Cvoice24.com


কেন ভাঙছে না ‘কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ’

প্রকাশিত: ১২:২১, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
কেন ভাঙছে না ‘কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ’

কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ।

কর্ণফুলী নদীর তীরে প্রথম ধাপের উচ্ছেদ অভিযান চালানো ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) টানা পাঁচদিন অভিযানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটান জেলা প্রশাসন। প্রথম ধাপের অভিযানে ছোট বড় সব রকমের গুদাম ভাঙা পড়েছে। তবে সদরঘাট এলাকায় ‘কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ’ নামে একটি তিনতলা ভবন ভাঙবে কি ভাঙবে না তা নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- কেন ভাঙছে না এ ভবন! এটা কি আদৌ ভাঙা হবে না ?

শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সব ছোট বড় স্থাপনা ভেঙে দিলেও  তিনতলা ভবনটি দিব্যি দাড়িয়ে রয়েছে। প্রথম ধাপের অভিযানেও কিছু করতে পারেনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। কারণ জনমূখে শোনা যাচ্ছে ভবনটি সরকার থেকে ইজারা নেয়া।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজের জায়গাটি ইজারা নেয়া। এখন উচ্ছেদ অভিযান চললেও তাদের ভবনটিকে ভাঙতে পারছেন না প্রশাসন। কারণ তারা হাইকোর্ট থেকে একটি স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। যে কারণে ম্যাজিস্ট্রেটরা পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মামুন হোসেন বলেন, সবাই মালামাল সরিয়ে নিলেও এ কোল্ড স্টোরেজের কোন মালামাল সরিয়েও নিচ্ছে না। তারা এটাকে ভাঙার মধ্যে পড়ুক সেটা চাচ্ছে না। যদি চাইতো তাহলে তারা কোটি কোটি টাকার মালামাল সরিয়ে নিতো।
তারেক নামে আরেক স্থানীয় বলেন, আইন সবার জন্য সমান। সরকার চাইলে এ জায়গাটি দখলে নিয়ে নিতে পারে। যদি তারা সরকার থেকে ইজারা নেয়, তাহলে সরকার ইজারার টাকা ফিরিয়ে দিবে। এতে হাইকোর্ট দেখানোর কি আছে। হাইকোর্টও চাইলে স্থগিতাদেশ ফিরিয়ে নিতে পারে। সরকারি জায়গা সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পতেঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি)  তাহমিলুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অবৈধ কোন ভবন থাকবে না। আগামী সোমবার এ নিয়ে একটা শুনানি আছে তার পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবো।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন সিভয়েসকে বলেন, কোল্ড স্টোরেজটা আমাদের রেকর্ডের মধ্যে পড়েনি। যতটুকু পড়েছে ততটুকু ভাঙা হয়েছে তারমধ্যে আর অল্প একটু আছে সেজন্য তারা হাইকোর্টের স্ট্রে অর্ডার দেখিয়েছে। ওটা নিষ্পত্তি হয়ে গেলেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবো। আবার উনারা এটা সরকার থেকে দীর্ঘমেয়াদী ইজারা নেয়াতে ওইদিকেও সুবিধা পেয়েছেন।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এ ভবনটি বন্দোবস্ত বাতিল করার সুযোগ থাকলে সেটা আমরা করবো। তবে এ কোল্ড স্টোরেজে অনেক মালামাল রয়েছে এবং আইনগত জটিলতা থাকায় পুরোটা ভাঙতে পারিনি। আর আমাদের মধ্যে যতটুকু পড়ছে তার বেশিরভাগ অংশ ভেঙে ফেলেছি। 

এ নিয়ে শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় উচ্ছেদের পর পুরো এলাকা পরিদর্শন করেছেন ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। 

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধ কোন কিছুই থাকবে না। যতটুকু জেনেছি মাছের আড়তে হাজার হাজার মাছ স্টকে আছে। তাদের সময় দেয়া হবে। আমি কাজ করছি দেশ এবং জনগণের কল্যাণের জন্য। কোন অবৈধ স্থাপনা থাকতে দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইছেন উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আমরা সে লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।

মন্ত্রী আরও বলেন, কর্ণফুলী বাঁচলে, চট্টগ্রাম বাঁচবে। কর্ণফুলী নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নদী আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। এছাড়া আমরা চেষ্টা করবো দৃষ্টিনন্দন কিছু করতে। কারণ কর্ণফুলী নদী দেখতে অনেকে আসে। নোংরা পরিবেশে দেখা আর সুন্দর পরিবেশে দেখার মধ্যে পার্থক্য আছে।

উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) থেকে নগরীর সদরঘাট থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানে ২৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি খালও উদ্ধার করা হয়েছে। ছয় দিনের উচ্ছেদ অভিযানে বেদখলে থাকা প্রায় ১০ একর ভূমি উদ্ধার করেন প্রশাসন। আজকে এ অভিযানের প্রথম পর্যায় শেষে পরিদর্শনও করেন ভূমি মন্ত্রী।

সিভয়েস/এসএ

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়