Cvoice24.com


চসিকের খাদ্য পরীক্ষাগারের জট খুলছে

প্রকাশিত: ১৪:৫৭, ২১ মার্চ ২০১৯
চসিকের খাদ্য পরীক্ষাগারের জট খুলছে

অবশেষে জট খুলছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ‘আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার’ বা ‘ফুড সেফটি ল্যাব’। ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আরবান পাবলিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ইউপিইএইচএসডিপি) আওতায় এ খাদ্য পরীক্ষাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। জনবল কাঠামো অনুমোদন না পাওয়ায় পরীক্ষামূলক হিসেবে সীমাবদ্ধ ছিল এই পরীক্ষাগারটি। গত ৭ মার্চ ১৬টি পদের জনবল কাঠামো অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এ প্রকল্পটি এডিবি’র ২৮ কোটি টাকা অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়। জনবল নিয়োগের অর্গানোগ্রাম মন্ত্রণালয় অনুমোদন না করায় গত ৩ বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে চলে আসছে ল্যাবটি। তবে গত ১৫ জানুয়ারি ৩৪টি পদ সৃজন সংক্রান্ত বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকের সিদ্ধান্তক্রমে ১৬টি পদের অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যদিও এর পরে অর্থ মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি, যেসব পদ নিয়োগবিধিতে নেই, সেসব পদ নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্তি ও সর্বশেষ সৃজিত পদের অর্থ বিভাগের সম্মতিপত্র এবং প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের আদেশের পৃষ্ঠাঙ্কিত কপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে হবে।

১৬টি সৃজিত পদের মধ্যে রয়েছে- পরিচালক ১জন, সিনিয়র রসায়নবিদ ১জন, সিনিয়র মাইক্রোবায়োলজিস্ট ১জন, রসায়নবিদ ১জন, মাইক্রোবায়োলজিস্ট ১জন, উপ সহকারি প্রকৌশলী (ইলেক্ট্রিক্যাল) ১জন, ফুড সেফটি এন্ড সেনিটেশন অফিসার ১জন, হিসাবরক্ষণ ১জন, কস্পিউটার অপারেটর ১জন, ল্যাবরেটরি সহকারি ৩জন, অফিস সহকারি-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ১জন, অফিস সহায়ক ২জন।

চসিক সূত্র জানায়, নগরীর বিবিরহাটে স্থাপিত ৮ হাজার বর্গফুটের খাদ্য পরীক্ষাগারটিতে স্থাপন করা হয়েছে ৬টি আধুনিক ল্যাব। এরপর খাদ্যের ভেজাল শনাক্ত ও গুণাগুণ নির্ণয়ে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ৮২টি যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়। ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ল্যাবটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল ল্যাবটিতে খাদ্যের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছিল চসিক। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর ‘মান রক্ষা করা, প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন ও তার রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা’ এই তিন শর্তে পরীক্ষার অনুমোদন দেয়।

এরপর থেকে ল্যাবে সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরিদর্শকদের মাধ্যমে সংগৃহীত খাদ্যপণ্য ও খাবার পানিসহ বিভিন্ন পানীয় পরীক্ষামূলক টেস্ট করা হচ্ছে। তবে কোন সাইনিং অথোরিটি না থাকায় টেস্টের পরবর্তী কোন পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।

সূত্রটি আরও জানায়, চসিকের পক্ষে ল্যাবটিতে নিয়োগে জনবল কাঠামোর একটি অর্গানোগ্রাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই অর্গানোগ্রামে পরিচালকসহ ২৩ পদে ৩৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল। এ অর্গানোগ্রামের অনুমোদন না মিললেও ‘ইউপিইএইচএসডিপি’ প্রজেক্টের বিপরীতে ইতোমধ্যে পরিচালক ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অন্য পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে পরিচালকসহ আরও গুরুত্বপূণ পদ খালি থাকায় এতদিন আলোর মুখ দেখেনি ল্যাবটি। তবে এখন জট খুলেছে বলেছে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, জনবল কাঠামোর অনুমোদন ছাড়া খাদ্য পরীক্ষারগারটি আরোর মুখ দেখছিল না। এখন ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মূল জটটি সেরে গিয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপগুলো শেষ হলেই জনবল কাঠামো নিয়োগ হবে। ফলে পুরোদমে কাজ করতে পারবে খাদ্য পরীক্ষাগারটি। একইসঙ্গে ল্যাবটি নগরীর জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারটির মাইক্রোবায়োলজিস্ট আশিষ কুমার দাশ বলেন, আমরা প্রতি মাসেই বাজার থেকে সংগৃহীত ১৫টি খাদ্যপণ্যের পরীক্ষা করছি। সেগুলোর রিপোর্ট ঢাকায় প্রেরণ করছি। এতদিন সিটি কর্পোরেশনের জনবল নিয়োগ না হওয়ায় আমাদের কাজ টেস্টেই (পরীক্ষা) সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে। এখন যেহেতু জট খুলেছে, তাহলে আর বেশিদিন এভাবে চলতে হবে না।

তিনি আরও বলেন, নগরীতে যতগুলো রেস্টুরেন্ট বা খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোকে সিটি কর্পোরেশন থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু কোন ল্যাব না থাকায় তাদের ফুড কোয়ালিটি যাচাই করার সিটি কর্পোরেশনের কোন সুযোগ নেই। ল্যাবটি কাজ শুরু করতে পারলে এবং সিটি কর্পোরেশন চাইলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের খাদ্য নমুনা ও মান পরীক্ষাপূর্বক লাইসেন্স দিতে পারবে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে অনেক খাদ্য রপ্তানি ও চট্টগ্রামে অনেক খাদ্য আমদানি হয়। সেগুলোর মানও যাচাই করতে পারবে ল্যাবটি। এতে জনস্বাস্থ্য রক্ষা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি মোটা অংকের রাজস্ব অর্জন করতে পারবে সিটি কর্পোরেশন।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, আমরা অর্গানোগ্রামের অনুমোদন চেয়েছি অনেক আগে। সেটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আলোচনা সাপেক্ষে ১৬টি পদের অনুমোদন দিয়েছে। বাকি জায়গাগুলোতে অনুমোদন পেলেই পূর্ণাঙ্গ হবে ল্যাবটি। ঠিক কতদিন লাগবে তা বলা মুশকিল। তবে আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ কম সময়ে বাকি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করতে। তাহলেই চট্টগ্রামবাসী এ ল্যাবটির সুফল পাবেন।

-সিভয়েস/ডাব্লিউএ/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়