ওয়াসার ৪১ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে  চসিকের সমন্বয় কমিটি

নগরীতে চট্টগ্রাম ওয়াসার চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাস্তা কাটাকাটি করতে হচ্ছে। এতে করে রাস্তা কাটা বাবদ ওয়াসার কাছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ৪১ কোটি ৪ লাখ ৪ হাজার ৭৪০ টাকা পাওনা রয়েছে।  বিগত সময়ে রাস্তা কাটার বিপরীতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে পাওনা পরিশোধ করলেও এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বকেয়া পাওনা রয়ে গেছে।  এই পাওনা আদায়ের করণীয় নির্ধারণে চট্টগ্রাম  সিটি কর্পোরেশন ওয়াসাকে সমন্বিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি রাস্তা কর্তন সংশ্লিষ্ট কোন প্রকল্প থাকলে তাও সমন্বয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম ওয়াসা চার সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে।  কমিটিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবু সালেহ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশলী মো. মাকসুদ ও আরিফুর রহমানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গঠিত এই কমিটি পাওনা পরিশোধের উদ্যোগের পাশাপাশি কোন কোন রাস্তায় আগামীতে ওয়াসা উন্নয়ন প্রকল্প  বাস্তবায়ন করবে তার তালিকা প্রেরণ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক চলমান সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে ওয়াসার প্রকল্পের সমন্বিতকরণসহ প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন  করবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে কমিটি কার্যক্রম চূড়ান্ত করে মেয়রের কাছে জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আজ রোববার (৩ মার্চ) চসিক সম্মেলন কক্ষে রাস্তা কাটা বাবদ পাওনা আদায়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম  ওয়াসার মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।  আগামী সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে চসিক ও ওয়াসা সমন্বিত বৈঠকে বসার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আমরা এয়ারপোর্ট রোড, বায়েজিদ বোস্তামি রোড, হাটহাজারী রোডের মত প্রধান সড়কসহ কয়েকটি রোডে উন্নয়ন কাজ শুরু করবো। এসব সড়কে ওয়াসার কোন প্রকল্প আছে কিনা সে বিষয়ে কর্পোরেশনকে অবহিত করা, যেসব সড়কে আমরা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করবো সেখানে ওয়াসার কোন প্রকল্প আছে কিনা, থাকলে কোন সময়ে তা শুরু হবে বা শেষ হতে পারে সম্যক বিষয়ে একটি স্পষ্ট তথ্য পরিসংখ্যান তৈরি করবে কমিটি। কারণ রাস্তা কাটার কাজ থাকলে ওয়াসাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে। আগামী বছর আর রাস্তা কাটা যাবে না।

এ ব্যাপারে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো সামসুদ্দোহা বলেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন কোন রাস্তায় ওয়াসা উন্নয়ন পরিচালনা করবে, তার তথ্য সংগ্রহ এবং যেখানে আমরা কাজ করবো সেখানে ওয়াসা রাস্তা কাটবে কিনা এ সমস্ত পরিকল্পনা এখন করে ফেলতে হবে। আগামী  মে পর্যন্ত রাস্তা কাটাকাটি করা যাবে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, অপরাপর সেবা সংস্থা  কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, টিএন্ডটি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় ওয়াসার পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদেরকে তখন জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইনে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রায় সময় রাস্তা কাটতে হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যও রাস্তা কর্তন করতে হয়।

চসিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার গৃহিত ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নগরে প্রায় ২৭ কি.মি রাস্তা কাটতে হয়েছে। এক্ষেত্রে রাস্তা কর্তন বাবদ ওয়াসার কাছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পাওনা  ছিল ৬০ কোটি ৮২ লাখ ৬১ হাজার ২১৩ টাকা। গত বছর ২০১৮ সালের ২৭ জুন ওয়াসা সিটি কর্পোরেশনকে ৫ কোটি ৩১ লাখ ১২ হাজার ৮৭৫ টাকা, একই বছর ৪ অক্টোবর পরিশোধ করেছে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৪৩ হাজার ৫৯৮ টাকা, ওই অক্টোবরের  ২২ তারিখও সিটি কর্পোরেশনকে ৫ কোটি  টাকা পরিশোধ করে ওয়াসা। চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি রাস্তা কাটা বাবদ কর্পোরেশনকে ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করে। ২০১৮ থেকে এই পর্যন্ত ওয়াসা রাস্তা কাটা বাবদ সিটি কর্পোরেশনকে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭৩ টাকা পরিশোধ করেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন রাস্তা কর্তন বাবদ ওয়াসার কাছে  আরো ৪১ কোটি ৪ লাখ ৪ হাজার ৭৪০ টাকা পাওনা রয়েছে।

চসিক প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করব। কয়েকদিনের মধ্যে টেন্ডার আহবান হবে। ওই সড়কগুলোতে ওয়াসার প্রকল্প থাকলে তা মে মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা কাজ করার পর আর রাস্তা কাটা যাবে না। এসব নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ওয়াসার সাথে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কমিটিও করা হয়েছে। কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন চুড়ান্ত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

-সিভয়েস/এসএ