Cvoice24.com


জাল সনদ দিয়েও চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজিমের মনোনয়ন বৈধ!

প্রকাশিত: ১৭:০১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
জাল সনদ দিয়েও চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজিমের মনোনয়ন বৈধ!

ছবি: সিভয়েস

ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের শিক্ষাগত যোগ্যতায় গড়মিল পাওয়া গেছে। তিনি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তিন জায়গায় তিন ধরণের তথ্য দিয়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে স্নাতক পাশ, নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিয়েছেন এইচএসসি এবং সর্বশেষ সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের বরাবর উল্লেখ করছেন স্ব শিক্ষিত। তবে নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় প্রথমে এইচএসসি পাশ উল্লেখ করলেও পরে ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে হলফনামা যাচাই বাছাই শেষে এ গড়মিল পাওয়া যায়।  

নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামার সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর্থিক স্বচ্ছলতা, ফৌজদারি মামলা আছে কিনা এমন ৭টি বিষয়ে তথ্য প্রদান করতে হয়। এমনকি এসব তথ্য একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার মাধ্যমে সত্যায়িত করে নেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।

এদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের হলফনামার সকল কাগজপত্র সত্যায়িত করেছেন ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুমেন চাকমা।

তিনি সিভয়েসকে জানান, নাজিম উদ্দিন মুহুরীর ২জন লোক আমাকে কাছে আসেন সার্টিফিকেট সত্যায়িত করতে। প্রথমে আমি দাপ্তরিক কাজে থাকাতে সত্যায়িত করতে চাইনি। তখন উনাদের হাতে সময় না থাকায় অন্যজনের কাছে যেতে পারবেন না বলে কাকুতি মিনতি করেন। তাই দুয়েকটি কাগজ দেখে বাকিগুলো সত্যায়িত করে দিই। আসলে ওই মুহূর্তে সবগুলো কাগজ দেখার সময় ছিল না।

তিনি আরও বলেন, দুইজন লোক এসে আমাকে চাপ প্রয়োগ করাতে আমি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছি। শিক্ষার সনদগুলোতে সন্দেহ মনে হওয়ায় আমি স্বাক্ষর করতে চাইনি। পরে উনারা অরিজিনাল সার্টিফিকেট দেখান। কিন্তু কোনটা কোনটা দেখিয়েছে আমার মনে নেই।

এদিকে আজ বুধবার দুপুরে হলফনামায় একাডেমিক সার্টিফিকেট সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার আসল সার্টিফিকেট বা সম্পূরক তথ্য প্রদানের নির্দেশ দেন। পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে তিনি একজন আইনজীবীকে সাথে নিয়ে এসে স্ব শিক্ষিত বলে পুনরায় হলফনামা জমা দেন। পরবর্তীতে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মনোনয়ন বৈধতা ঘোষণা দেন।

এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নাজিম উদ্দিন মুহুরীকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্র ২০১৮ সালের শেষে দিকে পেলে ওখানে আমার বাবার নাম এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি ভুল আসে। সে সাথে আজকে নির্বাচন কমিশনে আমার কর্মীরা আমার পক্ষ থেকে ভুল হলফনামা প্রদান করা হলে সেটি আমি সংশোধনের সময় চেয়ে নিই এবং মাননীয় রিটার্নিং অফিসার আমাকে সময় দিলে আমি পরবর্তী হলফনামায় স্ব শিক্ষিত উল্লেখ করে নতুন হলফনামা প্রদান করি। সত্যিকথা বলতে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন সনদ নেই। এগুলো আমার কর্মীরা করেছে।

কথা হয় রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনির হোসাইন খানের সাথে। তিনি সিভয়েসকে বলেন, আমরা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে বিকেল ৫টার মধ্যে যথাযথ কাগজপত্র দাখিল করার সময় দিয়েছি। উনি নতুন করে হলফনামা দিয়েছেন তাই উনার মনোনয়ন বৈধতা ঘোষণা করেছি। উনার হলফনামা উকিলরা তৈরি করেছিলেন বিধায় উনি ভুল সার্টিফিকেট হলফনামার সাথে সংযুক্ত করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন নীতিমালায় শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক দিয়ে কোন নির্দিষ্টতা নেই। তবে যতটুকু যোগ্যতা হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে সেটি যথাযত উল্লেখ করতে হবে। তা নাহলে মনোনয়ন বাদ পড়ার সম্ভাবনা ছিলো। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন অনুরোধ করেছেন যথাযত কাগজ জমা দিবেন বলে, তাই আমি তাকে বিকেল পর্যন্ত সময় দিই। এর মধ্যে তিনি নতুন হলফনামা আমার কাছে পেশ করলে আমি মনোনয়ন দিই। কারণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের নীতিমালার ১৭ বিধি এর উপ-বিধি ১ এ উল্লেখ আছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা চাইলে ছোট খাটো ভুলগুলো সংশোধন করার সুযোগ দিতে পারবেন।

-সিভয়েস/এমআইএম/এসএ

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়