Cvoice24.com

শনিবার সিন্ডিকেট সভা
চবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ

প্রকাশিত: ১৭:০৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
চবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অধ্যাপক সুপ্তিকণা মজুমদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন আরেক সহকারি অধ্যাপক লিটন মিত্র। অভিযোগে ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের শিরোনাম পরিবর্তন, পরীক্ষায় অতিরিক্ত উত্তরপত্র যোগ করা ও পরীক্ষার পরিদর্শক হিসেবে কোন লিখিত ছাড়া অন্যজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। 

শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সভায় রায় ঘোষণা করবেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অধ্যাপক ড. সুপ্তিকণা মজুমদার দায়িত্বে অবহেলা এবং দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে দশটায় পরীক্ষা কমিটির সভাপতির লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী তার উপস্থিতিতে সংস্কৃতি বিভাগের ৩য় বর্ষের সম্মান পরীক্ষা শুরু হয়। যদিও পরীক্ষার রুটিনে সকাল ১১টায় পরীক্ষা নেয়ার কথা উল্লেখ ছিল। এমনকি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. সুপ্তিকণা মজুমদারের স্বাক্ষরিত ২জন পরিদর্শক প্রফেসর ড. শান্তি রাণী হালদার ও সহকারি প্রফেসর লিটন মিত্রের নাম থাকলেও পরীক্ষা কেন্দ্রে পরিদর্শক ছিলেন শুধুমাত্র লিটন মিত্র। তিনি একাই ৪ ঘণ্টা পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। লিটন মিত্র পরিদর্শকের দায়িত্ব পালনকালে পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে পরিদর্শকের স্বাক্ষর করেন। পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র সভাপতির হাতে বুঝিয়ে দেন।

এদিকে ড. সুপ্তিকণার লিখিত বক্তব্যে দেখা যায়, একই কক্ষে (১৪২ নং কক্ষ) প্রফেসর শিপক দেবনাথও দায়িত্ব পালন করেছেন। পরীক্ষা শেষে তিনি ওই কক্ষের উত্তরপত্রগুলো (অতিরিক্ত উত্তরপত্রসহ) বুঝিয়ে দেন।

এখানে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট থাকে যে, সহকারি প্রফেসর লিটন মিত্র যখন সকল উত্তরপত্র জমা দেন সেখানে কোন অতিরিক্ত উত্তরপত্র ছিল না। কিন্তু পরীক্ষা কমিটির স্বাক্ষরিত পরীক্ষার সময়সূচি ও পরিদর্শকের তালিকায় সহকারি প্রফেসর শিপক দেবনাথের নামও ছিল না। এখানে প্রফেসর শান্তি রাণী হালদার যে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেননি সেটাও সভাপতি সুপ্তিকণা মজুমদার জানতেন। তারপরও অন্যকোন শিক্ষককে পরিদর্শক হিসেবে তিনি দেননি।

অভিযোগে লিটন মিত্র বলেন, গত ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল ৩০৮ নং কোর্সের অনুষ্ঠিত পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর প্রশ্নপত্রের মধ্যে শিরোনাম ভুলসহ প্রশ্নপত্রের সাথে সিলেবাসের সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. সুপ্তিকণাকে জানালে তিনি আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে জানালে তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। এর প্রেক্ষিতে পরদিন ৮ এপ্রিল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর অভিযোগ করি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রশ্নপত্র, সিলেবাস ও বাংলাদেশের প্রাচীন সমাজ নামক একটি বই মিলিয়ে দেখার পর আমার অভিযোগের সত্যতা পান।

তিনি আরও বলেন, ৮ এপ্রিল পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উত্তরপত্র মূল্যায়ণের জন্য আমার কাছে মুখ খোলা একটি প্যাকেট পাঠান। উত্তরপত্রগুলো গণনার সময় দেখতে পাই, আমার স্বাক্ষরিত উত্তরপত্রগুলোর সাথে কোন অতিরিক্ত উত্তরপত্র নেই। পরে আমি এ উত্তরপত্র মূল্যায়ণ করতে পারবো না বলে ২০ এপ্রিল লিখিতভাবে অপারগতা প্রকাশ করি। পরে পরীক্ষা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে বিভাগে অচলাবস্থা সৃষ্টির প্রায় এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর উপাচার্য, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বিভাগের সকল শিক্ষকের উপস্থিতিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উত্তরপত্রগুলো মূল্যায়ণের জন্য ২০১৫ সালের ২১ জুন আমাকে দেয়া হয়। সেখানে দেখা যায়, আমার স্বাক্ষরিত দশটি উত্তরপত্রের মধ্যে বেশিরভাগের সাথে এক বা একাধিক উত্তরপত্র রয়েছে। উক্ত কক্ষের (১৪২ নং) প্রায় সব অতিরিক্ত উত্তরপত্রগুলোতে চিফ সুপারভাইজার ড. সুপ্তিকণার লিখিত স্বাক্ষর আছে। কিন্তু তিনটি অতিরিক্ত উত্তরপত্রের মধ্যে দুইটিতে সহকারি প্রফেসর শিপক দেবনাথের স্বাক্ষর আছে। বাকি একটিতে কারও স্বাক্ষর নেই।

