Cvoice24.com


রোগীর চোখের ইশারায় চলবে বায়োনিক হুইল চেয়ার!

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ১৮ মে ২০১৯
রোগীর চোখের ইশারায় চলবে বায়োনিক হুইল চেয়ার!

বর্তমান ডিজিটাল যুগ। এ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে বিশ্ব। প্রযুক্তির দৌঁড়ে এগিয়ে যাবার প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ। লাল সবুজ পতাকার বাংলাদেশও প্রযুক্তির দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই। কোনো না কোনোভাবে নিজেদের এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চললেই। তারমধ্যে চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ট্রিপলি) বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তৈরি করেছেন বোয়োনিক হুইল চেয়ার। যা সম্পর্ণ পরিচালিত হবে রোগীর চোখের ইশারায়।

কালের পরিক্রমায় সবাই একদিন বৃদ্ধ হবে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধে গিয়ে এবং সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে হাত-পা হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। হাত-পা হারানোর পর তারা অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পঙ্গু অবস্থায় জীবনযাপন করেন। এছাড়াও অনেকেই সঠিক পরিচর্যার অভাবে মারাও যাচ্ছেন। তাদের এই নিঃসঙ্গ জীবন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্যই এই বায়োনিক হুইল চেয়ার।

চলতি বছরের ৫ এপ্রিল মিলিটারি ইনস্টিটিউট অবসাইন্স এন্ড টেকনোলোজি ইউনিভার্সিটির রোবোলিউসান ২০১৯ তে এটি প্রথম রানার্সআপ অর্জন করে।

এই চেয়ারটি মূলত প্যারালাইজড রোগীদের জন্য বানানো। তাই  সব ধরনের প্যারালাইজড রোগীদের কথা চিন্তা করে এটিতে এমন সব ফিচারস রাখা হয়েছে যাতে করে যে কোন ধরনের প্যারালাইজড রোগীরাই এর সুফল ভোগ করতে পারেন।

 সব ধরনের প্যারালাইজড রোগীদের কথা মাথায় রেখে এর মধ্যে রাখা হয়েছে ৬ ধরনের কন্ট্রোলিং সিস্টেমঃ ১. চোখের ইশারায়, ২. মাইন্ড অয়েভ (মনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত) সিস্টেম ৩. হাতের নড়াচড়ার মাধ্যমে, ৪. ভয়েসের মাধ্যমে, ৫. জয়স্টিকের মাধ্যমে এবং ৬. মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে এটিকে কন্ট্রোল করা যাবে।

বাজারে তো অনেক ধরনের হুইল চেয়ার আছে। কিন্তু এমন কি আছে এই বায়োনিক হুইল চেয়ারে যার জন্য চেয়ারটিকে বাজারের অন্য সব চেয়ারের চেয়ে সেরা এবং ভিন্ন রকমের। এই চেয়ারের আউটপুট ফিচারগুলি দেখলেই পেয়ে যাবেন আপনাদের এই প্রশ্নের উত্তর। আউটপুট এর কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে এই চেয়ারের মধ্যে থাকা “Patient Monitoring System”  এর কথা।

 এখানে “Patient Monitoring System”  জিনিসটা আসলে কি? এটি এমন একটি সিস্টেম যার মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে রোগী চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় চিকিৎসক রোগীকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে পারবে। রোগী মনিটরিং এর জন্য এই চেয়ারে রয়েছে অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা।

প্রাথমিক পর্যায়ে এই চেয়ারে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, হার্টবিট এবং এর বাইরে অন্য কোন কারণে রোগী উত্তেজিত হয়ে ছটফট শুরু করলে তা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে।

এখানে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা মনিটরিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে টেম্পারেচার এবং হিউমি ডিটিসেন্সর। রোগীর হার্টবিট মনিটরিংয়ের জন্য ব্যাবহার করেছে হার্টরেট মনিটরিং সেন্সর, এই সেন্সরের সাহায্যে হার্টবিট ডিটেকশনের পাশাপাশি এমন ব্যবস্থা রেখেছে যেন রোগীর হার্টবিট অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই ডাক্তার এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের মোবাইলে অটোম্যাটিক্যালি মেসেজ এবং মেইল চলে যাবে। এছাড়া রোগী যদি কোন কারণে ছটফট করতে শুরু করে (খিঁচুনি) তা ডাক্তার এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের জানানোর জন্য মোবাইলে অটোম্যাটিক মেসেজ এবং মেইল চলে যাওয়ার সিস্টেম রয়েছে।

তাছাড়া ইমারজেন্সি কোন কারণে রোগী কাউকে কোন কিছু জানানোর জন্য এই চেয়ারে একটি ইমারজেন্সি পুশবাটন রয়েছে, এই বাটন প্রেস করা মাত্রই ডাক্তার এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের মোবাইলে অটোম্যাটিক্যালি (“Your patient is in serious condition, please early take some steps”) মেসেজ এবং মেইল চলে যাবে।

এই চেয়ারের সাথে যুক্ত থাকবে মেডিসিনরি মাইন্ডার নামের একটাবক্স। এই বক্সের মধ্যে ছোট ছোট আরও ছয়টি বক্স থাকবে এবং ওই ছয়টি বক্সে থাকবে রোগীর ছয় বেলার ঔষধ, যখনি ঔষধ খাওয়ার সময় হবে ঠিক তখনি অটোম্যাটিক্যালি বক্সে এলার্ম বেজে উঠবে। যেই বেলার ঔষধ খাওয়ার সময় হয়েছে ঠিক ওই বেলার বক্সের এলইডি জ্বলে উঠবে এবং ঔষধের নামসহ সেবিকার মোবাইলে মেসেজ চলে যাবে, যে রোগীকে ঔষধ খাওয়ানোর সময় হয়েছে।

পরবর্তীতে অটোম্যাটিক্যালি মেডিসিন রিমাইন্ডার বক্সের ছয়টি বক্স থেকে যেই বেলার ঔষধ খাওয়ার সময় হয়েছে ঠিক ওই বক্সটা খুলে ঔষধ বের করে দিবে। পেশেন্ট মনিটরিং সিস্টেমে রোগীর সবডাটা ওয়েবসাইটে প্রদর্শন এবং ভবিষ্যতে কোন কারণে আগের ডাটা দেখার জন্য রাখা হয়েছে বর্তমান যুগে সবচাইতে বেশি আলোচিত (IoT) ইন্টারনেট অবথিংকস সিস্টেম।

পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে এই বায়োনিক হুইল চেয়ারটি বানানোর জন্য প্রায় ৩০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। এটি বাজারজাত করার ক্ষেত্রে এর খরচ আরও কমিয়ে আনা যাবে।

তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্মের উদ্দ্যেশে আমি একটা কথাই বলবো, “প্রাইভেট-পাবলিক ভার্সিটি কোন ফ্যাক্ট না। কখনো হতাশ হয়োনা,  সিজিপিএ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাক্টিক্যালি কাজ করো, যোগ্যতা অর্জন করো, ইনশাআল্লাহ লাইফে সফলকাম হবেই।

-সিভয়েস/এসএ

মো. আজমউদ্দীন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়