Cvoice24.com


কোটি টাকার সেচ প্রকল্প, সুবিধা মেলেনি ১৮ বছরেও

প্রকাশিত: ১২:১৭, ২১ মার্চ ২০১৯
কোটি টাকার সেচ প্রকল্প, সুবিধা মেলেনি ১৮ বছরেও

ক্যানেলের ইট খুলে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কিছু লোকজন।

ফটিকছড়িতে কোটি টাকায় নির্মিত রোসাংগীরি-নিশ্চিন্তাপুর সেচ প্রকল্প ১৮ বছরেও কাজে আসছে না কৃষকদের। ৩ কি.মি দৈর্ঘের সেচ প্রকল্পের মাত্র আধা কি.মি. অসম্পন্ন কাজের জন্য হাজার হাজার কৃষক তাদের কয়েক হেক্টর জমিতে চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সূত্র জানা যায় ২০০১ সালে তৎকালীন জাতীয় সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ার ও তৎকালীন রোসাংগীরি ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল আলমের প্রচেষ্টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে উক্ত প্রকল্পের কাজ শুরু হয় । প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘের সেচ প্রকল্পের  প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি টাকার কাজ করা হয়।  উক্ত প্রকল্পর কৃত্রিম খালের দুই সাইট ও নীচে পাকা করনের মাধ্যমে প্রায় আড়াই কি.মি. কাজ সম্পন্ন হয়।  বাকি আধা কি.মি কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দীর্ঘ ১৮ বছরেও চালু হয়নি প্রকল্পটি। এই সেচ প্রকল্পে  সরকারী ক্যানেল করার আগে স্থানীয় কৃষকরা নিজেরা পাম্প মিশিনের মাধ্যমে হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে ড্রেনের মাধ্যমে নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করত। পরবর্তীতে সরকারী ভাবে আরো অধিক জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য এই ক্যানেলের প্রকল্প করা হয় কিন্তু গত ১৮ বছরে ও এই ক্যানেল আলোর মুখ দেখেনি সে কারনে স্থানীয় কৃষকরা তাদের কয়েকশ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘের প্রকল্পটি হালদা নদী থেকে ২৪ টি পাম্প এর মাধ্যেমে পানি তুলে ক্যানেলের মাধ্যমে প্রবাহিত করে মরা ধুরুং এ অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত করে  রোসাংগিরি  ইউপি ছাড়া নানুপুর ইউনিয়ন, নিশ্চিন্তাপুন, সমিতির হাট ইউনিয়ন সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয় তিন পর্যায়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার ক্যানেলের কাজ করার পর বাকী আধা কিলোমিটার কাজ শেষ না করায় এই সেচ প্রকল্পটি চালু করা যাইনি। পাম্প বসানোর জন্য যে পাম্প হাউসটি নির্মাণ করা হয় তাহা ও অপরিকল্পিত ভাবে করা হয় বর্ষা মৌসুমে এই পাম্প হাউসটি পানিতে তলিয়ে যাবে।  সে কারণে ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম এসে পাম্প হাউসটি যথাযতভাবে নির্মিত হয়নি বলে রিপোর্ট দেয় বলে সূত্র জানায়। বর্তমানে পাম্প হাউসটি অসামাজিক কার্যকলাপের আস্তানায় পরিনত হয়েছে,  হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলনের জন্য লোহার বসানো ২৪টি পাইপ বর্তমানে জং ধরে গেছে অনেক পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। ক্যানেলের ইট খুলে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কিছু লোকজন।

স্থানীয় কৃষক মোহরম আলী, ফিরোজ মিয়া, নেছার আহমদ,ফয়েজ মিয়া, এমরান,ইদ্রিচ,কাসেম আলীর, সঙ্গে কথা বললে তারা জানান আমাদের পূর্বপুরুষরা স্থানীয় হালদা নদী থেকে পাম্প মিশিনের মাধ্যমে পানি তুলে চাষাবাদ করত। বর্তমানে সরকারী ভাবে পাম্প হাউস করা করায় আমাদের নিজেদের  পানির পাম্প বসাতে পারছি না এবং কাজ সম্পূর্ণ না করায় সরকারী পাম্প হাউসটি চালু করা হচ্ছে না তাহারা অতি দ্রুত ক্যানেলের কাজ শেষ করে সেচ সুবিধার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি জোর দাবি জানান। 

স্থানীয় মেম্বার সেলিম জানান ২০০১ সালে প্রথম পর্যায়ের বাঁশখালির সাবের কন্ট্রাকটর, তারপর সাতকানিয়ার সরোয়ার চেয়ারম্যান, ২০০২ সালে ফটিকছড়ির গিয়াস উদ্দিন কাজ করে। পাম্প হাউসের কাজ করেন কুমিল্লার আলম কন্ট্রাক্টর। ব্লকের কাজ করেন ফটিকছড়ির মহসীন কন্ট্রাকটর। সেচ প্রকল্পটির কাজ অসমাপ্ত থাকায় বিগত ১৮ বছর পযর্ন্ত এই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আগে যে জমিতে স্থানীয় ভাবে চাষাবাদ হত এই প্রকল্পের কারণে তাহা ও বন্ধ হয়ে গেছে তাই স্থানীয় কৃষকরা বলছে সরকারী প্রকল্পটি তাদের গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে।

এ ব্যাপারে রোসাংগিরি ইউপি চেয়ারম্যান সোহেব আল সালেহীন বলেন, আগে স্থানীয় কৃষকরা নিজেরা পাম্প বসিয়ে চাষাবাদ করত  সরকারের পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি গ্রহন করা হয় আরো অধিক পরিমান জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য সে লক্ষ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ক্যানেলটি করা হয় কিন্তু শেষ পর্যায়ের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এলাকার শত শত কৃষক চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে শত শত হেক্টর জমি খিলা পড়ে থাকছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে ও প্রকল্প চালু না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে প্রকল্পটির কাজ শেষ করে চালু করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম পৌর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আলী আফাজ চৌধুরী জানান, বর্তমানে সেচ প্রকল্পটির আধা কিলোমিটার ক্যানেলের কাজ শেষ না করায় সেচ প্রকল্পটি চালু করা হয়নি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন করে কাজ শেষ করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।                             
-সিভয়েস/এস

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম,ফটিকছড়ি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়