Cvoice24.com


কলকাতার সিনেমা ‘ভবিষ্যতের ভূত’ প্রদর্শন বন্ধ!

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
কলকাতার সিনেমা ‘ভবিষ্যতের ভূত’ প্রদর্শন বন্ধ!

পরিচালক অনীক দত্তের পরিচালিত নতুন ছবি ‘ভবিষ্যতের ভূত’ প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একসঙ্গে সবকটি হল থেকেই 'টেকনিক্যাল কারণে' কেন সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়া সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যাবে, তা নিয়ে সেদিন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল।

ভারতে নতুন সিনেমা মুক্তি পায় শুক্রবারে।  সে রকমই গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের অনেকগুলি হল আর মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছিল 'ভবিষ্যতের ভূত' ছায়াছবিটি। কিন্তু পরের দিন অনেক দর্শকই হলে গিয়ে জানতে পারেন ‘ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ রাখা হয়েছে টেকনিক্যাল কারণে’।

ছবিটির পরিচালক অনীক দত্ত সাংবাদিকদের বলছিলেন, আমি কলকাতার একটা মাল্টিপ্লেক্সে গিয়েছিলাম, কেন ছবিটা দেখানো হচ্ছে না, সেটা জানতে। আমাকে বলা হয় যে ''উপরতলার নির্দেশে'' ছবিটা দেখানো বন্ধ করা হয়েছে। কে সেই উপরতলার ব্যক্তি, তার কোনও ফোন নম্বর বা ইমেল আইডি ওই মাল্টিপ্লেক্সের ম্যানেজার আমাকে দিতে পারেন নি, সেই উপরতলার ব্যক্তির মৌখিক নির্দেশেই নাকি তারা ছবিটি দেখানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দর্শকদের টিকিটের টাকা ফেরত দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

‘ভবিষ্যতের ভূত’ সিনেমাটি যারা দেখেছেন তারা বলছেন যে এটিতে এমন বেশ কিছু বিষয় রয়েছে, যেখানে নাম না করে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করা হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেস বা মুখ্যমন্ত্রী নিজে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্যই করতে রাজি না হলেও এক সংবাদ সম্মেলনে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছিলেন, এ নিয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না। ওটা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।

পরিচালকও বলছেন যে তিনি 'পলিটিক্যাল স্যাটায়ার'ই বানিয়েছেন, এবং এও দাবি করছেন হাতে গোনা যে কয়েকটি মফস্বলের হলে ছবিটা চলছে বা যে একদিন কলকাতার হলগুলোতে সিনেমাটি দেখানো হয়েছে, কোথাও কোনও গন্ডগোল বা অশান্তি হয়নি। 

আরেকজন পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, আমি ছবিটা দেখিনি, কিন্তু যতটুকু শুনেছি, তাতে রাজ্য সরকার আর সরকারি দলের ব্যাপক সমালোচনা করা হয়েছে বলে জেনেছি।

সেটা এই সময়ে দাঁড়িয়ে কতটা করা উচিত কি অনুচিত তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু একটা ছবির প্রদর্শন কেন বন্ধ করে দেওয়া হবে? এটা তো চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক ঘটনা! 
পশ্চিমবঙ্গ এবং মিজ. ব্যানার্জীর সম্পর্কে একটা খুব ভুল বার্তা যাচ্ছে দেশের মানুষের কাছে।
মি. চট্টোপাধ্যায় আরও বলছিলেন, কিছুদিন আগে পদ্মাবত নিয়ে যখন বিতর্ক চলছিল, তখন তো মুখ্যমন্ত্রীই উদ্যোগ নিয়ে ছবির প্রদর্শন যাতে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে হতে পারে, তার জন্য ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু সেই রাজ্যেই এরকম উলটোপুরাণ হবে, সেন্সরের ছাড়পত্র পাওয়া একটা ছবি একদিন পরে তুলে নেওয়া হবে, এটা একটা অদ্ভূত ব্যাপার।

ছবির কপিরাইট Getty Images Image caption গত বছর বিতর্কিত ছবি পদ্মাবতের প্রদর্শন যাতে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে হতে পারে তার ব্যবস্থা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই, বলছেন সিনেমা পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। 

ছবিটর প্রদর্শন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন কলকাতার শিল্পী-কলাকুশলীরা।

অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে এরকমই এক প্রতিবাদ সভায় হাজির হয়েছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সহ অনেকে শিল্পী। প্রতিবাদ জানিয়েছেন কবি শঙ্খ ঘোষও।

পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক দল বা সরকারের প্রতি কটাক্ষ করা নাটক সিনেমার প্রদর্শন আগেও বন্ধ হয়েছে। তখন সেটা ছিল বামফ্রন্টের শাসনকাল। সেই সব নাটক বা সিনেমার পরিচালকরা তখনও বামফ্রন্ট সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন। 

এখন তাদের অনেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা বা মন্ত্রী। কিন্তু তারা ‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ করা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।

তবে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন সংস্কৃতি কর্মী স্বীকার করছেন যে সিনেমাটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত হয়নি। একটা সিনেমা বন্ধ করে দিয়ে অহেতুক বিতর্কের প্রয়োজন ছিল না বলেই তাদের মতামত।

-সিভয়েস/এনএইচ/এমএম

বিনোদন ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়