Cvoice24.com


সাতকানিয়ায় ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে টানাপোড়েন

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ১৫ মার্চ ২০১৯
সাতকানিয়ায় ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে টানাপোড়েন

সাতকানিয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটি নিয়ে দেখা দিয়েছে টানাপোড়েন। নবগঠিত এ কমিটি নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। অভিযোগ উঠেছে কেউ জামাত-শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট, কেউ নেতাদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, আবার কেউ কেউ নিজ অবস্থান ধরে রাখার পায়তারা চালাচ্ছে।

গত বছরের ২০ জুন আবদুল মন্নান কে সভাপতি ও তোফাজ্জল হোসাইন চৌধুরী তুহিন কে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস.এম বোরহান এবং সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের। তার একদিন পরে শফিউল আলম সোহেলকে সভাপতি এবং ইয়ামিনুর রহমান ইমনকে সাধারণ সম্পাদক পদ দিয়ে আরও একটি পাল্টা কমিটির ঘোষণা দেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান, তৌহিদুল ইসলাম জেকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন এবং মো. বদরুদ্দোজা। তারা কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতা ডা. আ.ম.ম. মিনহাজুর রহমানের অনুসারী বলে দাবি করে।

পাল্টা কমিটি হয়ে গেলেও সে কমিটির কোন সদস্য ছাত্রলীগের কোন কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না। এমনকি তাদের কোথাও কোন প্রোগ্রাম করতেও দেখা যায়নি। এমনকি শফিউল আলম সোহেলকে ৭শ' পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমানে সে এখন কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে।

আরও পড়ুন- সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আনন্দ র‌্যালি

কিন্তু বোরহান-তাহেরের দেয়া কমিটির সমর্থকরা কমিটি বাস্তবায়িত হলে আনন্দ-মিছিল করেন ২০১৮ সালের ২১ জুন। তার পরবর্তী একই বছরের ৬ জুলাই  গাড়িবহরের মাধ্যমে সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শোডাউন করতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন- সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিল

সেই সদ্য কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় চলতি বছরের মার্চ মাসের ২ তারিখ। ১৩৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান করে দেয়ার অভিযোগে নবগঠিত কমিটিরই ১২ সদস্য পদত্যাগ করেন। তবে তুমুল বিতর্কের কারণে পদ পাওয়া চারজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, কমিটি ঘোষণার একদিন পর ১১ জন সদস্য পদত্যাগ করেন। তারা হলেন, সহ-সম্পাদক মির্জা সোহেল, প্রমিস চৌধুরী, সনজিত কর, মো. ফারুখ, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মাঈন উদ্দিন হাসান, উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মিরাজ ইসলাম, উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক একেএম মুনতাসির, আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক সাব্বির হোসেন আলমগীর, উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শান্ত ও হোসেন মো. এহসান। 

ঘোষিত কমিটি নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হওয়ায় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত চারজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কমিটি ঘোষণার দু’দিন পর ৫ মার্চ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম বোরহান উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। তারা হলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রিদুয়ানুল ইসলাম, সহ-সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন, শহীদুল ইসলাম শহীদ এবং ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক মো. আজাদ উদ্দিন।

 

সদ্য কমিটিতে সহ সভাপতি পদ পাওয়া আতাউল্লাহ মো. রাকিবকে জাতীয় নির্বাচনে কাজ না করার অপরাধে জামায়াত শিবির বানিয়ে দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। পরে বিষয়টি নজরে নেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস.এম বোরহান। তিনি বলেন, সাতকানিয়া ছাত্রলীগের কমিটিতে রাকিবকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আদর্শিত মনে করে আমরা তাকে সহ সভাপতির পদ দিই। নির্বাচনের আগে জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সে বিভিন্ন মিছিল মিটিং করেছে, আওয়ামী লীগের জনসভায় বক্তব্য দিয়েছে। যদি সে জামাত শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত হতো তাহলে সে জনসভায় কেমনে বক্তব্য দিতে পারে ? সুতরাং কিছু মহল তার নামে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।

 

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইমরান হাসান জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগে আন্ত:কোন্দলের কারণে ছাত্রলীগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। কোমলমতি ছাত্রদেরকে দিয়ে আওয়ামী নেতারা বিভিন্ন কাজ করাচ্ছে যেটি মোটেও উচিত নয়। এখানে আওয়ামী লীগ নেতারা যতটা গ্রুপ করেছে ছাত্রলীগ নেতাদেরও ততটা গ্রুপ রয়েছে। ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের স্বার্থে নিজেদের গ্রুপিং টিকিয়ে রাখতে নানান কাজে ব্যবহার করছে যেটা নিয়ে মহামারি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসাইন চৌধুরী তুহিন বলেন, দীর্ঘদিন পর কমিটি হওয়াতে সবাই একটু হতাশ। কারণ অনেকের প্রত্যাশা ছিলো কমিটিতে আসবে। কিন্তু তারা আসতে পারেনি। ইতোমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নেতিবাচক কথাবার্তা শুনেছি, তাই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যদি সামনেও এমন কোন খবর পাই তাহলে তদন্ত করে তাদের বিষয়েও জেলা কমিটিকে জানানো হবে। উনারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের সিভয়েসকে বলেন,   সাতকানিয়ায় আমাদের অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের গ্রুপিংটা একটু বেশি।  বিভিন্ন ব্লকে বিভক্ত। আমরা সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি দিয়েছি। তারপরও সবাই সন্তুষ্ট নন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আমাদের কাছে নাম পাঠিয়েছেন। তাদেরকে কমিটিতে দিয়েছি। শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি তাদের আমরা ইতিমধ্যে বাদ দিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে যে কমিটি রয়েছে সেটি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্যরা সন্তুষ্ট। এমনকি স্থানীয় সাংসদরাও এ কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

কথা হয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস.এম বোরহান উদ্দিনের সাথে। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ১৮ বছর ধরে কোন কমিটি ছিলো না, যার কারণে সবার অনুরোধ রাখাও সম্ভব হয়নি। আমরা যারা ত্যাগী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আদর্শিত এবং মাঠে ময়দানে কাজ করছে সেটি দেখে সিনিয়রদের পরামর্শ নিয়ে কমিটি দিয়েছি। এতে কোন ভুল ছিলো না। 

তিনি আরও বলেন, যারা বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছে তাদের ব্যাপারে আমরা নজরদারি রাখছি। বিশেষ প্রয়োজনে তাদেরকেও আমরা কমিটিতে সংযুক্ত করবো।

-সিভেয়েস/এএস

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়