Cvoice24.com


ক্রীড়াঙ্গনে পিছিয়ে চট্টগ্রামের নারীরা, নেই মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সও

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৮ মার্চ ২০১৯
ক্রীড়াঙ্গনে পিছিয়ে চট্টগ্রামের নারীরা, নেই মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সও

ছবি : সিভয়েস

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। কবি নজরুলের কবিতা চরণ দুটিতে নরনারীর সাম্যের কথা বলা হলেও ঠিক যেন তার উল্টোপিঠ আমাদের সমাজ কাঠামো। যে কাঠামো ব্যবস্থায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েরা এখনও পশ্চাৎপদ। তবে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে নারী জাগরণ ও উত্তরণ। নারীদের খেলাধূলায়  অংশগ্রহণ ও পোশাক পরাটাই একসময় ছিল কল্পনাতীত। এখন পুরুষের মন ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তনও লক্ষ্যণীয়। ক্রীড়াঙ্গনে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাও মাঠ কাপাচ্ছে। একের পর এক প্রমীলা ক্রিকেটারদের জয়ে তারা উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। উনিশ শতকে বাঙালি সমাজে যে নারী জাগরণের সূত্রপাত হয়, এখন তা ফুলে-ফলে অনেকখানি প্রষ্ফুটিত। নারী ক্রিকেটারদের এশিয়া চ্যাম্পিয়ান হওয়ার মধ্য দিয়ে সেটি যেন আরও প্রমাণিত হল। 

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের জন্য বিশাল বড় মাইলফলক। টানা ৬ আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিঃসন্দেহে নব দিগন্তে সূচনা। 

ফুটবলের সাফল্যও চোখে পড়ার মত। গত বছর সাফ অনূর্ধ্ব ১৫, ১৬, ১৮ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নারী ফুটবল দল। সম্প্রতি  দক্ষিণ এশিয়া অনূর্ধ্ব ১৫ টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে গুণে গুণে ১৪ গোল দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। 

ফুটবল ক্রিকেটে মেয়েরা আশার বানী শুনালেও  চট্টগ্রামের অবস্থা খুবই নাজুক। ক্রিকেটে ১৫ থেকে ২০ জন মেয়ে বিভিন্ন একাডেমীতে অনুশীলন করছে। কিন্তু ফুটবল খেলছে এমন মেয়ে চোখে পড়েনি। 

জানা গেছে, আশি কিংবা নব্বইয়ের দশককে ক্রীড়াঙ্গনে চট্টগ্রামে মেয়েদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আশি ও নব্বই দশকের তুলনায় বর্তমানে ক্রীড়াঙ্গনে নারী খেলোয়াড়দের পদচারণা যথেষ্ট কমে গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৭ মার্চ  এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে মুন্নি আকতার (১৪) ও বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে আনিকা আকতার (১০) অনুশীলন করছে। এছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমী ঘুুরে আর কোন মেয়েকে দেখা যায়নি।

জুনিয়র ক্রিকেট একাডেমীর কোচ তপন দত্ত সিভয়েসকে বলেন, আমার একাডেমী থেকে ৫ জন ঢাকায় খেলছে । বর্তমানে ৫/৬ জন প্যাকটিস করলেও সবাই নিয়মিত আসে না। প্র্যাকটিসের যথাযথ স্থান নেই। মেয়েদের ম্যাচ খেলানো যায় না। মেয়েদের কোন টুর্নামেন্টও হয় না। তাই মেয়েরা ক্রিকেটের প্রতি অনিহা। 

একবুক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেদের মাঝে প্রতিদিন প্যাকটিস করে মুন্নি আকতার। জানতে চাইলে মুন্নি সিভয়েসকে বলেন, ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখি তাই ছেলেদের সাথে প্যাকটিস করি। আমার সাথে আরও ৫ জন মেয়ে আছে। তারা নিয়মিত আসে না। মেয়েদের জন্য আলাদা পরিবেশ হলে অনেক ভালো হতো। 

জানতে চাইলে জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রেজিয়া বেগম ছবি সিভয়েসকে বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে চট্টগ্রামে মেয়েরা অনেক পিছিয়ে। আমরা সাধারণ স্কুলগুলো নিয়ে কাজ করছি। ভলিবল, দাবা, হ্যান্ডবল এগুলোর বিভিন্নসামগ্রী স্কুলে দেয়া হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামে মেয়েদের খেলার জন্য ভালো জায়গা নেই। বিভাগীয় ক্রীড়া কমপ্লেক্স শহর থেকে দূরে। তাই মেয়েরা যেতে অনিহা প্রকাশ করে।  এম এ আজিজ স্টেডিয়াম  থেকে সাগরিকা পর্যন্ত একটি বাস ব্যবস্থা করা জন্য আমি আবেদন করে আসছি। চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্রীড়া কমপ্লেক্স এর অভাব। ঢাকায় নির্মিত ‘সুলতানা কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্স’র মতো এখানেও মেয়েদের জন্য একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স এর খুবই প্রয়োজন। এটি হলে তা ক্রীড়াক্ষেত্রের মেয়েদের বিভিন্ন প্রয়োজন মিটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাছাড়া আমাদের ক্রীড়া সংস্থার সুযোগ-সুবিধা খুবই অপ্রতুল। 

নারীরা এখনও বৈষম্যের শিকার। চট্টগ্রামে নারীদের ক্রীড়াঙ্গনের অনাগ্রহ আর বিমুখতা কোনো স্বস্তির বিষয় হতে পারে না। তাই এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সকলের। 

-সিভয়েস/ওআই/এএইচ/এমএম

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়