Cvoice24.com

ভাষা আল্লাহর দান

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
ভাষা আল্লাহর দান

সব ভাষাই আল্লাহর দান ও তাঁর কুদরতের নিদর্শন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ২২)। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা, ‘দয়াময় রহমান আল্লাহ! কোরআন পাঠ শেখালেন; মনুষ্য সৃজন করলেন; তাকে ভাষা বয়ান শিক্ষা দিলেন।’ (সুরা-৫৫ আর রহমান, আয়াত: ১-৪)।

আল্লাহ তাআলা কিতাব নাজিল করেছেন এবং নবী–রাসুলগণকে পাঠিয়েছেন তাঁদের স্বজাতির ভাষায়। কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।’ (সুরা-১৪ ইবরাহিম, আয়াত: ৪)।

মহাগ্রন্থ আল–কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার কারণ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং ব্যাখ্যা প্রদান করেন এভাবে, ‘আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায় কোরআন, যাতে তোমরা বুঝতে পরো।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২)। অর্থাৎ আরবদের কাছে আরবি নবী ও আরবি কিতাব আল–কোরআন নাজিল করা হয়েছে। কারণ, তাদের মাতৃভাষা আরবি; অনারবি ভাষায় নাজিল করলে তাদের বুঝতে এবং অনুসরণ করতে সহজ হবে না। দাওয়াতি কাজে শুদ্ধ ভাষা ও সুন্দর বর্ণনার প্রভাব অনস্বীকার্য। আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.) ছিলেন ‘আফছাহুল আরব’ তথা আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী। তাই বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলা নবীজি (সা.)–এর সুন্নত।

আল্লাহ তাআলা বনি ইসরায়েলের জন্য হজরত মুসা (আ.)–কে নবী ও রাসুল হিসেবে ঘোষণা করলেন; আর তখন তিনি তাঁর ভাই হজরত হারুন (আ.)–কে নবী ও রাসুল হিসেবে ঘোষণা করার জন্য আল্লাহর সমীপে আবেদন করে বললেন, ‘আমার ভাই হারুন সে আমা অপেক্ষা বাগ্মী, অতএব তাকে আমার সাহায্যকারী রূপে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সমর্থন করবে। আমি আশঙ্কা করি, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।’ আল্লাহ বললেন, ‘আমি তোমার ভ্রাতার দ্বারা তোমার বাহু শক্তিশালী করব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করব। তারা তোমাদের নিকট পৌঁছাতে পারবে না, তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শন বলে তাদের ওপর প্রবল হবে।’ (সুরা-২৮ কছাছ, আয়াত: ৩৪-৩৫)।

ভাষা ও সাহিত্যচর্চা সুন্নত ইবাদত: ভাব প্রকাশের মাধ্যম হলো ভাষা। ভাষার অলংকৃত রূপ হলো সাহিত্য। সাহিত্যের বিশেষায়িত পর্ব হলো কবিতা বা ‘শেয়ের’। যিনি কাব্য করেন, তিনি হলেন ‘শায়ের’। আরবি ভাষার ব্যাকরণ মুসলমানদের হাতেই রচিত হয়। অনারবরা কোরআন পড়তে সমস্যা হতো বিধায় হজরত আলী (রা.) তাঁর প্রিয় শিষ্য হজরত আবুল আসওয়াদ দুওয়াইলি (রহ.)–কে নির্দেশনা দিয়ে আরবি ভাষা শাস্ত্র প্রণয়ন করান; যা ইলমে নাহু ও ইলমে ছরফ নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে উচ্চতর ভাষাতত্ত্ব ইলমে বায়ান, ইলমে মাআনি ও ইলমে বাদীর উন্নয়ন ঘটে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে নবী! সা.) আমি আপনার প্রতি সর্বসুন্দর কাহিনি বর্ণনা করেছি।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২)। প্রিয় নবী (সা.) স্বয়ং কাব্য করতেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত হাসসান বিন সাবিত (রা.) কাব্য রচনা করতেন। হজরত আয়িশা (রা.) কাব্যচর্চা করতেন। এভাবে ইসলামের সব যুগেই বিভিন্ন ভাষায় সাহিত্যচর্চা চলে আসছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।

নবী করিম (সা.) স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছেন গাজওয়ায়ে আহজাব বা খন্দকের যুদ্ধে। আরেকজন সাধক কবি ইমাম শরফুদ্দীন মুহাম্মাদ বুসিরী (রহ.) (১২১৩-১২৯০) নবীজি (সা.) শানে নাত রচনা করে স্বপ্নযোগে লাভ করেছেন নবীজির বুরদা বা চাদর মুবারক। যে কারণে সে কাব্যের নাম হয়েছে ‘কাসিদা বুরদা’ বা উত্তরীয় কাব্য। যার পূর্ণ নাম হলো ‘আল কাওয়াকিবুদ দুররিয়্যাহ ফি মাদহি খায়রিল বারিয়্যাহ’।

মানবের ধর্মজীবনের সূচনা ও সমাপ্তিতে বই ও পড়া: মানুষের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তাআলা কিতাব বা গ্রন্থ পাঠালেন। কোরআন ইসলামের প্রধান গ্রন্থ। কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াতের শুরুতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইকরা’ মানে পড়ো। (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত:১)। রোজ কিয়ামতে হাশরের ময়দানে বিচারের দিনে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তুমি তোমার কিতাব (আমলনামা) পাঠ করো, আজ তোমার হিসাবের জন্য তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ১৪)। পরকালে মানুষের কর্মবিবরণী বা আমলনামাও বই। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বইয়ের সংশ্লিষ্টতা বিদ্যমান। সুতরাং অধ্যয়ন ও পঠনপাঠন জীবন গড়ার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক ও উদ্দীপক হিসেবে অদ্বিতীয় ও অনন্য। উত্তম বই জীবনের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail,com

-সিভয়েস/এনএইচ/এমএম

ধর্ম ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়