রোববার কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স নিয়ে শুনানি আদেশ
ফাইল ছবি
কর্ণফুলীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স। প্রতিষ্ঠানটি একটি মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। এই শুনানির উপর আগামীকাল রোববার আদেশ দেওয়া হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ৩য় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের করা মামলার শুনানি সম্পন্ন হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এ মামলায় উচ্ছেদের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছিল। তাছাড়া হাইকোর্ট থেকে চট্টগ্রাম বন্দরকে নিজস্ব স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের জন্য দেয়া নির্দেশনার কপি বৃহস্পতিবার যথানিয়মে পাঠানোর কথা বলেছেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত আপীল বিভাগের বেঞ্চে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের করা আপীল খারিজের পর তারা মামলা করে চট্টগ্রামের ৩য় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে! গত ১৬ এপ্রিল কর্ণফুলী শিপ বির্ল্ডাসের পক্ষে এ মামলা (অপর মোকাদ্দমা নং-১৫৪/১৯) দায়েরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্থাপনা উচ্ছেদ কিংবা ভাঙ্গার বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন (আলাদা দরখাস্তের মাধ্যমে) করা হয়। ‘‘কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ’র পাচঁতলা ভবন (লাল চিহ্নিত অংশ) উচ্ছেদের একইসাথে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। এ মামলায় বিবাদী করা হয়েছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও সহকারি কমিশনার সদরকে (ভুমি)।
মামলার বাদী ছিল, কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার (আরজি অনুযায়ী) মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। মামলায় সম্পত্তির মূল্যমান দেখানো হয়েছে ২০ কোটি টাকা। মামলা দায়েরের সময় ৪৬ হাজার টাকা কোর্টফি পরিশোধ করা হয় বাদীপক্ষে।
আদালতের বিচারক মামলাটি (অপর মোকাদ্দমা নং ১৫৪/১৯) বালামভুক্ত করার আদেশ দেন। বাদীর আইনজীবীর বক্তব্য পর্যালোচনা করে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত আপাতত গ্রহণ করা হল বলেও আদেশ দেয়া হয়।
এর প্রেক্ষিতে সরকার পক্ষে চট্টগ্রামের জিপি অ্যাডভোকেট নাজমুল আহসান খান আলমগীর উল্লেখিত আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাব দেয়ার জন্য সময়ের আবেদন জানান।
গত বৃহস্পতিবার তিনি আদালতে আপীল বিভাগের আদেশের কপি উপস্থাপন করে শুনানিতে অংশ নেন। এসময় বাদীপক্ষের আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন।
সরকার পক্ষে অ্যাডভোকেট নাজমুল আহসান খান আলমগীর কাগজপত্র উপস্থাপন করে আদালতকে জানান, যে বিষয় নিয়ে মহামান্য আপীল বিভাগের আদেশ আছে একই বিষয় নিয়ে আর কোন মামলা চলে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আদালত কোন আদেশও দিতে পারেন না।
তিনি বলেন, আদালতের বিচারক তাৎক্ষণিক কোন আদেশ দেননি। রোববার আদেশ দিতে পারেন।
কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের পক্ষে দায়ের করা মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নকশা অনুসারে পাঁচতলা পাকা ভবন নির্মাণের মাধ্যমে কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য ও ফল হিমায়িত অবস্থায় রাখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, কর্ণফুলীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ১৫ এপ্রিল আবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করার রাস্তা পরিস্কার করেছিল আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চের আদেশে এ রাস্তা পরিস্কার করা হয়। কিন্তু এরপর মামলা দায়ের করা হয় ৩য় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে।
তথ্য অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি রিট দায়ের করা হয়েছিল। ওই রিটের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে একটি জরিপ প্রতিবেদন দিয়েছিল। সেখানে প্রায় ২১শ’অবৈধ স্থাপনা ছিল। এরপর ২০১৬ সালে একটি রায় হয় যেখানে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ওই রায়ের আলোকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। প্রথম দফায় ৫ দিনের এ উচ্ছেদ অভিযান থামে ৮ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান গত ৬ ফেব্রুয়ারি চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে যায়। এরপর তাদের ওই আবেদনটি আপীল বিভাগে শুনানি হয়। আদালত শুনানি শেষে গত ১৫ এপ্রিল তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের যতটুকু জায়গায় নদীর অংশে পড়েছে সেটুকু ভাঙ্গতে আর কোন বাধা থাকে না বলে জানান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আরো বলেন, বন্দরের অবৈধ স্থাপনাগুলো তারা নিজেরা উচ্ছেদ করার নির্দেশনা চেয়েছিলাম আদালতের কাছে। মহামান্য হাইকোর্ট সেই নির্দেশনা দিয়ে একমাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষকে। এ সময়ের মধ্যে নিজেদের স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে আদালতকে জানানোর জন্যও নির্দেশনা ছিল হাইকোর্টের তরফে। সেই নির্দেশনার কপি আমরা বৃহস্পতিবার যথানিয়মে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ এর পক্ষে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলেন।
আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু আদালত প্রতিবেদক