Cvoice24.com


মেঝেতে ফলের দানা ফেলায় চিকিৎসা পায়নি শিশু!

প্রকাশিত: ১৬:৩০, ২২ মে ২০১৯
মেঝেতে ফলের দানা ফেলায় চিকিৎসা পায়নি শিশু!

ফাইল ছবি

শিশুর বয়স এক বছরও পূর্ণ হয়নি। হামাগুঁড়ি দেয় এখনো। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার রাত ১১টার দিকে বাঁশখালী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঠিকমতোই চলছিল চিকিৎসা। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডালিম (আনার) খাওয়াতে গিয়েই বিপত্তি বাঁধে। শিশুটির হাত ফসকে হাসপাতালের মেঝেতে পড়া দুটি ডালিমের দানা দেখেই কর্তব্যরত চিকিৎসক ক্ষেপে যান। অপরিষ্কারের অভিযোগে শিশুটির মায়ের সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে চিকিৎসা না দিয়েই ওয়ার্ড ছেড়েছেন চিকিৎসক। নিষ্পাপ শিশুটির মায়ের আকুতিও ওই চিকিৎসকের মন গলাতে পারে নি। পরে হাসপাতালের ছাড়পত্র না নিয়েই জরুরি চিকিৎসার্থে চট্টগ্রামে নিয়ে যান। আজ বুধবার (২২ মে) সকালে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে।

নয় মাস বয়সী শিশুটির নাম অমরজিৎ দাশ। পুলিশ সদস্য পিতা সনেট দাশ কর্মস্থলে থাকায় মুমূর্ষ অবস্থায় শিশুটিকে সোমবার রাতে বাঁশখালী হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ২৪নম্বর সিটে ভর্তি করা হয়। সেখানেই বাঁশখালী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তৌহিদুল আনোয়ার এমন ন্যাক্কারজনক কান্ড ঘটিয়েছেন। চিকিৎসা না পাওয়া শিশুটির পিতা উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কমরুল আযাদকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন।

বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কমরুল আযাদ বলেন, ‘আমি এমন ঘটনার খবর পেয়ে রোগীকে খুঁজতে যাই। পরে ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওই রোগী ছাড়পত্র ছাড়াই চলে গেছেন। পরে রোগীর পিতা আমাকে ফোনে ঘটনার বিষয়ে জানিয়েছেন। আমি বিষয়টি দেখবো বলে আশ্বস্থ করেছি।

শিশুর পিতা সনেট দাশ জানান, ‘আমি কর্মস্থলে থাকায় আমার ছেলেকে মুমূর্ষ অবস্থায় সোমবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছেলেকে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য আনার ফল খাওয়াতে গেলে দুটি দানা হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে যায়। এতেই ডা. তৌহিদুল আনোয়ার ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসা না দিয়ে চলে যান। আমার স্ত্রী ডাক্তারের পিছু ছুটে আকুতি জানালেও উনার মনে দাগ কাটেনি। শেষতক ছেলের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাৎক্ষণিক শিশুকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পর্যন্ত অভিযোগ দিব। চিকিৎসকের খুঁটির জোর কোথায় দেখবো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চিকিৎসক তৌহিদুল আনোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে তিনি সিভয়েসকে বলেছেন, আমি নিজেই শিশুটি এবং তার মাকে চিকিৎসা দিয়েছি। তবে আমাদের হাসপাতালের সিস্টার ময়লা ফেলায় তাদের হয়ত কিছু বলেছে। এটাকে ওনারা খারাপ ব্যবহার হিসেবে নিয়ে পরিচালককে অভিযোগ করেন। স্যার এ বিষয়ে বলার পর আমি তাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে আর পাইনি। শুনেছি তারা রোগী নিয়ে শহরে চলে গেছেন।

প্রসঙ্গত, ডা. তৌহিদুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে হাসপাতালে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সিভিল সার্জন বরাবরে গত ১৪মে এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ পেয়ে সিভিল সার্জন দুর্নীতি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন। আজ কমিটি অনিয়ম তদন্তে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এই বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দীকি সিভয়েসকে বলেন, ইতোমধ্যে এই হাসপালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাই হাসপাতালটির বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে তদন্ত টিম কাজ করছে। অভিযুক্ত কাউকে কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে। ডাক্তাররা রুটিন কাজ কেন করছে না সেটা তদন্ত টিম বের করবে। তবে আমি জেনেছি, ওই হাসপাতালে দুইটা গ্রুপ রয়েছে। যেখানে এলাকাবাসীরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

-সিভয়েস/ডাব্লিউএ/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়