Cvoice24.com


বৈষম্য ও বিচারহীনতায় বাড়ছে খুনোখুনি

প্রকাশিত: ১২:১১, ১৯ এপ্রিল ২০১৯
বৈষম্য ও বিচারহীনতায় বাড়ছে খুনোখুনি

সাম্প্রতিক সময়ে সামান্য তর্কাতর্কির জের ধরে খুনোখুনির ঘটনা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে৷ তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে হওয়া এসব খুনের ঘটনা সমাজের সচেতন মানুষের মাঝে এক ধরণের অস্থিরতার জন্ম দিচ্ছে। প্রবল সামাজিক বৈষম্য বিচারহীনতার সংষ্কৃতিকে এজন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু হত্যাকান্ডের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একেবারে সামান্য তর্ককে কেন্দ্র করে অবলীলায় একজন আরেকজনকে খুন করে ফেলছে। আশ্চর্যজনকভাবে দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুনে ব্যবহার হচ্ছে ধারালো অস্ত্র এবং খুনের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এর আগে কোন অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনা নেই।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) চট্টগ্রামের হিলভিউ আবাসিক এলাকায় শাহাদাত নামে এক যুবক খুন হন তারই বন্ধু ফরহাদের ছুরিকাঘাতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, এক সাথে আড্ডা দেয়ার সময় পাশের এক দোকানের সামনে রাখা টেলিভিশনে লাথি দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রথমে দুজন তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হয়। তার জের ধরে পরে ফরহাদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ দিতে হয় শাহাদাতকে।

গত এপ্রিল কিশোর প্রেমের বিরোধ মিটাতে গিয়ে তর্কাতর্কির জের ধরে খুন হন লোকমান (২৫) সাইফুল (২৮) নামে একজনের ছোঁড়া গুলিতে নিহত হন তিনি। এর কয়েকদিন পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সাইফুল। টানা কয়েকদিন সরেজমিনে বাকলিয়া ঘুরেও দুজনের মধ্যে কোন পূর্ব শত্রুতা কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্বের তথ্য পাওয়া যায়নি।

২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট দোকানের সামনে আড্ডা দেয়াকে কেন্দ্র করে তর্কাতর্কির জের ধরে আগ্রাবাদ শিশুপার্ক এলাকায় দোকান কর্মচারী সাহেদের হাতে খুন হন কলকাকলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইমতিয়াজ হাসান মাহিন (১৪)

জিমের গেট খোলাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জেরে ২২ মে ২০১৮ সালে চান্দগাঁওয়ে আরমান নামে এক কিশোরের ছুরিকাঘাতে খুন হয় আরাফাত নামের আরেক কিশোর।

এরকম অসংখ্য হত্যাকাণ্ড গত এক বছরে এই নগরীতে হয়েছে, যেগুলো একেবারেই সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই দ্রুততম সময়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর পরেই এই ধরণের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা থামছেই না।

কেন ঘটছে এই ধরণের হত্যাকান্ড, এই বিষয়ে আলাপ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলামের সাথে। এসব ঘটনার পেছনে একটি 'না পাওয়ার চেতনাবোধ' কাজ করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সমাজে যখন প্রকট অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক বৈষম্য বিরাজ করে তখন বঞ্চিতদের মধ্যে না পাওয়ার একটা চেতনাবোধ তৈরি হয়।  আর এই না পাওয়ার চেতনাবোধ যখন কাউকে তাড়িত করে তখন সে আর সামাজিক মূল্যবোধের তোয়াক্কা করে না।

শুধুমাত্র বৈষম্য নয়, বিচারহীনতার সংষ্কৃতিও এই ধরনের অপরাধগুলোকে উৎসাহিত করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাশাপাশি সুস্থ সংষ্কৃতি চর্চার অভাবকেও আরেকটি কারণ বলে মনে করেন তিনি। একজন মানব শিশুর যে সুস্থ সামাজিকীকরণ দরকার সেটা নিশ্চিত করা না গেলে একজন লোক মূল সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে শুরু করে। ফলে এই ধরনের অপরাধগুলো ঘটাতে শুরু করে৷

বর্তমান সমাজ-রাষ্ট্রীয় বাস্তবতায় একটি অনৈতিকতার দাপুটে সংষ্কৃতি তৈরি হচ্ছে মন্তব্য করে মাইদুল ইসলাম বলেন, এতে করে মানুষ যে মূল্যবোধহীনতায় পর্যবসিত হচ্ছে তাতে নীতি নৈতিকতা মুখ থুবড়ে পরবে এবং ক্রমান্বয়ে সামাজিক অস্থিরতা আরো বাড়বে।

-সিভয়েস/এআরটি/এসএ

আবু রায়হান তানিন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়