নিষিদ্ধ নোট-গাইডে আগ্রহী শিক্ষকরা, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
নগরীর বিভিন্ন লাইব্রেরিতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ গাইড বই। (ফাইল ছবি)
আইনের তোয়াক্কা না করে নিষিদ্ধ নোট-গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দরকিল্লা, চকবাজারসহ বিভিন্ন স্থানের লাইব্রেরি মালিকরা।
দেশের আইন এবং আদালতের রায় অনুযায়ী প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গাইড ও নোটবই নিষিদ্ধ। এ পর্যায়ের নোট ও গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশনা ও বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। কিন্তু ওই আইন লঙ্ঘন করেই বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্কুলের শিক্ষকদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকাশনী তাদের বুকলিস্ট ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা লিস্টে উল্লেখিত প্রকাশনীর নোট ও গাইড বই নির্দিষ্ট লাইব্রেরি থেকে চড়া দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
নগরীর ওয়ার্লেস হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী সিভয়েসকে বলেন, আমি ভর্তি হতে না হতেই স্কুল থেকে আমাকে একটি নোট-গাইডের বুকলিস্ট দেওয়া হয়েছে। স্যার বলেছেন উল্লেখিত প্রকাশনীর বইগুলো ছাড়া অন্য বই কিনলে কম নম্বর দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে শিক্ষার্থীর সাথে থাকা অভিভাবক জানান, এটা কেমন রীতি? সরকার আইন করেছে বলছে অথচ আমাদের বাড়তি খরচ করে আবার গাইড বই কিনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ওয়ার্লেস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মহসিন সিভয়েসকে জানান, স্কুলে বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার লোক সৌজন্য কপি দিয়ে যায়। আর আমরা ওগুলো শিক্ষার্থীদের কিনতে সাজেস্ট করি। সরকার আইন করলেও এগুলোর তদারকি করে না।
আন্দরকিল্লাহ আপন বুকস লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী বলেন, আমরা পাইকারি দামে ২৭% ছাড়ে নোট-গাইডগুলো বিক্রি করি। স্কুলগুলোতে বিভিন্ন প্রকাশনীর বুকলিস্ট গুলো পাঠায়। তবে আমরা আগে কিছু কিছু স্কুলে সম্মানি দিয়ে তাদের বুকলিস্টে আমাদের নাম লিখিয়ে নিতাম। এখন সেটা করিনা।
অভিভাবকদের অভিযোগ, সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির যুগোপযোগী সময়েও শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পীড়াপীড়িতে শিক্ষার্থীরা কিনতে বাধ্য হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট-গাইডগুলো। সৃজনশীল জাতি গড়ার জন্যই সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা হলেও নোট ও গাইড থেকে শিক্ষকরা পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরী করেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষকেরা তাদের দায়িত্ব ভুলে যেতে বসলে এমনটা হয়। সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি অনেক শিক্ষকই বুঝেন না। অথচ তারা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন এবং সৃজনশীল প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষাও নিচ্ছেন। আর প্রত্যেক বছর কোনো না কোনোভাবে প্রশ্নফাঁস হচ্ছেই। এতে কি আমরা সৃজনশীল শিক্ষিত জাতি পাচ্ছি?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর আন্দরকিল্লাহ মার্কেটের প্রায় দোকান থেকে পাইকারি দামে সরবরাহ করা হচ্ছে এসব নিষিদ্ধ বই। যা ছড়িয়ে যাচ্ছে নগরীর ছোট ছোট বইয়ের দোকানগুলোতে।
চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. গোলাম মাওলা সিভয়েসকে জানান, এসব বই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ কিন্তু ধরা পড়লে যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তার প্রয়োগ হয় না। নোট-গাইডের বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট একটা নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু এই নীতিমালা থাকার পরেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী স্কুল মাস্টারদের বিভিন্ন প্রলোভনে এই বইগুলো কিনতে শিক্ষার্থীদের সাজেস্ট করেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আমিরুল কায়ছার জানান, আমরা নোট-গাইড বিক্রি বন্ধের জন্য নিয়মতি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকি। এটা অব্যাহত আছে। কোনো স্কুল যদি বুক লিস্টের নাম দিয়ে নোট-গাইড কিনতে উৎসাহিত করে, লিখিত অভিযোগ ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-সিভয়েস/টিআর/এসএইচ
তানভীরুল মিরাজ রিপন