Cvoice24.com


ভোট এলেই কদর বাড়ে শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের

প্রকাশিত: ০৭:২০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
ভোট এলেই কদর বাড়ে শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের

চট্টগ্রাম আদালত পাড়ায় সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে শিক্ষানবীশরা আইনজীবীরা।

ভোট মানেই উৎসব। জয়-পরাজয়ের হিসেব-নিকেষের পাশাপাশি থাকে প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির জোর দরকাষাকষি। বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনেই আলাদা শক্তি বা বলয় প্রদর্শনের চিরায়তরূপ দেখা যায়। পেশাজীবী সংগঠনগুলোর নির্বাচনগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। পেশাজীবী নির্বাচনগুলোতে ভোটার সংখ্যা কম হলেও ভোটারের বাইরে সমর্থকদের সরব উপস্থিতি অনেক সময় জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ২০১৯ অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ। সকাল ৯টা থেকে চলছে ভোটগ্রহণ। তিন নম্বর আইনজীবী মিলনায়তনে ভোটগ্রহণ চললেও চট্টগ্রাম আদালত পাড়ায় প্রবেশের পুরো রাস্তাজুড়ে সমর্থকদের কার্ড বিতরণের যেন মহড়া চলছে! পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে প্রার্থীর ব্যালট নম্বর এবং ছবি সম্বলিত এসব কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে। কার্ড বিতরণের কাজে যারা ব্যস্ত তাদের বেশিরভাগই শিক্ষানবীশ আইনজীবী। (বিশ্বাবিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে আদালতে একজন সিনিয়রের সাথে থেকে যারা প্রেকটিস করেন তাদের শিক্ষানবীশ আইনজীবী বলা হয়।) শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার সময় থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত কাজ করার জন্য আলাদা সম্মানীও পেয়ে থাকেন। প্রার্থীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এই সম্মানী কম-বেশী হয়ে থাকে।

শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা বয়সে তরুণ এবং সংখ্যায় অধিক হওয়ায় নির্বাচনের সময় তাদের কদর বেড়ে যায় বহুগুণ। সাধারণত খুব বেশী দলীয় না হলে সাধারণ আইনজীবীরা নির্বাচন নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় তেমন অংশ গ্রহণ করেন না। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় তাই একমাত্র ভরসা হয়ে উঠে শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা। এছাড়া সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদগুলোর জন্য দলীয় কর্মী-সমর্থকরা সরাসরি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করলেও সদস্যপদগুলোর জন্য তেমন সরবভাবে দেখা যায়না তাদের। বিশেষকরে সদস্য পদের প্রার্থীদের জন্য শিক্ষানবীশ আইনজীবীরাই বেশী পরিশ্রম করেন। সদ্য আদালত প্রাঙ্গণে পা রাখা অনেক তরুণের সিনিয়র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন আবার সিনিয়র দলীয় নেতা বা কর্মী হলে তার দল মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে জুনিয়রদের কাজ করতে উদ্ভুদ্ধ করেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষানবীশ আইনজীবী তার বন্ধুদের সাথে নিয়ে সিনিয়রের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন।

চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, ভোট দিতে আসা আইনজীবীদের দেখা মাত্রই প্রার্থীদের সমর্থক শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তাদের সামনে। প্রার্থীর ব্যালট নম্বর এবং নাম বারবার বলে দিচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রের প্রবেশ মুখে দীর্ঘ সারি করে দুইপাশে দাঁড়িয়ে আছেন প্রার্থীদের সমর্থকরা।

আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ের নিচে সোনালী ব্যাংকের সামনে রাজিব ভট্ট্রাচার্য নামে একজন শিক্ষানবীশ আইনজীবীর সাথে কথা হয়। তিনি আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা করছেন। তিনি সিভয়েসকে বলেন, আমরা গত ১৯ জানুয়ারি থেকেই প্রচারণা করছি। সিনিয়রা আদালত এবং চেম্বারে বেশী ব্যস্ত থাকেন। আমরা যারা শিক্ষানবীশ আইনজীবী তারা প্রচার-প্রচারণায় বেশী অংশগ্রহণ করে থাকি। নির্বাচনের এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকায় আমরা অনেক কিছু শিখতেও পারি।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ মনোনীত সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট বদরুল আনোয়ারের পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচার করছেন শিক্ষানবীশ আইনজীবী শহিদ উল্ল্যাহ। তিনি সিভয়েসকে বলেন, নির্বাচন তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি উৎসব। আমরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বা প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাওয়ার মাঝে একটি আনন্দ অনুভব করি। নির্বাচন এলে সিনিয়র-জুনিয়রদের মাঝে একটি সেতুবন্ধন তৈরি হয়।

বারকাউন্সিলের সদ্য ঘোষিত আইনজীবী হিসেবে তালিকাভূক্ত হয়েছেন অ্যাডভোকেট রবিউল হক ফরহাদ। তিনি বলেন, আমি গত ৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম আদালতে প্রতিটি নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। আমার সিনিয়রের দুটি নির্বাচনে নিজে প্রাণপণে প্রচার-প্রচারণা করেছি। গত নির্বাচনেও পাঠাগার সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট নুরুল করিম এরফান স্যারের পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ছিলাম। মূলত ভোটাধিকার প্রয়োগ ছাড়া শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রক্রিয়া অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।

তরুণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইমতিয়াজ উদ্দিন সোহেল বলেন, নির্বাচন মানে বিশাল কর্মযজ্ঞ। পেশাজীবীদের নির্বাচনে প্রতিটি প্রার্থীকে টাচ করা প্রয়োজন হয়। প্রার্থী বেশী হওয়ায় ভোটারদের কাছে আরো বেশী বেশী যেতে হয়। এই পুরো প্রক্রিয়া প্রার্থীদের দ্বারা সম্ভব হয়ে উঠে না। সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নবীন আইনজীবীরা এবং শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য।

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক পাঠাগার সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলুল বারী বলেন, শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা আদালতের প্রাণ। আদালতে প্রতিটি কার্যক্রমে শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের অবদান অনেক। নির্বাচনের পছন্দের প্রার্থীদের জন্য শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে।

উল্লেখ্য, ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ২০১৯ এর ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে সকাল থেকে। এই নির্বাচনে ৩ হাজার ৪২৬ জন ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। ভোট গণনা শেষে রাতেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এই বছরের নির্বাচনে আইনজীবীদের ৪টি সংগঠনের ৪৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামীপন্থী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট ১৯টি পদের সবকটিতে প্রার্থী দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমমনা আইনজীবী সংসদ প্রার্থী দিয়েছে ৫টি পদে।

সিভয়েস/এনএইচ/এএইচ

মুহাম্মদ নাজমুল হাসান

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়