স্কুলের সামনে ওভারব্রিজের নীচ পর্যন্ত হকারদের নিয়ন্ত্রণ করে চট্টগ্রাম হকার্স মালিক সমিতি (রেজি. নং- ১৬১৪)। এখানে রাস্তার পাশে ফুটপাতের উপর হকার্স বসানোর কারণে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং অফিসগামীদের বিপাকে পড়তে হয়। যার কারণে গত ২০১৬ সালের এপ্রিলের ৩ তারিখ মেয়র হকারদের বসার বিষয় নিয়ে একটি সময় বেঁধে দেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। নগরীতে কতজন হকার আছে ছবিসহ তাদের তালিকা দিতে হবে। ফুটপাত দৃষ্টিনন্দন করা হচ্ছে। মানুষজনের চলাচলের যাতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য তাদেরকে ফুটপাতের তিন ভাগের এক ভাগ জায়গা দেওয়া হবে। সেখানে তারা গ্রীষ্মকালে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এবং শীতকালে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসতে পারবে। কোন জায়গায় কোন হকার বসবে তা ঠিক করে দেওয়া হবে। ট্রলি বা গাড়ি নিয়ে আসবে, বিক্রি করবে, চলে যাবে। রাস্তায় নামতে পারবে না। চসিকের পক্ষ থেকে তাদেরকে আইডি কার্ড দেওয়া হবে। এতে করে তারা এলাকার মাস্তান বা পুলিশকে চাঁদা না দিয়ে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারবে।

হকারদের সাথে আমরা আলাপ আলোচনা করব। তাদেরকে কাউন্সেলিং করব। তবে হকারদেরকে সামনের ঈদ পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। নীতিগতভাবে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

কিন্তু এসব হকারদের সময় বেঁধে দেয়ার পর ব্যবসা শুরু করলেও তারা কোন নিয়ম নীতি মানছে না। যার যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। আবার রাস্তার মাঝখানের এসব হকার্সদের থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা নেয় হকার্স নেতৃবৃন্দ।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাস্তার মাঝখানে অবস্থান করা ব্রাশ বিক্রেতা অন্তু (ছদ্মনাম) হকার বলেন, প্রতিদিন বিকেল থেকে আমরা এখানে অবস্থান করি। সে হিসেবে আমার ৫০ টাকা করে দিতে হয়।

সুমন (ছদ্মনাম) নামে গরুর বট বিক্রেতা বলেন, রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করালেই কিছুক্ষণের মধ্যে টাকা চাইতে আসে। তাদের পরিচয় জানেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা হকার্স সমিতির নেতা। তাদের যদি নাম বলি তাহলে আমাদের আর বসতে দিবে না।

টি-শার্ট বিক্রেতা আলম (ছদ্মনাম) সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, কাকে কত দিই আপনাকে বলতে হবে কেন? আপনি কোথা থেকে এসেছেন সেটি বলেন। আমরা কোন উত্তর দিতে পারবো না।

কথা হয় পথচারী মিনহাজ উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, ফুটপাতের পাশাপাশি তারা রাস্তাও দখল করে ফেলছে । আসলে তাদেরকে সিটি কর্পোরেশন থেকে এত করে বলার পরও কেন কর্ণপাত করছে না। তারা আসলে মানুষকে কষ্ট দেয়, শান্তি দেয় না। এখন পুরো রাস্তা জ্যাম হয়ে আছে। এরকম প্রতিদিনই হয়।

এসব বিষয় নিয়ে চট্টগ্রাম হকার্স সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিভয়েসকে বলেন, আমরা চাইনা রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হোক। এ বিষয়ে আমার সমিতির পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। মেয়র মহোদয়ের কথামত আমরা এখানে দোকানপাট বসাই। তার বাইরের দোকানগুলো আমাদের নয়।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসন যদি রাস্তা দখলের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়, তাহলে আমাদের পক্ষ থেকেও তাদেরকে সহযোগিতা করবো।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক বিভাগের (উত্তর) উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ হাজারী সিভয়েসকে বলেন, আসলে রমজান উপলক্ষে মানুষ কেনাকাটা করতে আসে। গাড়িও বেশি থাকে, তারমধ্যে এসব ভাসমান দোকানের কারণে যানজট লেগে থাকে। আমি তো একা রাস্তা ক্লিয়ার করতে পারবো না, সকলে যদি একটু আন্তরিক হয় তাহলে এদের অপসারণ করা সম্ভব। আমরা আগামীকাল থেকে অবৈধ হকারদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিবো।

-সিভয়েস/এসএ

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়