Cvoice24.com


টোকেন-কেইস স্লিপ যখন অবৈধ গাড়ির বৈধতার সনদ!

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২১ মার্চ ২০১৯
টোকেন-কেইস স্লিপ যখন অবৈধ গাড়ির বৈধতার সনদ!

নগরীতে অবৈধ গাড়ি চলাচলের জন্য রয়েছে অভিনব ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা দিয়ে টোকেন বা কেইস স্লিপ সংগ্রহ করলেই চষে বেড়াতে পারবেন অনায়াসেই। সড়কে কোনো ট্রাফিক আটকালে আপনার হাতে থাকা কেইস স্লিপ বা টোকেন দেখালেই মুচকি হাসিতে ছেড়ে দিবে আপনাকে। এ অভিনব ব্যবস্থার নেপথ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ আর টোকেন বিলি ও চাঁদা আদায়ের ব্যবস্থাপনায় থাকে শ্রমিক সংগঠনগুলো। এছাড়াও কেইস স্লিপ বিতরণ সরাসরি বা কথিত সোর্সের মাধ্যমে করেন ট্রাফিক সার্জেন্টরা। 

জানা গেছে, গাড়ির রুট পারমিটসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের মেয়াদ শেষ কিংবা বৈধ কোনো কাগজ না থাকলেও গাড়ি চলাচলের সনদ এ কেইস স্লিপ। এ রুট পারমিটের নাম ‘কেইস স্লিপ’। এ স্লিপে লেখা থাকে গাড়ির কাগজপত্র পুলিশের কাছে জমা আছে।

ফলে গাড়ির বৈধ কোনো কাগজ না থাকলেও অবৈধ ‘কেইস স্লিপ’ দিয়ে নগরীতে চলছে শত শত যানবাহন। আর টোকেন দিয়ে চলে বেশিরভাগ সিএনজি অটোরিকশা। নগরীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে প্রায় ৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলে টোকেন দিয়ে। যাদের মাসে প্রতি টোকেনের বিপরীতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। নগরীতে এ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকে কেইস স্লিপ ব্যবসা বেড়েছে আরও। কোনো ডকুমেন্টের ত্রুটি থাকলে যাত্রী নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। ফলে মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে কেইস স্লিপ নিয়ে নিলেই ঝামেলা শেষ। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্পটে ১৮০ জন ট্রাফিক সার্জেন্ট দায়িত্বপালন করেন। মূলত দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সার্জেন্টরাই রুট পারমিট এবং রাস্তায় চলাচলের বৈধ কাগজপত্র না থাকা গাড়ি ও চালককে টাকার বিনিময়ে ‘কেইস স্লিপ’ প্রদান করেন। স্পটগুলোতে দায়িত্ব পালনকারী সার্জেন্টদের মধ্যে সিংহভাগই প্রতি মাসে একেকজন গড়ে দেড় হাজার ‘কেইস স্লিপ’ প্রদান করেন। বিনিময়ে গাড়ি কিংবা চালকপ্রতি নেন তিন থেকে চার হাজার টাকা। এ ‘কেইস স্লিপ’ প্রদানের ক্ষেত্রে অভিনব কায়দায় দেওয়া হয় রাজস্ব ফাঁকি। প্রতি কেইস স্লিপের বিপরীতে তারা রাজস্ব খাতে দেন দেড় থেকে দুইশ টাকা। বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবণ্টন করেন। বিভিন্নজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, প্রতি মাসে এ অবৈধ বাণিজ্য থেকে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা অবৈধ আয় করেন কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, ‘কেইস স্লিপ থাকলে নগরজুড়ে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ানো যায়। ট্রাফিক সদস্যরা কখনো ডিস্টার্ব করেন না। বৈধ কাগজ থাকলে পুলিশ সদস্যরা ডিস্টার্ব করেন। তাই চালকদের অনেকে কেইস স্লিপ সংগ্রহ করেন। এ সুযোগ থাকায় অনেকে ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ যানবাহনের কাগজপত্র আপডেট রাখার প্রয়োজন মনে করেন না। ’

এ বিষয়ে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান সিভয়েসকে বলেন,  এ অভিযোগটা আমরাও শুনি। কিন্তু হাতে কলমে প্রমাণ নিয়ে কেউ অভিযোগ করে না। প্রমাণ পেলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থাগ্রহণ করতে প্রস্তুত। বিগত সময়ে এরকম কয়েকটি অভিযোগ ছিল, সেগুলো আমার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছি। 

সিভয়েস/ডব্লিউএ/এএইচ

আব্দুল্লাহ আহাদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়