Cvoice24.com


রাতদিন পরিশ্রমেও সুখ জুটছে না আমেনার

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ৫ মার্চ ২০১৯
রাতদিন পরিশ্রমেও সুখ জুটছে না আমেনার

দুই সন্তানের জননী আমেনা বেগম (৩৭)। একযুগেরও বেশি সময় ধরে স্বামী সাইফুল ইসলামকে নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। স্বামী নতুন বিয়ে করায় বাধে বিপত্তি। বাসায় বাসায় কাজ করে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করা সম্ভব হয়ে ওঠছিল না। তাই বাধ্য হয়ে বেছে নেন ভ্যানে করে সবজি ব্যবসা। 

ভ্যানে করে আলু, পেঁয়াজ, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, শসাসহ নানা রকম সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন মিয়ার বাপের মসজিদ এলাকায়। সকালে রেয়াজুদ্দিন বাজার থেকে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন এসব। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে আমেনা বেগমের বেচাকেনা। ছোট ছেলেকে সাথে নিয়ে চলে তার এ ব্যবসা। দিনরাত ব্যবসার পর রাতে বাসায় ফিরে শুরু হয় সাংসারিক কাজ।

আমেনা বেগমের বাড়ি কুমিল্লা জেলার ইকবাল নগর থানার সাতাশ শহর গ্রামে। স্বামী সাইফুল ইসলাম চলে যাওয়ার পর দু’সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন চকবাজার মিজান কলোনির শাপলা বিল্ডিংয়ে। পড়ালেখার খরচ যোগাতে না পেরে বন্ধ করে দেন দু’ছেলের পড়ালেখা। বড় ছেলে সাব্বির ৬ষ্ঠ শ্রেণি এবং ছোট ছেলে সাজ্জাদ ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। 

আজ মঙ্গলবার (৫ মার্চ ) চকবাজার চন্দনপুরা মিয়া বাপের মসজিদ রোডে ছোট ছেলেকে নিয়ে সবজি বিক্রি করছেন আমেনা বেগম। মা-ছেলে ভ্যানে করে সবজি নিয়ে ঘুরে মিয়ার বাপের মসজিদ সংলগ্ন রোডের অলিতে-গলিতে। কথা হয় আমেনা বেগমের সাথে। তিনি জানান, স্বামী নতুন বিয়ে করায় খোঁজখবর রাখেন না। সংসারের খরচ যোগাতে এ ব্যবসায় এসেছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মা-ছেলে মিলে সবজি বিক্রি করেন। সারাদিনে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হয়। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে চলে যান রিয়াজুদ্দিন বাজার। ওইখান থেকে সবজি কিনে এনেই সবজি বিক্রি শুরু করেন। এ নারীকে একজন আদর্শ নারী এবং কর্মঠ নারী না বললেই নয়। তিনি সারাদিন সবজি বিক্রি করেন এবং সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সংসারের কাজগুলো সামলান। আজকালকার এই আধুনিক পৃথিবীতে আদর্শ নারী এবং কর্মঠ নারী তিনিই, যিনি নিজের পরিবার, কাজ ও স্বপ্নের মাঝে চমৎকার সমন্বয় সাধন করে সংসারকে আগলে রেখতে পারছেন। 

আমেনা বেগম বলেন, ছোট ছেলের যখন ৫ বছর তখন আমার স্বামী আরেকটি বিয়ে করেন। গত দু’বছর আগে আবার তৃতীয় বিয়ে করে। শেষ বিয়ের পর, অর্থাৎ দু’বছর ধরে এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি চলে যাওয়ার পর এ দু’সন্তানেকে নিয়ে কোনো রকমে থাকতাম। মানুষের বাসায় কাজ করতাম। ‍বাসায় কাজ করে সংসারের অন্য খরচ, বাসা ভাড়া এসব দিতে হিমশিম খেতে হতো। 

তিনি বলেন, দু’সন্তানকে কষ্ট করে পড়াতে চেয়েছিলাম। তাও পারলাম না। মনে করেছিলাম বাসায় কাজ না করে যদি সবজিবিক্রি করি হয়তো বাকি সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবো। কিন্তু তার উল্টো হলো। বড় ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণি এবং ছোট ছেলে ৫ম শ্রেণির পর তাদেরকে পড়ানো সম্ভব হয়নি। সবজি বিক্রি করে বাসাভাড়া, খাওয়ার খরচ, ছেলেদের পড়ালেখা একসাথে চালানো অনেক কষ্টসাধ্য। তাই তাদের পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। 

রাস্তায় ব্যবসা করতে কাউকে চাঁদা দিতে হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন অলিগলিতে ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। চন্দনপুরা রোড পেরিয়ে মেইন রোডে গেলে চাঁদার পরিমাণ বেড়ে হয় ১০০ টাকা। চকবাজার থানার ওসিকে অভিযোগ দেয়ায় অনেকদিন বন্ধ ছিল দালালের উৎপাত। প্রতিদিন বিভিন্ন সময় ৪ থেকে ৫ জন দালাল আসে চাঁদার জন্য। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে চাঁদাবাজরা সবজির ভ্যানগাড়ি উল্টে দেয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। 

-সিভয়েস/এএস/এসএ


 

মিনহাজ মুহি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়