Cvoice24.com


ধূমপান থেকে কি রক্ষা পাবে নারীরা!

প্রকাশিত: ১০:৫১, ১২ মে ২০১৯
ধূমপান থেকে কি রক্ষা পাবে নারীরা!

‘সেদিন সুদূর নয়-যে দিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়।’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতার শেষ এ আর্জি এখনো পূরণ হয়েছে কি! দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারীরা পুরুষদের ছাড়িয়ে গেছে এ যেমন সত্য, সাধারণের মাঝে পুরুষদের তুলনায় নারী যে আজও পিছিয়ে একথাও কেউ অস্বীকার করবেন বলে বোধ করি না।

নারীর এ পশ্চাৎপদতা শুধু সম্পদে বা কর্মেই নয়, গুরুত্বারোপের বেলায়ও সর্বক্ষেত্রে যেন পুরুষদেরই অগ্রাধিকার দেই আমরা। গত ৮ মার্চ গেল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বছরের অন্য সময়ের থেকে এই দিনটিতে নারীদের অধিকার-সুরক্ষা নিয়ে সবার মাঝেই একধরনের কর্মোদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। অন্য সবার মত নারীদের অধিকার-সুরক্ষায় কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী আর একটি দিক তুলে ধরতেই আজকের লেখার অবতারণা।

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এমনকি মৃত্যুর প্রধান কারণ, এ নিয়ে ধূমপায়ীরাও বিপক্ষে যুক্তি দেবেন না। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যা অনেক কম, এও সকলের জানা। তবে ধূমপায়ীর সংখ্যা কম হলেও তামাকের অনেক অন্য ব্যবহার নারীদের মধ্যে আছে, এ কথাটি কি আমরা গুরুত্ব নিয়ে বিচার করছি? ধূমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে নানা প্রচার-প্রচারণা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। কিন্তু সচেতনতা তৈরির আয়োজনগুলো শুধু পুরুষদের জন্য হয়ে পড়ছে নাতো!

বাংলাদেশে গত আট বছরে তামাক সেবনকারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, যা তামাক নির্মূলে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতার প্রমাণ দিচ্ছে।

‘গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে ২০১৭’ জরিপ মতে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপায়ী এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর হার হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে ৫ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য তামাক বর্জনের এই চিত্রে এগিয়ে আছেন পুরুষরাই; ৫৮ শতাংশ থেকে কমে এসে ৪৬ শতাংশ পুরুষকে তামাকসেবী বলা হয়েছে জরিপে। অন্যদিকে নারীদের মধ্যে তামাক বর্জনের হার কমেছে সামান্যই; ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ধূমপান কমে এলেও মুখে তামাক খাওয়ার অভ্যাস এখনও কমে আসেনি নারীদের মধ্যে।

তবে শুধু ধোঁয়াবিহীন তামাকই নয়, দেশে শুধু পুরুষ ধূমপায়ীর জন্যই যে সিগারেট কোম্পানিগুলো ব্যবসা করছে না। নারী ধূমপায়ীদেরও এখন তারা বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। এমনকি নারীকে ধূমপানে আসক্ত করতে বাজারে আনা হচ্ছে নতুন সিগারেটও। সিগারেটের দোকানগুলোতে এখন নারী বিক্রেতাদের জন্য বিশেষ সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট, ফ্লেভারযুক্ত কম নিকোটিনের সিগারেটের ভালো চাহিদা আছে নারী ক্রেতাদের কাছে।

বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশে মোট নারীর দুই কোটিরও কিছু বেশি ধূমপানে আসক্ত। বাংলাদেশে প্রতি বছর পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ নারী তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যান। বিশ্বব্যাপী নারীরা নানা ধরনের প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তার মধ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যাই বেশি। এমনকি বর্তমানে পার্টি, কনসার্টসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমনভাবে পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে যেখানে মেয়েরা স্বাচ্ছন্দ্যে ধূমপান করতে পারে। ফলে এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলোতে নানা বয়সী নারী ও তরুণীদের দলে দলে ধূমপান করতে দেখা যায়।

দুঃখজনক হলেও সত্য, ইদানিং শহরে অনেক নারীরা পুরুষদের অনুকরণে ধুমপানে অভ্যস্ত হচ্ছে। এভাবে তারা শুধু নিজেদেরই ক্ষতি করছেন না, ক্ষতি করছেন অনাগত সন্তানের তথা নতুন প্রজন্মের। দেশে গ্রামে যারা বিড়ি সিগারেট খায় তারা নারীবাদ নিয়ে কথা বলে না। স্বামীকে পাকঘরের (রান্নাঘর) চুলা থেকে বিড়ি ধরাতে গিয়েও অভ্যাস হয়েছে, এমন ঘটনাও শোনা যায়।

ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তামাক কোম্পানির ক্ষতিকর পণ্যের ভোক্তা হয়ে আমাদের কোন লাভ আছে কি! তামাক কোম্পানি পুরুষদের পর নারীর দিকেই নজর দিয়েছে, তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে। কারণ তাদের ক্রেতাদের একটি বড় অংশ খুব তাড়াতাড়ি অকাল মৃত্যুর শিকার হবে, ফলে নতুন ক্রেতা তৈরি না হলে ব্যবসা হবে কোথা থেকে? তামাক কোম্পানির কৌশল রুখতে তাই ধূমপানের পাশাপাশি অন্যান্য তামাকপণ্য নিয়ন্ত্রণেও সবাই এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা রাখি।

-সিভয়েস/এসএ

সৈয়দ মোহন উদ্দিন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়