Cvoice24.com


বাঘাইছড়িতে নিহত ৬ জন, আহতরা হেলিকাপ্টারে চট্টগ্রামে

প্রকাশিত: ১৭:০১, ১৮ মার্চ ২০১৯
বাঘাইছড়িতে নিহত ৬ জন, আহতরা হেলিকাপ্টারে চট্টগ্রামে

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে নির্বাচন কর্মীদের উপর ব্রাশফায়ার করেছে দুর্বৃত্তরা। এ হামলায় ৬ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে দীঘিনালা-বাঘাইছড়ি সড়কের নয়মাইল এলাকায় তাদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

নির্বাচনী কর্মীরা বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাচালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঘাইহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন শেষে একসাথে বিজিবি প্রহরায় গাড়ীবহর নিয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে ফিরছিলেন।

হামলায় আইন-শৃঙ্খলা আনসার বাহিনীর ভিডিপি সদস্য আল আমিন (১৭), বিলকিস বেগম (৪০), মিহির কান্তি দত্ত (৪০), জাহানারা বেগম (৪০), পথচারি মন্টু চাকমা (২৭) ও শিক্ষক মো: আমির হোসেন (৪০) নিহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম জানা সম্ভব হয়নি।

বাঘাইছড়ি থানার ওসি এমএ মনজুর জানিয়েছে, সাজেক ইউনিয়নের তিনটি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন শেষে নির্বাচনী কর্মকর্তারা আনসার ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বিজিবি প্রহরায় চাঁদের গাড়ি (জিপ) করে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে ফিরছিলেন। এসময় তাদের গাড়িতে থাকা নির্বাচন  কর্মকর্তাদের উপর ব্রাশফায়ার করা হলে চালক গাড়ী না থামিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়িটি চালিয়ে বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে গাড়ীতে থাকা কর্মকর্তাদের নামানোর পর একে একে গুলিবৃদ্ধরা মৃত্যু বরন করেন।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ জানান, তিনটি কেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে তারা সবাই ফিরছিলো। তখন তাদের উপর নয় মাইল এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে। তিনি জানিয়েছেন,আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকাপ্টারযোগে চট্টগ্রামে পাঠানো হচ্ছে। 

এবিষয়ে নিবার্চনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা)র প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা জানিয়েছেন, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস’র প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা নিশ্চিত পরাজয় জেনে সকালে নির্বাচন বর্জন নাটক করার পর সন্ধ্যায় সরকারি কাজে নিয়োজিতদের উপর এই নৃশংস হামলা চালিয়েছে। তিনি এই হামলার জন্য জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা) ও ইউপিডিএফ (প্রসিত) কে দায়ি করেছেন। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটির সহ সাধারন সম্পাদক ত্রিদিব চাকমা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এই ঘটনার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ ওই এলাকায় আমাদের কোন  সাংগঠনিক কার্যক্রম বা অবস্থান নেই। ওইটা পুরোটাই ইউপিডিএফ এর নিয়ন্ত্রিত এলাকা। আমরা যেহেতু সকালেই নির্বাচন বর্জন করেছি এবং লিখিতভাবে আমাদের অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি, আমরা কেনো এমন কাজ করব। আমরা গনতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী,গনতান্ত্রিক আন্দোলনেই আমাদের আস্থা আছে। 

অন্যদিকে ইউপিডিএফ (প্রসিত)’র মুখপাত্র মাইকেল চাকমা জানিয়েছেন, ‘এই ঘটনার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। এই নির্বাচনে আমাদের এইখানে কোন প্রার্থীও ছিলোনা। আমরা কেনো এই কাজ করতে যাবো ?’

প্রসঙ্গত, এই উপজেলায় পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় কোন রাজনৈতিক দল প্রার্থী দেয়নি। শুধুমাত্র সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা)র শীর্ষ নেতা সুদর্শন চাকমা। নির্বাচনের প্রচারণার সময়কালেও এই উপজেলায় গত ৩ মার্চ জনসংহতি সমিতির নেতা উদয় জয় চাকমা উরফে চিক্কোধনকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার ভোটের দিন নির্বাচন শুরুর এক ঘন্টার মধ্যে অনিয়ম, ভোট ডাকাতি ও কেন্দ্র দখল অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন জনসংহতি সমিতির প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা।

-সিভয়েস/এস

সাইফুল উদ্দীন, রাঙ্গামাটি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়