Cvoice24.com


৭ম ফাইনালে ঘটলো লাল সবুজের অপক্ষোর অবসান

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৮ মে ২০১৯
৭ম ফাইনালে ঘটলো লাল সবুজের অপক্ষোর অবসান

একবার না পারিলে দেখো শতবার। না শত ফাইনালের অপেক্ষা করতে হয়নি। ৬ ফাইনাল হারার কষ্টের স্মৃতি ভোলার উপলক্ষ আসলো। নিজেদের ৭ম ফাইনালে হলো অপেক্ষার অবসান। ‘আর কোনো ভুল নয়, ধরা দিলো পরম প্রার্থিত ট্রফি’।

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ট্রফি জয়ে নতুন এক ইতিহাস রচনা করল লাল সবুজের দল। লাল সবুজের দিন বদলের দলপতি মাশরাফি ও তার দল স্বপ্নের ট্রফি ঘরে তুললেন। লাল-সবুজের ওয়ান ডে ক্রিকেটের ইতিহাসে যা হয়ে থাকল সবেধন নীলমনি।

আর এর অন্যতম রূপকার টাইগার ওপেনার সৌম্য সরকার ও লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তাদের ঝড়ো ব্যাটে এক রকম উড়েই গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৪ ওভারে ২১০ রানের কঠিন লক্ষ্যও ছুঁয়ে ফেলল মাত্র ৫ উইকেটের খরচায়। বল বাকি ছিল আরও সাতটি।

সৌম্য ৪১ বলে ৬৬ ও মোসাদ্দেক অপরাজিত থেকে ২৪ বলে খেলেছেন ৫২ রানের দাপুটে ইনিংস।

অথচ কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবীয়রা ব্যাটিং শুরু করলে ২১.১ ওভারে হানা দেয় বৃষ্টি। ফলে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা ম্যাচ বন্ধ থাকে। এরপর ম্যাচ শুরু হলে ওভার কমিয়ে আনা হয় ২৪ ওভারে। বাকি তিন ওভার ব্যাটিং করে জ্যাসন হোল্ডাররা ১ উইকেটের বিনিময়ে সংগ্রহ করে ১৫২ রান। এখানে এই সংগ্রহে মূল অবদানটি রাখেন দলের ‍দুই ওপেনার সেইহোপ ও সুনীল আমব্রিস। হোপ ৭৪ রান ও  আমব্রিস অপরাজিত ছিলেন ৬৯ রানে। কিন্তু বৃষ্টি আইনে মাশরাফিদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১০ রান। ওভার প্রতি রান রেট ৮.৭৫, অর্থাৎ প্রায় ৯ করে প্রয়োজন ছিল টাইগারদের।

ভেজা আউটফিল্ড। ব্যাটসম্যানেরা সজোরে বল হাকালেও মাঠ গড়িয়ে বল বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করাটাই ছিল দূরূহ। এমন কণ্টকাকীর্ণ ম্যাচেও ফুল ফোটাল লাল সবুজের অদম্য দলটি। যার শুরুটা করেছিলেন দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবাল। দলীয় ৫৮ রান পর্যন্ত ক্যারিবীয় বোলারদের কোনো উইকেটই দেননি।

তবে দলীয় ৫৯ রানে এসে পা হারালেন তামিম। তখন ৬ ওভারের খেলা চলছে। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের তৃতীয় ডেলিভারিটি মিড অফে জ্যাসন হোল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলে দিলেন। এর আগেও একবার তাকে প্যাভিলনে ফেরত পাঠানোর উপলক্ষ এসেছিল উইন্ডিজ শিবিরে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে কেমার রোচোর ডেলিভারিটি খেলতে গিয়ে তুলে দিয়েছিলেন শর্ট থার্ডম্যানে। কিন্তু অ্যাশলে নার্স তা তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন। ফেরত যাওয়ার আগে দলকে দিয়ে গেছেন ১৮ রান।

তামিমের বিদায়ে রানের চাকা সচল রাখতে অর্ডার বদলে মারকুটে সাব্বিরকে নামানো হয় তিনে। অবশ্য কৌশলটি কাজে দেয়নি। কেননা ওই ওভারেই রানের খাতা না খুলে গ্যাব্রিয়েলের শেষ বলে এলবি’র ফাঁদে পড়ে ইনিংসের ফুল স্টপ টানেন সাব্বির। চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

কিন্তু সৌ’ম্যর টর্নেডো ব্যাটে সেই চাপ উড়ে যায়। দারুণ দৃষ্টিনন্দন এক একটি শটে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি তুলে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে থাকেন এই টাইগার ওপেনার। ত্রিদেশীয় সিরিজে এটি তার টানা তৃতীয় অর্ধশতক।

উইকেটের অপর প্রান্তে অপেক্ষাকৃত ধীরলয়ের ব্যাটে তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। দুজনের বোঝাপড়ায় বেশ ভালই এগুচ্ছিল লাল সবুজের ইনিংস। ঠিক তখনই আবার ছন্দপতন। ৪১ বলে ৬৬ রানের দাপুটে ইনিংস খেলে রেইফেরের বলে বদলি খেলোয়াড় কোট্রেলের ক্যাচ হয়ে ফিরে গেলেন সৌম্য।

সৌম্য’র বিদায়ের পর দলের সঙ্গে ২৫ রান যোগ করে ব্যক্তিগত ৩৬ রানে রেইফেরের শিকার বনে ফিরে গেলেন মুশফিকুর রহিম। আবার চাপে পড়ে বাংলাদেশ। উইকেটের অপর প্রান্তে মোহাম্মদ মিঠুন ছিলেন সত্যি কিন্তু প্রত্যাশিত ছন্দে খেলতে পারেননি। মাত্র ১৭ রান করে ফ্যাবিয়েন এলিনের বলে ফিরে গেলেন এলবি হয়ে।

এরপর অবশ্য আর কোনো বিপর্যয় নয়। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বিস্ফোরক ইনিংস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দায়িত্বশীল ব্যাটে ২২.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রান সংগ্রহ করে।

মোসাদ্দেক অপরাজিত ছিলেন ২৪ বলে ৫২ রানে। আর মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ১৯ রানে।

উল্লেখ্য, নিদাহাস ট্রফি কিংবা এশিয়া কাপের ফাইনালে একাধিকবার জিততে জিততে হেরেছে বাংলাদেশ। অবশেষে দূরদেশের ডাবলিনেই এলো স্বপ্ন পূরণের মাহেন্দ্রক্ষণ।

শুক্রবার মাত্র ২৪ ওভারে ২১০ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় টাইগাররা।

-সিভয়েস/এমএম

ক্রীড়া ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়