Cvoice24.com


‘থাপ্পড়’ ইস্যুতে বের হল জায়গাটি গৃহায়নের নয়, সিটি কর্পোরেশনের

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৮ এপ্রিল ২০১৯
‘থাপ্পড়’ ইস্যুতে বের হল জায়গাটি গৃহায়নের নয়, সিটি কর্পোরেশনের

জায়গাটি হস্তান্তরে সিটি কর্পোরেশনকে সওজের দেওয়া পত্র।

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জায়গার ওপর ড্রেন নির্মাণ করছে সিটি কর্পোরেশন, এমন দাবিতে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে আলাপচারিতায় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী শরাফুজ্জামান পলাশ। তবে থাপ্পড় নয়, বেয়াদবি করায় বকাঝকা করেছেন বলে দাবি করে আসছেন সিটি মেয়র। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশও কম হয়নি।
তবে যে জায়গাটিকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি, সে জায়গাটির মালিক গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ নয়! জায়গাটির প্রকৃত মালিক হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। ১৯৬৬-৬৭ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর রাস্তা নির্মাণের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১ কিলোমিটার থেকে ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ করে। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালের ২০ অক্টোবর রাস্তাটি সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে সংস্থাটি। ফলে হস্তান্তরকৃত পুরো জায়গাটি রাস্তা নির্মাণের জন্য বিধায় এটির মালিক সিটি কর্পোরেশন।

এসব বিষয় অবগত করে রোববার (৭ এপ্রিল) স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে পত্র প্রেরণ করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এছাড়াও মেয়রের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় ওই প্রকৌশলীকে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পত্র দিয়েছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা।

১ এপ্রিল গৃহায়নের প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান পলাশ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মূল নকশায় সড়কটি আছে ১২০ ফুট। কিন্তু কাজ শুরুর পর দেখা গেল, সিটি কর্পোরেশন ১৭০ ফুট জায়গা দখলে নিয়েছে। এতে আমাদের জায়গাও ঢুকে গেছে। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া তো এভাবে জায়গা অধিগ্রহণ করার নিয়ম নেই। আমরা প্রথমে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলাম। তবে ভুল তথ্য উপাস্থপন করে ব্যক্তিস্বার্থে অবৈধ কাঁচাবাজার টিকিয়ে রাখতে চান গৃহায়নের প্রকৌশলী। এমন দাবি করে চসিকের এস্টেট অফিসার এখলাছুর রহমান বলেন, শুধু অবৈধ কাঁচাবাজারটি নয়, রোববার জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি হোটেলের অবস্থানও জায়গাটির ওপর। জরিপ সম্পন্ন করে অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযান চালাবে সিটি কর্পোরেশন।

ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বরাবরে প্রেরিত পত্রে সিটি মেয়র উল্লেখ করেছেন, জাইকার অর্থায়নে মহানগরীর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোর্ট কানেকটিং রোড়ের উন্নয়ন কাজ চলমান। প্রকল্পের অধীনে রাস্তা প্রশস্তকরণসহ পার্শ¦বর্তী ড্রেন সংস্কার কাজ অন্তর্ভুক্ত এবং এ বছরের মে মাসে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত রয়েছে। হালিশহর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে উক্ত রাস্তার বড়পুল এলাকায় একটি পকেটল্যান্ড থেকে অবৈধ কাঁচাবাজার উচ্ছেদ করে ড্রেনের এলাইনমেন্ট সোজা করে নির্মাণ করতে গেলে গৃহায়ণের লোকজনের বাধায় কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছিল। মেয়র সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীর মাধ্যমে তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নেতৃত্বে ৬ জন প্রকৌশলী বিগত পহেলা এপ্রিল মেয়রের দপ্তরে আসেন। জনস্বার্থে এবং এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে নির্মাণাধীন ড্রেনের এলাইনমেন্ট সোজা করা হলে অসুবিধা কি জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কনিষ্ঠ প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জায়গায় ড্রেন করা যাবে না বলে তর্ক শুরু করেন। এক পর্যায়ে মেয়রের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। মেয়র তাকে ধমক দিয়ে বের হয়ে যেতে বলার পরও তিনি না যাওয়ায় সেখানে উপস্থিত ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মো. জোবায়ের তাকে হাত ধরে রুমে থেকে বাইরে নিয়ে যান। পত্রে এমনটা দাবি করেছেন সিটি মেয়র।

পত্রে আরও বলা হয়, এ প্রেক্ষিতে আশরাফুজ্জামান এবং গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগণ যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃত ঘটনা হলো, ১৯৬৬-৬৭ সনে সড়ক ও জনপদ দপ্তর কর্তৃক জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালের ২০ অক্টোবর রাস্তাটি সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে সংস্থাটি। ফলে রাস্তার জন্য অধিগ্রহণকৃত সমুদয় ভূমির মালিকানা সিটি কর্পোরেশনের কাছে চলে এসেছে। কিন্তু উক্ত রাস্তা সংলগ্ন পকেটল্যান্ডের পাশে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের হাউজিং প্রকল্প থাকায় বর্ণিত পকেটল্যান্ড তাদের দাবি করে আশরাফুজ্জামান ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য স্থানীয় একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বড় অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে সেখানে অবৈধ কাঁচাবাজার বসানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনের এলাইনমেন্ট সোজা করে বর্ণিত পকেটল্যান্ড অংশ সবুজায়নের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সমাপ্ত হলে উৎকোচের টাকা ফেরত দিতে হবে বিধায় তিনি মরিয়া হয়ে মেয়রের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।

এদিকে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে লিখেছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত মেয়রের সাথে নগরে কর্মরত একটি প্রতিষ্ঠানের নিম্ন পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং তৎপরবর্তী মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিবৃতি ও কর্মকাণ্ড নগরবাসী মেনে নিতে পারছেন না। সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের নির্বাচিত ৫৫ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, কর্পোরেশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে চলেছেন। ফলে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে তাকে চট্টগ্রাম থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

ওইদিন সিটি মেয়রের কাছে আসা টিমের নেতৃত্ব দেওয়া গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল আলমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এ বিষয়ে সিভয়েসকে বলেন, তারা তথ্য গোপন করে অপরাধ করেছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এবং রাস্তা নির্মাণের জন্য জায়গাটি অধিগ্রহণ করেছিল সড়ক ও জনপদ দপ্তর। পরে সেটা সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাস্তা নির্মাণের জন্য যে জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সেখানে তো অন্যকিছু হতে পারে না। কেউ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কাঁচাবাজার বা অন্যকিছু বসালে সেটা জনস্বার্থে উচ্ছেদ করা হবে। দলিল প্রমাণসহ আমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি, বাকিটা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।

সিভয়েস/ডব্লিএ/এএইচ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়