Cvoice24.com


একজন রুনুর ভালবাসা

প্রকাশিত: ১৬:২২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
একজন রুনুর ভালবাসা

২০০৬ সাল থেকে পঙ্গু বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজামাল। মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হলেও জীবন সায়াহ্নে এসে সংগ্রাম করে চলেছেন তিনি। বার্ধক্য, অসুখ-বিসুখ, পুষ্টিহীনতায় কাবু এই মুক্তিযোদ্ধার এক সময় সব ছিল। শক্তিহীন কঙ্কালসার পঙ্গু দেহটি ছাড়া এখন তার আর কিছুই নেই। মুক্তিযোদ্ধা শাহজামাল আজ জীবনের অন্তিম মুহূর্তে খুবই অসহায়ভাবে দিনাতিপাত করছেন। অসুস্থতা কেড়ে নিয়েছে তার জীবনের সব আনন্দ। জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাচ্ছেন ঘরের বিছানায় শুয়ে। 

দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে পরম ভালোবাসায় স্বামীর সেবা যত্ন করে যাচ্ছেন রুনু। শুধু তাই নয় টাকার অভাবে যখন স্বামীর চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, তখন নিজের বাবার বাড়ী থেকে প্রাপ্য সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। এমন কি নিজের স্বর্ণ অলংকারও বিক্রি করে দেন। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা এক মুহূর্তের জন্যও হারিয়ে যায় নি। কখনও বিরক্ত হতে দেখা যায়নি রুনু কে। 

অন্যের অনুভবের সঙ্গে মনের অজান্তেই যখন নিজের অনুভূতিও মিলে যায় তাকেই হয়তো ভালোবাসা বলা হয়। আর সেই ভালোবাসার টানে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আপন গতিতে জীবন পরিচালনা করেন। যদিও ভালোবাসার প্রকৃত সংজ্ঞা কোনো পুস্তকে আছে কি না জানা নেই । থাকলে হয়ত এমটাই হতো।

সন্দ্বীপের শাহজামাল এবং রুনুর বিয়ে হয়েছে আজ প্রায় ৩৮ বছর। ১৯৮১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন পাশের গ্রামের খায়রুন নেছা রুনুর সাথে। জীবনের এই অন্তিম মুহুর্তেও স্ত্রীর ভালোবাসা একটুও কমেনি স্বামীর প্রতি। ভোরের সূর্যদোয় থেকে সন্ধ্যা সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত কঠর খাটনি খাটতে হয় রুনুর। স্বামীকে ছাড়া স্ত্রী এক মুহূর্তেও থাকতে পারে না। এরি নাম হচ্ছে ভালবাসার আজল ভরা ঘর সংসার।

শাহজামাল বলেন, অনেক ক্রান্তিকাল পাড়ি দিতে হয়েছে আমাকে। রাজনীতি করার কারণে জেল, জুলুম ও অত্যাচারের শিকার হয়েছি। রাজনীতিবিদ, বন্ধুবান্ধব, আত্নীয়স্বজন দুর্দিনে কেউ পাশে নেই। কিন্তু আমার পরিবার সব সময় আমার পাশে আছে। আমার স্ত্রী এক মুহূর্তের জন্যও বিরক্ত হন না। মাঝে মাঝে রাতে আমার জন্য ঘুমাতেও পারেন না। 

খায়রুন নেছা রুনু বলেন, আমার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাকে অবহেলা করা হলে, দেশমাতৃকাকে অবমাননা করা হবে। তাছাড়া স্বামী, স্ত্রীর সংসার হচ্ছে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ভাগ করে নেয়া। বাকি জীবনটা এই পঙ্গু মানুষটার সেবা করে যেতে চাই।

ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আসলে ভালোবাসা বর্তমানে মানুষের কাছে পুতুলে মতো হয়ে গেছে। যখন ইচ্ছা ধুয়ে মুছে খেলতে লাগলো আবার যখন ইচ্ছা উঠিয়ে রাখলো। বছরে একটা দিন পালন করলেই বুঝি ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। আসলে ভালোবাসা কখনোই ফুরাবার নয়। ভালোবাসা কখনোই যে কোন দিবসকে ঘিরে হয় না। প্রিয় মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার নামই ভালোবাসা।

ছেলে সাহেদুজ্জামান জনি বলেন, আমার মা কে কখনও দেখিনি বাবার প্রতি বিরক্ত হতে। যতটুকু দেখেছি একজন আরেকজনকে বুঝে চলার চেষ্টা করতে। 

ভালোবাসার ইতিহাসে লায়লী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, মমতাজ-শাহজাহানের নাম অনেক পুরনো অধ্যায়। আধুনিক যুগের ভালোবাসা বিভিন্ন দিবসের বেষ্টনীতে বাঁধা পড়লেও ভালোবাসাকে জয় করা এমনি এক যুগল শাহজামাল-রুনু। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্যপরায়ণ কতটা হতে পারে, রুনু কে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।

-সিভয়েস/এস

ইকবাল হাসান

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়