Cvoice24.com


এসেছে বসন্ত...

প্রকাশিত: ০৯:০১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
এসেছে বসন্ত...

বসন্ত উৎসবে মেতে উঠেছে তরুণীরা। ছবি : মিনহাজ ঝন্টু

আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এতো বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়, আহা আজি এ বসন্তে।

আজ পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমন দিন। নতুন রূপে প্রকৃতিকে সাজাবে ঋতুরাজ বসন্ত। শিমুল পলাশসহ কত বাহারী ফুল ফুটেছে। ফুলে ফুলে উড়ে পাখি ভ্রমররাও করছে খেলা। মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছির দল। প্রকৃতি আজ দক্ষিণা দুয়ার খুলে দিয়েছে। সে দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া।

ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এতো বর্ণিল সাজ। সে ফাগুনের মাতাল হাওয়া দোলা দিয়েছে বাংলার নিস্বর্গ প্রকৃতিতে। শীতের খোলসে ঢাকা থাকা পলাশ, শিমুল কৃষ্ণচূড়া, রাঁধাচূড়া, এখন ফাগুনের স্পর্শে জেগে উঠেছে। মৃদুমন্দা বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধ ও কোকিলের গান জানিয়ে দিচ্ছে, সত্যি সত্যি ঋতুর রাজ বসন্তের আগমনকে।

বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে বাঙ্গালিদের মনেও দোলা লেগেছে।
লাল আর হলুদের বাসন্তী রঙে প্রকৃতির সাথে নিজেদের সাজিয়ে আজ বসন্তের উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসবে বাঙালি। বিশেষ করে তরুণ তরুণীদের সাজ সজ্জা লক্ষণীয়। তরুণীরা খোঁপায় ফুল, বাসন্তী রং এর শাড়ী পরে। তরুণরা হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে। প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য অন্যন্য একটি দিন। সারাদিন ঘুরে বেড়ানো ও ভাব বিনিময়ে কাটা সময়।

বসন্তের আনন্দ উল্লাস থেকে বাদ যায় না গ্রামেও। শহরের চেয়ে গ্রামেই বেশি শোনা যায় কোকিলের ডাক। এছাড়া শিমুল পলাশ কৃষ্ণচুড়াসহ বাহারি ফুলও চোখে পড়ে বেশি।আম, লিচুর মুকুল সৌরভ ছড়ায়। বসন্তকে ঘিরে পিঠাপুলি তৈরিরর ব্যস্ততাও থাকে।

বসন্তে আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোল সংঘঠিত হয়েছে। কৃষ্ণচুড়ার সে লাল যেন রাজপথে ভাষার দাবীতে প্রাণ দেওয়া শহীদদের রক্ত। ১৯৫২ সালের ৮ ফাল্গুন বা ফেব্রুরীর ২১ তারিখ ঘটিত সে ঘটনা বসন্তের সাথে মিশছে। তাই বসন্তে ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া শহীদদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সকলে।

বসন্ত নিয়ে কবি সাহিত্যিকদের ও রয়েছে অসংখ গল্প কবিতা। বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এতো বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়, আহা আজি এ বসন্তে। ‘কবি সুভাষ মুখোপাধ্যয় লিখেছেন। ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। এভাবে ঋতুরাজ বসন্ত গল্প কবিতায় সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা সাহিত্য।

বসন্তকে ঘিরে বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, চট্টগ্রাম ডিসি হিল, সিআরবি শিরীষতলা, শাহবাগ, চারুকলা চত্বর, পাবলিক লাইব্রেরি,  সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ধানমন্ডি লেক, বলধা গার্ডেনসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আয়োজিত অনুষ্ঠান, রঙ্গিনসাজে সজ্জিত হয় ঘোরাফেরা, বেড়ানো সব মিলিয়ে উচ্ছাসিত থাকে বাঙ্গালিরা।

ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে  মাথায় ফুলের সাজ, পরনে বাসন্তী শাড়িতে সাজে মেয়েরা। আর ছেলেরাও সাজে পাঞ্জাবীতে। তারা দিনটিকে মাতিয়ে রাখে সারাদিন। দিনভর চলবে তাদের বসন্তের উচ্ছ্বাস প্রকাশ। ফোন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়। এক কথায় নানা আয়োজনে বসন্তকে বরণ করে বাঙালি।
বসন্ত উৎসব পালনের শুরুটা বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। 

তবে মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরণটা এখনকার মতো ছিল না। তাই পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব কেবল উৎসবে মেতে ওঠার সময় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্ত্বা। বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে  এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।

সিভয়েস/আরআই/এমআইএম

রফিক তালুকদার

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়