Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


উদালিয়া চা বাগান : উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানোর আশা

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ৬ মার্চ ২০১৯
উদালিয়া চা বাগান : উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানোর আশা

চট্টগ্রামের যে কয়টি বড় ও উন্নয়নশীল চা বাগান রয়েছে তার মধ্যে ফটিকছড়ির উদালিয়া চা বাগান একটি। এক সময়ের আবহেলিত চা বাগানটি ২০০৩ সালে দেশের নামকরা শিল্প প্রতিষ্ঠান মোস্তাফা গ্রুপ কিনে নেওয়ার পর বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে বাগানটি সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে।
২৯৯৫ একর পাহাড়ি টিলা ও সমতল ভূমিতে গড়ে উঠা বাগানটিতে চা'র পাশাপাশি রাবার, ফলজ ও ওষুধি গাছের বাগান এবং মাছ চাষ করছে কর্তৃপক্ষ।
 
ফলজ বৃক্ষের মধ্যে ড্রাগন, আম, লিচু, সফেদা, কমলা, বড়ই, কলা, পেঁপে, কাঁঠাল, লিচু, লেবুসহ দেশি-বিদেশি আরো বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষ লাগানো হয়েছে। 
ওষুধি বৃক্ষের মধ্যে অর্জুন, নিম, বহেরা, নিশিন্দা, কারেঞ্জা, জাফরান, আশোক, হরতকী, আমলকী, আগর, চন্দনসহ নানা প্রজাতির গাছে গড়ে তোলা হয়েছে ওষুধি বাগান। আগামী কয়েক বছরে ওষধি বৃক্ষের এ বাগান দেশের হারবাল চিকিৎসায় অবদান রাখবে বলে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী।

বাগানের প্রাকৃতিক লেক এবং অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা সংস্কার করে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
এককথায় চা বাবাগানের পাশাপাশী বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাগানটি বর্তমান মালিকের অধিনে অল্প সময়ে সাফল্যের মুখ দেখছে।

বাগানের শ্রমিক সংখ্যা প্রায় দু'হাজার। তার মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক সংখ্যা ৯৭৬ জন। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ চা-সংসদ কর্তৃক চুক্তি মোতাবেক শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

বাগানটির চা-উৎপাদনও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮ সালে ৮ লক্ষ ৭২ হাজার কেজি চা উৎপাদন হলেও ২০১৯ সালের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার কেজি। কর্তৃপক্ষ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চা-পাতা তোলা শুরু করার আগের দিন বাগানের ভেতর ফকির টিলায় ফকির বাবার আস্তানা শরীফে শ্রমিকরা পূজা দিচ্ছেন। জানতে চাইলে তারা জানান আমাদর বিশ্বাস চা-পাতা তোলার আগে এ পূজা দিলে ভালো চা-পাতা পাওয়া যায় এবং সকলের মঙ্গল হয়। পরদিন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চা-পাতা উত্তোলন শুরু করেন শ্রমিকরা।

এদিকে বাগানে প্রতিদিনই বাড়ছে পর্যটক। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে পর্যটকরা চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। সরকারি বা বেসরকারিভাবে বাগানটি কেন্দ্র করে পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হলে বাগানটির আরো উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

বাগানটি আগে অরক্ষিত থাকলেও এখন রয়েছে কঠোর নিরাপত্তায়। আগে তেমন নিরাপত্তা বেষ্টনি ছিল না বিধায় বিভিন্নস্থান থেকে এসে অপরাধীরা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘঠিত করতো। এখন বাগানে ঢুকতে হলে জবাবদিহি করতে হয় এবং কর্তৃপক্ষের অনুমিতর প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়া ভুজপুর থানার অধীনে বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগীতায় বাগানের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। ফলে বাগান তথা এ অঞ্চলের আইনশৃংঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ফাঁড়িটি ভূমিকা রাখছে। 

তবুও নিরাপত্তা আরো জোরদার করা প্রয়োজন মনে করছেন এলাকাবাসী। তারা অভিযোগ করে বলেন, দুষ্কৃতিকারী সিন্ডিকেট দলের সহযোগীতায় বাগানের কতিপয় শ্রমিক চোলাই মদ স্থানীয় ভাষায় বাংলামদ উৎপাদন করছেন এবং বাগান এলাকা ও হাজিরখিল বন এলাকা থেকে অবাধে কাঠ পাচার করছেন। উক্ত সিন্ডিকেট বিভিন্ন সময় বাগানের মালিক শ্রমিকদের মাঝেও নিজেদের স্বার্থ হাসিলে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। মালিক-শ্রমিকদের দূরত্ব সৃষ্টি করে। সম্প্রতি সামন্য বিষয়ের জের ধরে মালিক শ্রমিকদের মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। যার ফলে বাগান কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বেশ কয়েক দিন বাগানেরর কার্যক্রম বন্ধ করে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন এসব ঘটনার ইন্ধনদাতারাই হচ্ছেন উক্ত দুষ্কৃতকারী সিন্ডিকেট। তাই এ ব্যাপারে বাগান কর্তৃপক্ষ ও স্থানীর প্রশাসনের আরো অধিক নজরদারি কামনা করেন তারা।

বাংলাদেশ চা-গভেষণা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের কেন্দ্রটিও এ বাগানে অবস্থিত। দৃষ্টনন্দন ভবনে চলছে চা গভেষণা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম।

বাগানটির আরো যথাযথ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বাগানে রূপান্তর করা এবং পর্যটন স্পট গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে বলেও কর্তৃপক্ষ জানান। 

চা বাগানের উপ-ব্যবস্থাপক সমীরণ মৃধা বলেন, এই বছর আগান বৃষ্টির কারণে নতুনপাতা ও চায়ের গুণগতমান বেশ ভালো হচ্ছে, আগাম উৎপাদন এবং বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিকতা থাকলে চলতি বছর আমাদের চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

উদালিয়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, চা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী অন্যতম অর্থকরি ফসল, ফলে চা নিয়ে দিন দিন মানুষের আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে। আমাদের গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যারের দিক নির্দেশনায় বাগানে উৎপাদন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে নতুন চা আমরা নিলামে তুলছি। আশাকরি ভালো দামেই বিক্রি হবে এবং এই বছর আমাদের উৎপাদনে লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

সিভয়েস/এএইচ

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ফটিকছড়ি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়