প্রবাসীর কাছে চাঁদা দাবি, অভিযোগ পেয়েই অ্যাকশনে পুলিশ
প্রবাসীদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ছবি: সিভয়েস
মোহাম্মদ এনামুল হক। সৌদি প্রবাসী। বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায়। এক দুষ্কৃতিকারী ইমু ম্যাসেঞ্জারে চাঁদা দাবি করে তার কাছে। এ ঘটনা জানিয়ে এনামুল হক গত ১৩ জানুয়ারি ই-মেইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার বরাবর এক ক্ষুদে বার্তা পাঠান। যাতে দুষ্কৃতিকারীকে আইনের আওতায় আনা হয়।
মেইলটি পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট থানার ইনচার্জ এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বরাবর দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ফরোয়ার্ড মেইল পাঠান জেলা পুলিশ সুপার। তাতে চাঁদা দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
শুধু এনামুল নয়, আমেরিকা প্রবাসী আতাউর রহমান, দুবাই প্রবাসী নুরুল আলম, আরব আমিরাত প্রবাসী মো. মাসুদ হোসাইনসহ ১৫ জন লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করেছেন পুলিশ সুপার বরাবর। যেখানে কারও সম্পত্তি ভোগ, ব্ল্যাকমেইলিং, অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়।
গত ৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয় প্রবাসী হেল্প ডেস্কের। ১০ দিনের মধ্যে এর প্রতিফলন পেতে শুরু করেছেন প্রবাসীরা। এরই মধ্যে টেলিফোনে অভিযোগের পাশাপাশি ম্যাসেঞ্জার এবং মেইলে অভিযোগ এবং পরামর্শ চাইছেন তারা।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হেল্প ডেস্ক শাখা পরিদর্শন করলে দেখা যায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অভিযোগ এসেছে প্রায় শতাধিক। মেইলে লিখিত অভিযোগ এসেছে ১৫ থেকে ২০টি। আর ফেসবুক পেইজে অভিযোগ ও পরামর্শ আসছে নিয়মিত।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রবাসীরা। অনেকেই নিজের পরিবার নিরাপদ থাকবে আশা নিয়ে পুলিশ সুপারকে অভিনন্দন জানান।
এ নিয়ে পটিয়া উপজেলার দুবাই প্রবাসী আব্দুল আলম বলেন, আমি প্রবাসী ডেস্ক উদ্বোধনের সাথে সাথে একটা অভিযোগ দিয়েছিলাম। তার তিনদিনের মধ্যে আমার কাজটি সমাধান হয়ে যায়। এতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত হয়ে প্রবাসী সহায়তা ডেস্ক চট্টগ্রাম জেলা পুলিশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেন সন্দ্বীপ এলাকার দুবাই প্রবাসী নুরুল আলম। তিনি সিভয়েসকে বলেন, আমি ও আমার পরিবারকে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করে আসছে। এমনকি আমাদেরকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছে কয়েকবার। এ বিষয়ে আমি পুলিশ সুপার মহোদয় বরাবর একটি লিখিত আবেদন করি। তিনি আমাকে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
কেউ কেউ ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা আর পরামর্শ চাইছেন পুলিশ সুপারের কাছে। তাও বাদ যাচ্ছে না। তাৎক্ষণিক কি করণীয় তাও সমাধান করে দিচ্ছেন হেল্প ডেস্কে থাকা কর্মকর্তা। আবার কে, কোন দেশ থেকে কল দিচ্ছেন এবং ঘটনাটি কোন জায়গার তা একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে।
হেল্প ডেস্কে থাকা বিশেষ শাখার কর্মকর্তা এসআই শফিকুল হাসান সিভয়েসকে জানান, যারা আমাদেরকে লিখিত আকারে মেইলে অভিযোগ দিচ্ছেন তা আমরা পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশক্রমে সংশ্লিষ্ট থানা এবং সার্কেলে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আবার অনেকে আমাদের সাথে সংযুক্ত হয়েছেন ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে, তারাও আমাদেরকে বিভিন্ন অভিযোগ দিচ্ছেন তার প্রেক্ষিতেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক প্রবাসী ভাই আছেন যাদের নিজ বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায় নয়। তবুও তাদের কোন অভিযোগ থাকলে আমরা অগ্রাহ্য করছি না। তাদের অভিযোগটি আমরা লিখিত আকারে নিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার মহোদয় বরাবর প্রেরণ করছি। এমনকি আমরা যে আমাদের কাজটি করেছি সেটি পুনরায় উনাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি এবং পরবর্তী করণীয় কি তাও বলে দেয়া হচ্ছে।
প্রবাসী হেল্প ডেস্কের বিষয় নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনার সাথে। তিনি সিভয়েসকে জানান, সবেমাত্র হেল্প ডেস্কের যাত্রা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মানুষের অভিযোগ আসা শুরু হয়েছে। আমিও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছি। হেল্প ডেস্ক উদ্বোধনের পর চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন হয়রানি বন্ধ হয়ে গেছে।
এ হেল্প ডেস্ক গতানুগতিক কাজে বাধা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আগের চেয়ে কাজ কিছুটা বেড়েছে। আগে আমাদের অফিসাররা ১২ ঘণ্টা কাজ করলে এখন ১৮ ঘণ্টা কাজ করছেন। যদিও সেটিকে আমি নেতিবাচকভাবে নিচ্ছি না। কারণ চট্টগ্রামের মানুষের জন্য ভাল একটা কাজ করছি, এতেই তৃপ্তি পাচ্ছি। এর আগেও আমি সিলেট জেলা পুলিশ সুপার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। যেটি এখানেও (চট্টগ্রাম) করেছি। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের এ উদ্যোগ ছড়িয়ে দিতে পারবো।
-সিভয়েস/এসএ/এমইউ
মনিরুল ইসলাম মুন্না