তিনি বলেন, মূল্যায়ণের পর সভাপতিকে উত্তরপত্রগুলো জমা দেওয়ার পর সহকারি প্রফেসর শিপক দেবনাথকে দিয়ে বাকি উত্তরপত্র স্বাক্ষর করানো হয়। কিন্তু একটি উত্তরপত্রে স্বাক্ষর করার পর আবার কেটে দেন। পরে সভাপতি মূল উত্তরপত্র থেকে অতিরিক্ত উত্তরপত্রটি ফেলে দেন। যা তিনি করতে পারেন না বলে তদন্ত কমিটি মনে করেছেন।

এখানে আরও উল্লেখ আছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি উত্তরপত্রে যে অতিরিক্ত উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীরা গ্রহণ করে তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে লিপিবদ্ধ করাতে হয়। এছাড়া পরীক্ষা কমিটির সভাপতি থেকে স্বাক্ষরিত উত্তরপত্রগুলোর সাথে যে টপশিট দেয়া ছিল সেখানেও কোন পরীক্ষার্থী অতিরিক্ত উত্তরপত্রের সংখ্যা উল্লেখ ছিল না। পরীক্ষা কমিটির সভাপতিও অতিরিক্ত উত্তরপত্র যে নিয়েছেন তা প্রমাণ করতে পারেননি। এতে স্পষ্ট বুঝা যায়, পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় কোন অতিরিক্ত উত্তরপত্র নেয়নি। সুতরাং লিটন মিত্রের অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি।

এদিকে তদন্ত কমিটি যখন সহকারি প্রফেসর শিপক দেবনাথকে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি প্রদান করেন তখন তিনি হাজির না হয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠাবেন বলে জানান। কিন্তু তাকে লিখিত ও মৌখিকভাবে বারবার বলার পরেও তিনি তদন্ত কমিটির সাথে সহযোগিতা করেননি। বরং তিনি তদন্ত কমিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গুরুতর অপরাধ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রফেসর ড. সুপ্তিকণা মজুমদার সিভয়েসকে জানান, এ অভিযোগ পুরোটা মিথ্যা, সাজানো এবং বানোয়াট। আপনারা এসে কাগজপত্র দেখে যান। এখানে যদি সবাই দোষী হয়ে থাকে তাহলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। তদন্ত কমিটি শুধু লিটন মিত্রের কথাটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন সেটা তো হয় না। চিফ সুপারভাইজার হিসেবে খাতা দেয়ার দরকার ছিল, আমি দিয়েছি। 

গত ক’দিন আগে একটি পরীক্ষা হলো সেখানে লিটন মিত্র এবং শিপক পরীক্ষার ডিউটিতে ছিল না বলে মেয়েটি খাতা নিয়ে বাসায় চলে গেছে। কিন্তু মেয়েটি স্বীকার করেছে টিচার থাকা অবস্থায় সে খাতা নিয়ে গেছে। কিন্তু এটা তখন কীভাবে সম্ভব হলো।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগের বিষয় নিয়ে আমি কমিটিকে লিখিত জানিয়েছি। কমিটি যখন আমাকে ডেকেছিলেন আমি তখন ছুটিতে ছিলাম। কারণ আমার হার্টের সমস্যা থাকায় প্রশাসন থেকে ছুটি নিয়ে চিকিৎসার কাজে ছিলাম। যার কাগজপত্র আমার কাছে আছে। চিকিৎসার ছুটিতে থাকা অবস্থায় তো আমাকে ডাকলে যেতে পারিনা। তবে শিপককে ডেকেছে কিনা আমি জানিনা।

সহকারি অধ্যাপক লিটন মিত্র সিভয়েসকে বলেন, আমি যেসব অভিযোগ দিয়েছি সব সত্য। এটা নিয়ে দুইবার তদন্ত কমিটি হয়েছিলো। ড. সুপ্তিকণা ম্যাডামের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির রিপোর্টও রেজিস্টারকে দেওয়া হয়েছে। যারা অপরাধের সাথে জড়িত, তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হোক আমি এটাই চাই।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. কে এম আব্দুল গফুর বলেন, আমি আমার তদন্ত রিপোর্ট সঠিকভাবে প্রেরণ করেছিলাম। তবে এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানিনা।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার কে এম নুর আহমদ সিভয়েসকে বলেন, প্রফেসর ড. সুপ্তিকণা মজুমদার লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আছে।

কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি প্রসেসিংয়ে আছে বলে সংযোগ কেটে দেন।

এ ব্যাপারে জানার জন্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি সাড়া দেননি।

-সিভয়েস/এসএ

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়