Cvoice24.com

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়
পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার চেয়ে বাদির আবেদন!

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ১৭ এপ্রিল ২০১৯
পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার চেয়ে বাদির আবেদন!

 

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছেন মামলার  বাদী! আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে মামলার পরবর্তী তারিখে শুনানীর দিন ধার্য্য করেছেন। মামলা দায়ের করার  ২৩ দিনের মাথায় মামলা প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করায়  আদালতে বেশ আলোচনা হচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর পিপি ফখরুদ্দীন চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, পতেঙ্গা থানার সাবেক এক ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন নুরুল আবছার নামের এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে দুর্নিতী দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। এ অবস্থায় গতকাল মামলা প্রত্যাহার চেয়ে একটি আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনটি গ্রহন করে মামলার পরবর্তী তারিখে শুনানীর জন্য রেখেছেন।

আদালত সুত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ পতেঙ্গা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেমসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির ধর্ম বিষয়ক সাবেক সহ-সম্পাদক ও ব্যবসায়ী মো. নুরুল আবছার। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রামের পরিচালককে ঘটনার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলাটি তদন্ত চলাকালীন অবস্থায় গতকাল ১৬ই এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে মামলাটি প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন মামলার বাদি। আবেদনটি গ্রহন করে আগামী ৭ মে শুনানীর জন্য দিন ধার্য্য করেছেন আদালত।

মামলা প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন পত্রে তিনি পরিবার, পরিজন এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনুরোধের কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলাগুলোও আদালতের বিচারাধীন থাকবে। আবেদন পত্রে তিনি আরো উল্লেখ করেন, যেহেতু মামলাটি দুদক তদন্ত করেছে এ অবস্থায় তিনি দুদুককে কোন প্রকার সাক্ষি বা মামলার বিষয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে কোন তথ্য উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকবেন।এই মামলার আসামিরা রাজনৈতিক, ব্যবসায়ীক এবং ব্যক্তিগত জীবনে কোনরূপ প্রভাব ফেলবে না এমন প্রত্যাশা করে আবেদন পত্রে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নুরুল আবছার।

মামলায় আসামিরা হলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসি আবুল কাসেম ভূঁইয়া, এসআই প্রণয় প্রকাশ, এসআই (নিরস্ত্র) আবদুল মোমিন, এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা, এএসআই কামরুজ্জামান ও এএসআই মিহিরসহ তিন মাদক বিক্রেতা ইলিয়াছ ওরফে গাভী ইলিয়াছ, মো. জসিম ও মো. নুরুল হুদা।

২৫ মার্চ দায়ের করা মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে জানা গেছে, গত বছর ১ জুন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মোবাইলে ফোন করে পতেঙ্গা থানার এসআই প্রণয় প্রকাশ ব্যবসায়ী নুরুল আবছারের অবস্থান জানতে চান এবং বাসা থেকে রাস্তায় এসে দেখা করতে বলেন। ১৫ মিনিট পরই নুরুল আবছার সেখানে গেলে স্থানীয় একটি বেকারিতে গিয়ে দুজনে নাস্তা করেন। নাস্তা করার মধ্যেই সেখানে হাজির হন থানার এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা, এসআই আবদুল মোমিন, এএসআই কামরুজ্জামান ও এএসআই মিহির। এসময় তারা নুরুল আবছারকে থানায় গিয়ে ওসি আবুল কাসেমের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। থানায় যাওয়ার সাথে সাথে কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই নুরুল আবছারের কাছ থেকে এএসআই কামরুজ্জামান মোবাইল, গাড়ির চাবি ও টাকা পয়সা নিয়ে নেন। পরে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, পরদিন দুপুরে এসআই আবদুল মোমিন ও এসএসআই মিহির সেই কক্ষে এসে আমাকে বলেন, ‘তুই ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসা করিস। জীবিত থাকতে হলে ৩০ লাখ টাকা দিবি। টাকা দিবি না ৮৮ ধারায় চালান দেব আর না হয় ইয়াবা দিয়ে ক্রসফায়ারে দেব। এরপর অন্যান্য কর্মকর্তারাও ৩০ লাখ টাকার জন্য আমাকে মানসিকভাবে চাপ দিতে থাকে এবং ভয়ভীতি দেখায়।’ 

এজাহারে নুরুল আবছার আরো উল্লেখ করেন, কোন উপায় না দেখে ফুফাতো ভাইয়ের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে এসআই আবদুল মোমিন ও এএসআই কামরুজ্জামানকে দেয়া হয়। এরপরই এসআই প্রণয় প্রকাশ ও এসআই আবদুল মোমিন ৩০ লাখ টাকার অবশিষ্ট ১৫ লাখ দিতে বলেন। অন্যথায় ক্রসফায়ারে মৃত্যু অথবা প্রদর্শিত ইয়াবা দিয়ে আদালতে চালান দেয়ার হুমকি দেন।

বাকি টাকা না দেয়ায় থানার এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা বাদী হয়ে গত বছরের ৩ জুন পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই দিন দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর প্রায় দুই মাস জেল খেটে গত বছর ২৯ জুলাই জামিনে কারাগার থেকে বের হন ব্যবসায়ী নুরুল আবছার। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি দুদকেও লিখিত অভিযোগ করেন।

সিভয়েস/এনএইচ/এএস

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়