Cvoice24.com


তিন থানার টোকেনে কাপ্তাই রুটে চলে ১৮ হাজার অবৈধ গাড়ি

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ২৯ এপ্রিল ২০১৯
তিন থানার টোকেনে কাপ্তাই রুটে চলে ১৮ হাজার অবৈধ গাড়ি

গ্রাম সিএনজি চলাচলে নগরীতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও থানা থেকে পুলিশের টোকেন নিয়ে চালকরা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর বিভিন্ন অলি গলি। সড়কে বৈধ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই শুধুমাত্র থানা পুলিশের সাহায্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকরা সহজেই গাড়ি চালাচ্ছে নগরীতে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তিনটি থানাকে বড় অংকের টাকা দিয়েই এসব গাড়ি চলছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ। পুলিশ দায়ী করছে বিআরটিএ’কে। তারা জানিয়েছেন, বিআরটিএর তদারকি না থাকায় সড়কে এসব অবৈধ গাড়ি চলাচল করছে। সড়কে অবৈধ গাড়ি চলাচল নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করতে গিয়ে এসব তথ্য পেয়েছে সিভয়েস। 

           সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ৩টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা গ্রাম সিএনজিতে সড়কের দু’পাশ ভরপুর। এসব অবৈধ গাড়িগুলো টোকেন নিয়ে চলছে বিভিন্ন অলিতে-গলিতে। লাইন ভাগ করে সব গাড়িগুলো পেসেঞ্জার তুলতে ব্যস্ত। গাড়িগুলো লাইন ভাগ করে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, কাপ্তাই পর্যন্ত যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এ রুটে চলাচল করা অধিকাংশ গাড়িরই নেই রুট পারমিট। 

গাড়ির সামনের অংশে এপ্রিল মাসসহ গত কয়েক মাসের কয়েকটি স্টিকার লাগানো। স্টিকারে চট্টগ্রাম অটো রিকশা, অটো টেম্পু চালক সমবায় সমিতি, কাপ্তাই রাস্তার মাথা পরিচালনা কমিটির ব্যানারে একটি অন টেস্ট লেখা সম্বলিত একটি ক্রমিক নাম্বার। 

চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কিভাবে নগরীর অলিতে-গলিতে চলে এ বিষয়ে জানতে কথা হয় সিএনজি চালক মোহাম্মদ সেলিমের সাথে। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা আছে ঠিকই! কিন্তু যাতে এখানে গাড়ি চালাতে সমস্যা না হয়। সেজন্য প্রতিমাসে তিনটি থানা থেকে পাঁচশত টাকা করে দেড় হাজার টাকার টোকেন নিতে হয়। 

তিনি আরো বলেন, এ টাকা প্রথমে এ লাইনের নেতারা নেন। তারপর তাদের হিসাব থেকে থানায় ভাগবন্টন করেন। 

এ লাইনে কয়টি গাড়ি চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টোকেন বিক্রি হিসেব করলে তো আঠারো হাজার গাড়ি এ লাইনে চলে। যা একদম সহজেই বলা যায়। 

চালকরা বলেন, টোকেন থাকলে আমাদেরকে আর কোনো পুলিশ সমস্যা করে না। এ টিকেট থাকার কারণে আমরা কোনো সমস্যার সম্মুখ্খীন না হয়েই গাড়ি চালাতে পারি। এরপরেও যদি কোনো সমস্যা হয়। তাহলে এ সমস্যাগুলো এ লাইনের নেতারা দেখেন। 

তারা বলেন, আমাদের টাকাগুলো নিয়ম অনুযায়ী ভাগবন্টন হয়। আমাদেরকে টোকেন দিয়ে নেতারা টাকাগুলো নিয়ে যায়। তারপর সেখান থেকে নেতারা থানাভিত্তিক পুলিশদেরকে দেন। 

তারা আরো বলেন, এ লাইন দেখার জন্য ৩০ জনের একটি সংগঠন আছে। তারাই সবকিছু হ্যান্ডেল করেন। তারাই পুলিশ, ট্রাফিক দেখেন। 

গাড়ি চালাতে আর কাউকে টাকা দিতে হয় কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, টোকেন নিতে দিতে হয় আর প্রতিবার ভাড়া নিয়ে যেতে লাইনম্যানকে ৫/১০ টাকা দিতে হয়।

রাউজান থানার ওসি কেপায়েত উল্লাহর সাথে কথা হলে বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে ট্রাফিক বিভাগ। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

কথার শেষ পর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, বিআরটিএ’কে বলেন অন্য গাড়ির মতো এসব গাড়িও যাতে ভেঙ্গে ফেলে। তাহলেই তো হয়ে যায়! এতে আমার কোনো সমস্যাও নেই।  তিনি আরো বলেন, এসব গাড়ি যদি না চলে দিনশেষে তো আপনারাই তো গ্রামে যেতে পারবেন না। ভোগান্তিতে আপনারাই বেশি পড়বেন। 

এ বিষয়ে জানতে হাটহাজারী থানার ওসি বেলাল উদ্দীন জাহাঙ্গীরের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি। 

এ বিষয়ে হাটহাজারী থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, নেতারা এসব টোকেনের কথা বলে টাকা নিতে পারে। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে অবগত নই। থানা থেকে টোকেন দেওয়ার কোনো নিয়মও নেই। 

চান্দগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল বাসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, না এমন তো হতো পারে না। আমার থানায় এমন কোনো টোকেন দিয়ে গাড়ি চালানোর পারমিশন থাকলে আমি তো জানতাম। 

তিনি আরো বলেন, এমন কোনো চালক যদি সরাসরি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারে এবং সত্যতা দেখে মামলাও করতে পারবে। আর এ বিষয়ে সরকার থেকে আমার যা শাস্তি দিবে তা মেনে নেব।

সিভয়েস/এএস


 

মিনহাজ মুহি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়