Cvoice24.com


একটি সেলাই মেশিনেই রুবি মারমা’র মুখে হাসি

প্রকাশিত: ১৩:০১, ১০ এপ্রিল ২০১৯
একটি সেলাই মেশিনেই রুবি মারমা’র মুখে হাসি

ছবি সিভয়েস

রুবি মারমা। খাগড়াছড়ি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট- সেলাই ট্রেডে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। খাগড়াছড়ি শহরের অদূরে যৌথ খামার মারমা পাড়ার কুঁড়েঘরে দীনহীন বসতি। ছোটকাল থেকেই বাবা বিহীন রুবি আর তার ছোট ভাই রাসোন মারমাও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। মায়ের দিক থেকে একসময় প্রতাপশালী পরিবারের সন্তান হলেও এখন তারা সর্বহারা। সামান্য ভিটেটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই অবশিষ্ট।

মা সাইন্দা মারমাকে স্বামী ছেড়ে গেলেও তিনি দমে যাননি জীবনযুদ্ধে। নিজের জীবন-জীবিকা আর সন্তানদের সুন্দর জীবনের প্রশ্নে তিনি নেমে পড়েন দিন মজুরীতে। যখন যেখানে যান দৈনিক শ্রম বিক্রি করেই কাটছে জীবন। শেষতক পেশা হিসেবেই বেছে নেন রাজমিস্ত্রী। অর্থাৎ যোগালি হিসেবে। কিন্তু একার আয়ে মেয়ে রুবি আর ছেলে রাসোন ভরণপোষণ চালাতে গিয়ে দিশেহারা জীবন যেনো বার বার হোঁচট খাচ্ছিল।

অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে শিশুবয়সী কন্যা রুবিকেও তার সাথে নিয়ে যেতে থাকেন হালকা কাজে। সেই সংগ্রামী জীবন যেনো পিছু ছাড়ছে না রুবিকে। একটু একটু অভাব বোঝার সময় থেকে স্বেচ্ছায় রুবিও জড়িয়ে পড়েন মায়ের সহযাত্রী রাজমিস্ত্রীর যোগালি কাজে। স্কুলের বন্ধে অথবা অভাবের তাড়নায় কখনো ছুটি নিয়ে আবার কখনো ছুটি না নিয়েও মা-মেয়ে দুজনই সমানে লড়ছেন অন্য এক জীবনযুদ্ধে।

কোন একদিন এই প্রতিবেদক আরদি ডেইলি স্টারপ্রতিনিধি সৈকত দেওয়ান অন্য এক সংবাদের খোঁজে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেন পাহাড়ি পথে। বিশ্রামের সময়টুকুতে মা সাইন্দা মারমা আর স্কুল শিক্ষার্থী কাম শ্রমিক রুবি মারমা জীবনগল্প শুনে শিউরে উঠেন।

সেই করুণ কাহিনী শোনার পর রুবি কাছে প্রশ্ন ছিলো, তাঁর জীবনের চাহিদা কি?

জবাবে সহজ সরল জবাব, সেলাই ট্রেড- পড়ার কারণে ভালোই সেলাই করতে জানেন। কাটিংয়ের কাজ শেখা চলছে। তাই একটি সেলাই মেশিন পেলে রুবি জীবন হয়ে উঠবে খুশীতে রঙিন। তার মনের স্বপ্নগুলো ডানা মেলো উড়বে। তাই বেশি কিছু চাওয়া নেই, কেবল একটি সেলাই মেশিন পেলেই তার চলবে।

অনেকের কাছে এই গল্প শোনালেও কারো মন গলেনি। শেষতক পার্বত্য জেলা পরিষদের নারী সদস্য খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শতরূপা চাকমা প্রতিশ্রুতি দিলেন, রুবি মারমা জীবন বিকাশে তিনি সবসময় পাশে থাকবেন।

তাঁরই অর্থায়নে বুধবার শেষ বিকেলে পাহাড়ি পথ বেয়েদি ডেইলি স্টারপ্রতিনিধি সৈকত দেওয়ান এই প্রতিবেদক কাঁধে করে নতুন একটি সেলাই মেশিন পৌঁছে দেন রুবি কাছে। কী দুর্ভাগ্য সেই মুহুর্তেও রুবি মা সাইন্দা হাজির থাকতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মা সাইন্দা মারমা তখন শহরের সবচেয়ে বৃহত্তম শপিং মলসেলিম মার্কেট ছয় তলায় কাজ করছিলেন। বিশালাকার সেই মার্কেটে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাই জানা হলো না তাঁর অনুভূতি।

প্রতিবেশি গৃহবধু কুলছুম বেগম জানালেন, রুবি আর তার মায়ের পরিশ্রম অবর্ণনীয়। বসত ঘরের অবস্থাও নড়েবড়ে। ধরনের পরিবারের পাশেই জনপ্রতিনিধিদের দাঁড়ানো উচিত বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি।

রুবি মারমা তার ছলছল চোখে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি ভাষাহারা। আমি জেলা পরিষদের সদস্য শতরূপা চাকমা কাছে শুধু ঋণী নয়, এইসাংগ্রাই (মারমাদের এতিহ্যবাহী সাংবাৎসরিক প্রধানতম সামাজিক ধর্মীয় উৎসব)- জীবনের শ্রেষ্ঠতম উপহার-অর্জন। এবার আমি নতুন উদ্যমে পথ চলা শুরু করবো।

শতরূপা চাকমা জানান, দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান থাকার সময়ও তিনি ধরনের দু:স্থ-অসহায়দের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো।

তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ধরনের শিশু নারীদের জন্য তিনি প্রয়োজনে একটি ফাউন্ডেশন গঠন করে তাদেরকে সংগঠিতভাবে নিয়ে কাজ করবেন।

-সিভয়েস/এসএ

প্রদীপ চৌধুরী, খাগড়াছড়ি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়