Cvoice24.com

মাসব্যাপী প্রতিবন্ধী হস্তশিল্প পণ্য মেলার মাইক বাজিয়ে লটারি বিক্রি
সাতকানিয়ায় শব্দদূষণে পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্নিত

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ২১ মার্চ ২০১৯
সাতকানিয়ায় শব্দদূষণে পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্নিত

সাতকানিয়ায় মাসব্যাপী শুরু হওয়া প্রতিবন্ধী শিল্প পণ্য মেলায় লটারি বিক্রির গাড়ির মাইকের শব্দে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। প্রশাসনের উদাসীনতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে মারাত্মক শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগী ও শিশুরা। বিশেষ করে বিঘ্নিত হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখা।

আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা কেন্দ্রের মাঠেই দেয়া হয়েছে মাসব্যাপী মেলার অনুমতি। পৌরসদরের সাতকানিয়া সরকারি কলেজ মাঠে ১০ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী এই মেলা। বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটি এ মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় স্টলের পাশাপাশি প্রতিদিন লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মোটরসাইকেল, রঙিন টেলিভিশন, ইজিবাইক, সোনার গয়নাসহ একাধিক পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে এই কুপন ড্রতে ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘দৈনিক লাকী কুপন’ নাম দিয়ে লটারির কার্যক্রম চলছে। শুধু মেলা প্রাঙ্গণ নয়, শহরের অলিগলি, গ্রামগঞ্জে লটারির টিকিট বিক্রির হিড়িক পড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সিএনজি, মোটর রিকশা, ভ্যানে মাইকিং করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। শতাধিক লোক এসব যানবাহনে টিকিট বিক্রি করছেন। প্রতিটি টিকিটের দাম ২০ টাকা।

সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, পটিয়া, চকরিয়া, পার্বত্য জেলা বান্দরবান এর হলুদিয়া পর্যন্ত ১২০টি ইঞ্জিন চালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত টেক্সীতে করে লটারি বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলে লটারি বিক্রি। সারাদিন উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে শব্দ দূষণ করলেও নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার স্কুল রোডে রাস্তায় সিএনজিতে মাইকিং করে টিকিট বিক্রি করছিলেন খুলনার গাজীহাট ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকার আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ তাঁর সামনে ভিড় জমিয়েছেন। সবাই একাধিক টিকিট কিনছেন। আশরাফুল বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে রাত দশটা ড্র’র আগ পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করি। প্রতি টিকিট থেকে  কমিশন পাই। টিকিট বিক্রি করে প্রতিদিন আয় হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’

এই বিষয়ে প্রশাসনের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন উম্মে হাবীবা নামে এক শিক্ষার্থী৷ এবারের এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি। সিভয়েসকে তিনি বলেন, "আর কদিন পরেই পরীক্ষা। শেষ সময়টা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ অথচ এই লটারি বিক্রির মাইকের আওয়াজে পড়াশুনা করার পরিবেশ পাচ্ছিনা৷ এই বিষয়ে প্রশাসনের তড়িৎ পদক্ষেপের দাবি জানান তিনি।

পাশাপাশি পরীক্ষার হলের মাঠে মেলার অনুমতি দেয়ায় পরীক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা করে স্থানীয় আবুল কাশেম বলেন, "সাতকানিয়া সরকারি কলেজে এইচ,এস,সি পরীক্ষার কেন্দ্র আছে। এই কলেজের মাঠে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কিভাবে মেলা চালানোর অনুমতি দেয় প্রশাসন?"

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেনের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, "বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যান সোসাইটি মেলা আয়োজনের অনুমতি চাইলে আমরা বলেছি কলেজ কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে তারা মেলা করতে পারবে। পরে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মেলার কার্যক্রম বন্ধ রাখার শর্তে তাদেরকে অনুমতি দিই।" এতে করে পরীক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা নেই বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে 'দৈনিক লাকী কুপন' এর প্রচারণার ব্যাপারে তিনি বলেন,  এই ধরনের কিছু করার অনুমতি তারা নেয়নি। এটা আমাদের নজরে পরেনি, এখন জানলাম। অভিযোগ খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়