Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


‘বিয়ে করে ঘরের বউকে কী খাওয়াইবি?’

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ২৭ এপ্রিল ২০১৯
‘বিয়ে করে ঘরের বউকে কী খাওয়াইবি?’

বিয়ের কথা বলবো বাড়িতে ? শুনতে হবে সে কমন কথা- ‘বিয়ে করে ঘরের বউকে কী খাওয়াইবি?’ মনে হচ্ছে ঘরের বউরা পৃথিবীর সব থেকে বড় পেটুক। তারা সবকিছু খেয়ে ফেলবে, বাড়ির অন্যরা খাওয়ার মত কিছুই থাকবে না। তারা তো বিয়ের আগে খায়নি, বিয়ের পরে শ্বশুড় বাড়িতে খাওয়ার জন্যই যাবে। আফসোস, এসব খাবারের যোগান দিবে বেচারা স্বামী।

গ্র্যাজুয়েশন শেষ। মোটামুটি চলার মত একটা চাকরিও হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের তখন মনে একটা প্রশ্ন কাজ করে। আসলেই কী মেয়েরা সবথেকে বড় খাদক? তারা কি বাপের বাড়িতে না খেয়ে থাকে? নাকি স্বামীর বাড়িতে খাওয়ার জন্যে একবেলা খেয়ে দুই বেলা অনাহারে থাকে?

পড়ালেখা যখন চলছে তখন তো বিয়ের কথা তোলা মানে তো বিষের বোতলে হাতে দেয়ার মত। একটা বিষয় খেয়াল করলাম! পরিবার থেকে ঠিক করা বিয়ে (অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ) কিন্তু আগের থেকে অনেক কমে গেছে। প্রেম করে বিয়ে (লাভ ম্যারেজ) তথা পালিয়ে বিয়ের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। আবার দিন দিন বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যাও। যারা পালিয়ে বিয়ে করছেন। একটা সময় তো ঠিকই মেনে নিতে হয় অভিভাবকদের। তবে মাঝখানে কেন এত ঝোড় ঝামেলা পোহাতে হয়?

আমার এক চাচার কথায় বলি, পালিয়ে বিয়ে করার পর আমার পরিবারের উপর কত হুমকি ধমকি! ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমার বাবা-চাচাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করা হবে আরও কত কি... শেষমেশ যখন চাচার একটি ফুটফুটে মেয়ে হলো তখন সবাই এক হয়ে গেলো। তাহলে এতকিছু করার কি প্রয়োজন ছিলো?

চলে গেলাম ভিন্ন প্রসঙ্গে এবার আসি সেই কথায় ‘বিয়ে করে ঘরের বউকে কী খাওয়াইবি?’। যদি ছেলে বউয়ের খাওয়া দাওয়াটাই একমাত্র বিষয় হয়ে দাড়ায়, তাহলে আপনারা অবশ্যই স্বীকার করবেন যে বাড়ির ৪ জন সদস্যের রান্না করা খাবারে আর একজন এক্সট্রা থাকলে আনায়াসে হয়ে যায়। আর তাও যদি আপত্তি থাকে তাহলে না হয় আপনার ছেলের খাবারের অংশটুকু আল্লাহ চাইলে তো সে আর তার বউ ভাগাভাগি করে খাবে।

ছেলের বউ থাকবে স্বামীর ঘরেই, ঘুমোবে স্বামীর বিছানাতেই। প্রসাধনী (কসমেটিক) বা প্রাসঙ্গিক কিছু খরচ তো আপনার মেয়ে থাকলে আপনি কি করতেন না? আর আপনাকে তো ছেলে বউ এর দায়িত্ব নিতে বলা হচ্ছে না। খাওয়া দাওয়া যদি ফ্যাক্ট না হয়, তাহলে একটু ভাবুন তো... ছেলের ক্যারিয়ারে এটা প্রতিবন্ধক? তাহলে জেনে রাখুন বিয়েটা ক্যারিয়ারে কোনো প্রতিবন্ধক না। বরং সহযোগী। অবৈধ সম্পর্কের ব্যাপকতা, অশ্লীলতা-বেহায়াপনা এগুলোই বরং ক্যারিয়ারের জন্য প্রতিবন্ধক, বিপজ্জনকও বটে। অভিভাবকরা কি জানেন? তার ছেলে মেয়ে কখন কোথায় যায়? কী করে? কখন কার সাথে পার্কে ঘুরতে যায়! তাও আবার শিশু পার্কে। মনে হয় শিশু পার্কগুলো আর শিশুদের নয়, বরং শিশু তৈরির পার্ক।

সাধারণত একটা ছেলে/মেয়ে পঞ্চম শ্রেণি পার হতে না হতেই তার মাঝে ভালোলাগা, ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে যায়, যেমনটি আমারও হয়েছিলো। এখন বিষয়টি আরও সহজ করে তুলেছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুক, টুইটার, ফ্রিং, ভাইবার, ইন্সটাগ্রামসহ সব কিছুই আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। যার ফলে একটা রিলেশন খুব সহজ হয়ে পড়েছে।

একসময় ইন্টারনেট বা মোবইল ফোন যখন হাতের নাগালে ছিল না তখন হয়তো শুধুমাত্র কাগজের চিঠির মাধ্যমে একটা রিলেশন জড়ানো এতটা সহজ ছিল না। কিন্তু এখন তো সবকিছু আমাদের হাতের মুঠোফোনে। তাইতো সকালে যখন পত্রিকা খুলে পড়ি সেখানে ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়া ছেলে-মেয়েদেরও উধাও হওয়ার সংবাদ দেখতে পাই।

এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে, চলুন জেনে নিই- প্রকৃত অর্থে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ের নির্দিষ্ট কোনো বয়স উল্লেখ করা হয়নি। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মাঝে যার কোনো (পুত্র বা কন্যা) সন্তান জন্ম হয় সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়; যখন সে বালেগ অর্থাৎ সাবালক/সাবালিকা হয়, তখন যেন তার বিয়ে দেয়; যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিয়ে না দেয়, তবে সে কোনো পাপ করলে উক্ত পাপের দায় ভার তার পিতার উপর বর্তাবে। (বায়হাকি, মিশকাত: হাদীস নং - ৩১৩৮)

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে এরশাদ করেছেন, ''তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর, আয়াত ৩২)

লক্ষ্য করুন, কুরআনের আয়াত আমাদের কি বলে- তখনকার সমাজে দাস দাসীরাও ছিল। এদের বলতে গেলে কোন টাকা-পয়সাই ছিল না। আল্লাহ বলেন, তাদেরকেও বিয়ে দিয়ে দাও। তাই এই যুক্তি যে, বিয়ে সম্পর্কে চিন্তা করার আগে কাউকে স্বাবলম্বী হতে হবে- তা এই একটি বক্তব্যের মাধ্যমে তছনছ করে দেয়া হল, সমীকরণ থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হল। যে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে তা হল, প্রথমতঃ তারা কি বিয়ের বয়সে পৌঁছেছে? আর দ্বিতীয়তঃ 'সলিহিন' ভাল মানুষ। ভাল মানে তাদের আল্লাহর সাথে ভাল সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা পরিণত, তারা প্রস্তুত।

এখানে সোজা কথা হচ্ছে যে, ব্যক্তি চরিত্র রক্ষার্থে বিয়ে করতে চান, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাকে রিজিকসহ যাবতীয় ব্যাপারে সাহায্য করার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। তাহলে অভিভাবক হয়ে কেন একটু সহানুভূতি দেখাতে পারছেন না? আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা কি যথেষ্ট নয়? আপনি বলতে চাচ্ছেন, ভাল চাকরি বাকরি কিছু একটা হোক তারপর বিয়ে! আল্লাহ রব্বুল আলামিনের এই বাণিতে কি আপনার কোনো ভরসা নেই?

যারা ছাত্রাবস্থায় আছেন তাদেরও বিয়ে করার মধ্যে রয়েছে অনেক উপকারিতা। ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করে ভালোবাসার প্রিয় এ জীবনসঙ্গিনীটি আপনার সন্তানের কাছে থেকে ক্যারিয়ারের ব্যাপারে যখন উৎসাহ দিবে, তখন সে পাবে একমুঠো পবিত্র ভালোবাসার হৃদয়স্পর্শী উৎসাহ। যখন দায়িত্বশীলতা যখন ঘাড়ে চলে আসবে সে নিজে নিজেই ক্যারিয়ার গঠনে আরো উঠে পড়ে চেষ্টা করবে। বিয়ে করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা কোনো প্রতিবন্ধকতা নয় বরং ভালো ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের বিশ্বস্ত সহযোগী। হয়তো ভার্সিটি লাইফ শেষে এখন থেকে ২/৩ বছর পরে আপনার ছেলে বিয়ের সামর্থ্য লাভ করবে, কিন্তু এখন যদি আপনারা (অভিভাবকরা) সাহায্য করেন তাহলে এই ক্ষণিকের জীবনে কিন্তু তার মহামুল্যবান ২-৩ বছর নষ্ট হবে না, তার দ্বীনও অর্ধেক পূরণ হবে, সে আপনাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ থাকবে।

তবে কেন আমরা এই সহজ বিষয়টাকে জটিল করে তুলছি? আরে ভাই, স্নাতক পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী প্রেম তো করছেই? তবে সেটা হালালভাবে করলে সমস্যাটা কোথায়? সেটাতে তো আল্লাহ তায়ালা আরও নেকি দিবেন।

যখন একটা সম্পর্কের মধ্যে এমনিতেই কত ভেজাল, ভাঙন হাবিজাবি কত কি! সে অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন বা কাবিন করে রাখলে সেই ভাঙন হাবিজাবির হাত থেকে তো রক্ষা পাওয়া যাবে। রেজিস্ট্রেশন করা থাকলে তারাও হালালভাবে প্রেম চালিয়ে যেতে পারবে। তখন আর লুকিয়ে পার্কে ডেটিং করতে হবে না। প্রকাশ্য প্রেম করবে। কেউ কিছু বলবে না আর বলতে পারবেও না।

এখন মূল কথা হচ্ছে আপনার সন্তানের নৈতিক চরিত্রের কথা। এই পলিসিতে অন্তত ডাস্টবিন থেকে আর নবজাতকের লাশ উদ্ধার হবে না। পেটে অবৈধ সন্তানের লজ্জা আর অপবাদ নিয়ে কোনো বোনকে দিতে হবে না গলায় ফাঁস।

তাহলে আমরা এই সহজ জিনিসকে কেন কঠিন করে ফেলছি? আমরা কি বিয়ের এই জটিল ধারণাকে সহজ করে দিতে পারি না? আমরা কি যুব সমাজকে রক্ষা করতে পারিনা? এর জন্য প্রয়োজন শুধু একটু সহানুভূতির। একটি সুন্দর পরিবেশ। অভিভাবকের ভালবাসা এবং সুন্দর মানসিকতার। তারাই পারে একটা সুন্দর সমাজ উপহার দিতে।

সূত্র- উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, গুগল।

লেখক : নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক পূর্বদেশ।

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়