Cvoice24.com


বাঁশখালী কালীপুরের লিচু বাজারে, যাচ্ছে বিদেশেও

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৫ মে ২০১৯
বাঁশখালী কালীপুরের লিচু বাজারে, যাচ্ছে বিদেশেও

বাঁশখালীর কালীপুরের বাগানের লিচু

চট্টগ্রামে লিচুর কথা উঠলেই প্রথমে সুস্বাদু ও পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ লিচু উৎপাদন এলাকা হিসেবে বাঁশখালীর কালীপুরের নামটি সর্বাগ্রে উঠে আসে। এখানকার লিচু যেমন সুস্বাদু, তেমন পুষ্টি সমৃদ্ধ তাই কালিপুরের লিচুর কদর সারাদেশেই। 

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর লিচুর জন্য বিখ্যাত যুগ যুগ ধরে। বৈলছড়ি, গুণাগরি, পুকুরিয়া, জলদি, জঙ্গল চাম্বল সহ প্রায় প্রত্যেক ইউনিয়নেই পাহাড়ি এলাকায় একই সাথে সমতলে লিচুর চাষ হয়ে আসছে বহুকাল থেকেই। মৌসুমের একেবারে প্রথম দিকেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কালিপুরের লিচু।  

বাণিজ্যিক ও ঘরোয়াভাবে উৎপাদিত এই লিচুর কদর দেশজুড়েই। আগাম লিচু বাজারে দেখা মিলছে এখন। তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন না হওয়ায় এবার লিচুর উৎপাদন হয়েছে বরাবরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। লিচুর বাম্পার ফলন হলেও দামের কমতি নেই এখানে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবার আগাম লিচু বাগান ও লিচুর আকার ভেদে প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০টাকায়।

স্থানীয় বাজারে প্রথম দিকে দাম বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে ২০০-২৫০ টাকায় কমে আসবে। রাজশাহী-দিনাজপুরের লিচুর তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও স্বাদে-মানে বাঁশখালীর লিচুর তুলনা নেই। তাছাড়া বাঁশখালীর লিচুর তুলনায় রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুরের লিচু কিছুদিন পরে বাজারে আসতে শুরু করে। চট্টগ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় বাঁশখালীর লিচুর আলাদা কদর রয়েছে।

ইতিমধ্যে বাঁশখালী অধিকাংশ হাট বাজারে লিচু ক্রয় করার জন্য মানুষের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রতিদিন বাঁশখালী কালীপুরের রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে কিংবা গুনাগরিতে প্রধান সড়কের আশে পাশে সাধারণ যাত্রীরা গাড়ি থামিয়ে লিচু কিনতে দেখা যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ দেশ বিদেশে লিচু রপ্তানি করার জন্য  পাইকারি দামে ক্রয় করে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। 
মৌসুমের একেবারে প্রথম দিকেই বাজারে পাওয়া যায় বলে কালিপুরের লিচুর খ্যাতির রেয়াজটাও কমে না। 
এবার লিচু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান কালিপুর ইউনিয়নের পূর্ব পালেকগ্রাম এলাকার লিচু চাষী মো. নাছির উদ্দীন  ও নুরুল হক।

বাঁশখালী উপজেলার কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাঁশখালীতে ৫০০-৫৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাণিজ্যিক চাষ হয়। এবারে ফলন বেশি হওয়ায় লিচু চাষীরা খুশি বলে জানান তিনি। তাছাড়া কৃষি অফিস থেকে যথাযথ সহযোগিতা দেয়া হয়েছে লিচু চাষী দের- এমনটিও জানান ওই কর্মকর্তা। ব্রিটিশ আমল থেকেই বাঁশখালীর উপজেলার কালীপুরে জমিদার বংশের লোকজন বোম্বাই, কোলকাতা, চায়না-থ্রি জাতের লিচু চারা কলম সংগ্রহ করে বাগান করে আসছেন। পরে তা জলদি, পুকুরিয়া, সাধনপুর, চাম্বল, নাপোড়ায় বিস্তৃতি লাভ করে। ভালো ফলন হওয়ায় একেকটি বাগান এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁশখালীর তিন চারটি এলাকায় লিচুর পাইকারি বাজার বসে। পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন যায়গায় পৌঁছে যায় বাঁশখালীর এ লিচু।

বাঁশখালীর লিচুর কলম চারার চাহিদাও ব্যাপক। কালিপুর, বৈলছড়িসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে কলম চারার ব্যবসা ভালো জমেছে। দূর দূরান্ত থেকে লিচুচাষীরা কলম চারা কিনে নিয়ে যায় এখান থেকে।

কালিপুরের একটি বাগান থেকে লিচু কিনতে আসা চন্দনাইশ এলাকার আবসার উদ্দীন বলেন, 'সারা বছর তো আমরা রাসায়নিকযুক্ত লিচু খেয়ে থাকি। কিন্তু বাঁশখালীর লিচুতে ভেজাল থাকে না, তাই দাম একটু বেশি হলেও বাগান থেকেই বাচ্চাদের জন্যে লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বাঁশখালীতে প্রায় সাড়ে ৫শ হেক্টর জায়গা জুড়ে লিচু চাষ হয়ে থাকে। স্থানীয় উন্নত প্রজাতির এই লিচু উৎপাদনে চাষীরা বেশ গুরুত্ব সহকারে উৎপাদন কাজে শ্রম ব্যয় করায়  বাণিজ্যিক ও ঘরোয়াভাবে উৎপাদিত এই লিচুর কদর দেশজুড়েই। বর্তমানে বাঁশখালীর সর্বত্র আগাম লিচু বাজারে আসায় চাষীরা চড়া দামে বিক্রি করছে। 
লিচুর উৎপাদনের শুরুতেই বৃষ্টি কম হওয়ায় চাষীরা অনেকটা হতাশ ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বৃষ্টির দেখা মেলায় চাষীরা অনেকটা আশান্বিত হলেও প্রবল বাতাসে ও ভারী বৃষ্টি ও বজ্রপাতে লিচু গাছের ক্ষতি হতে পারে এ আশংকা করছেন চাষীরা। বাজারে আগাম লিচু বাগান ও লিচুর আকার ভেদে প্রতি শত লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩-৪শ টাকায়। স্থানীয় বাজারে প্রথম দিকে দাম বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে দেড়শ থেকে আড়াইশ টাকায় কমে আসতে পারে।

সিভয়েস/আই
 

মিজান বিন তাহের

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়