Cvoice24.com

সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী
নারী নেত্রী রৌশনীর রাজনৈতিক পথচলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯
নারী নেত্রী রৌশনীর রাজনৈতিক পথচলা

সায়রা বানু রৌশনী

কিছু কিছু মানুষ তাঁদের প্রতিভা আর কর্মসাফল্য দিয়ে দুনিয়াকে চমকে দিতে পছন্দ করেন। মহানগর যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক অধ্যাপিকা সায়রা বানু রৌশনী তেমনই একটি নাম। ছোট থেকেই রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠা, আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে পথচলা। আজও চলছে তাঁর সেই পথচলা।

লেখালেখি, শিক্ষকতা, আবৃত্তি, উপস্থাপনা ও ব্যবসা- এ পাঁচটি শাখায় রৌশনীর অসামান্য পারদর্শিতা। শিক্ষাজীবনেও নিজের মেধার পরিচয় দিয়েছেন বারবার। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর কমার্স কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ও স্নাতক ও মাস্টার্স পরীক্ষায়ও রেখেছেন মেধার স্বাক্ষর।

খেলাধুলায়ও অনন্য ছিলেন সায়রা বানু রৌশনী। চট্টগ্রাম বিভাগ শ্যুটিং ও ভলিবল দলের খেলোয়াড় ছিলেন। চট্টগ্রাম বিভাগ ব্যাটমিন্টন প্রতিযোগিতায় ডাবল ক্রাউন চ্যাম্পিয়ন হন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) কর্ণফুলী রেজিমেন্টের সাবেক ক্যাডেট তিনি।

শিক্ষাজীবন শেষ করার পর একে একে ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় ও সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন সায়রা বানু রৌশনী। মুক্তিযোদ্ধা বাবা বদিউল আলম বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি ১৯৯৮ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তৎকালীন সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে বহুবার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বদিউল আলমকে গ্রেফতার করে ১০ মাস কারাগারে আটক করে রাখে।

রৌশনীর মা নাসিম বানু গত ৩৫ বছর ধরে লালখানবাজার ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তার নানা আমির হোসেন দোভাষ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন; তিনি বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ছিলেন।
রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে উঠা সায়রা বানু রৌশনী বলেন, একটা সময় চট্টগ্রাম শহরের নারীরা রাজনীতিতে আগ্রহী ছিলেন না। যদিও এখন নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে নারীরা আসছেন। আগে এটা ছিল না। আমি তৃণমূল পর্যায়ে যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি দাঁড় করিয়েছি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম খুবই রক্ষণশীল একটা এলাকা। এ রকম একটা জায়গা থেকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছি, আবৃত্তি করি, বিটিভি, বাংলাদেশ বেতারে আছি। আমি মনে করি, আমার কার্যক্রমগুলো অন্য মেয়েদেরকে আকৃষ্ট করেছে, বিশেষ করে রাজনীতিতে আসার জন্য। চট্টগ্রামে এখন শিক্ষিত, ভালো ফ্যামেলির মেয়েগুলো এখন রাজনীতি করতে আগ্রহী।
স্মৃতিসৌধ না থাকায় প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ আসলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবাইকে শ্রদ্ধা জানাতে যেতে হয়। কেউ কেউ বধ্যভূমিতে ফুল দিতে যান। চট্টগ্রাম নগরে স্মৃতিসৌধ না থাকার বিষয়টি সায়রা বানু রৌশনীকে বেশ পোড়ায়। তিনি জানালেন, স্মৃতিসৌধ করার বিষয়ে লেখালেখি ও নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন।

প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্নেহ-ছায়ায় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠা সায়রা বানু রৌশনী সৃজনশীল অসংখ্য কাজের সাথে যুক্ত। নগরীর পতেঙ্গা, কাটগড়, বাকলিয়া, চকবাজার, মোহরা ও চান্দগাঁও এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার অগণিত নারীকে উদ্যোক্তাকে পরিণত করেছেন তিনি। নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।
    
এ প্রসঙ্গে সায়রা বানু রৌশনী বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও মহিলা সংস্থার মাধ্যমে অসংখ্য নারীকে আমি উদ্যোক্তা হতে সহযোগিতা করেছি। উইম্যান চেম্বারের পরিচালক থাকার সময় অনেক নারী উদ্যোক্তাকে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। সরকারের যে পদক্ষেপগুলো আছে, সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে নারীদের একটা লিংক আমি করে দিয়েছি। তারা যাতে সুযোগ-সুবিধাগুলো সহজে পায়।

মেরিন একাডেমী ও মেরিন ফিশারিজ একাডেমীতে নারী ক্যাডেট ভর্তি করা শুরু হলে অনেকেই এ বিষয়ে জানতেন না। ফলে চট্টগ্রামের নারীরা সেখানে ভর্তি হচ্ছিল না। সে সময় চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি কলেজে গিয়ে রৌশনী সেখানে ভর্তির গুরুত্ব তুলে ধরে ছাত্রীদের মাঝে বক্তব্য রাখতেন। রৌশনী বলেন, মেরিন একাডেমী ও মেরিন ফিশারিজ একাডেমী থেকে বের হলে উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে- এটাই বলতাম তাদের। নারীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে কর্মযজ্ঞ, পদক্ষেপ সেটা আমি স্থানীয়ভাবে নিয়ে এসেছি। নারীদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি।

বর্তমানে বাবার নামে বদিউল আলম মডেল হাই স্কুল ও কলেজের সার্বিক দেখাশোনা করছেন সায়রা বানু রৌশনী। গত বছর চারটি বই বের হয়েছে তাঁর। এরমধ্যে দুটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রীক। আর দুটি শিশুতোষ। এ নিয়ে রৌশনী বললেন, আমি যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি, তখন থেকেই আমার লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। আমি প্রত্যেক বছর শিশুতোষ সিরিয়াল বের করি। কোন বছর একটা, আবার কোন বছর একাধিক।

বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত উপস্থাপিকা এবং আবৃত্তিশিল্পী রৌশনী। বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত বাংলা সংবাদ পাঠিকা হিসেবেও তালিকাভুক্ত তিনি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আবৃত্তি প্রতিযোগিতাও অংশ নিয়েছেন। আবৃত্তি শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়ে দিল্লী, আগ্রা, কলকাতাসহ দেশের বাইরে নানা জায়গায় গিয়েছেন তিনি।

এখন নোলক বুটিকস, ক্লে গ্রাউন্ড ও তাসিনান এন্ড ব্রাদার্স নামের তিনটি ব্যবসা উদ্যোগের সাথে যুক্ত আছেন সায়রা বানু রৌশনী। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসে বাংলার নারীদের জীবনমান আরো উন্নত করতে আমি কাজ করতে চাই। নারীদের আরো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নিজের ভাবনার কথাও বললেন সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সায়রা বানু রৌশনী; তিনি বলেন, দলমত সবকিছুর ঊর্ধ্বে হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ বিষয়ে আমি কারো সাথে আপস করবো না। বঙ্গবন্ধু সবার। তিনি জাতির পিতা। সেটা আমাদের মানতেই হবে। এই শ্রদ্ধাবোধটুকু যাদের নেই, আমি মনে করি তাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশে থাকার অধিকার নেই।  

সিভয়েস/এএইচ

 

মোনাজাত উদ্দিন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়