Cvoice24.com

হাইকোর্টের নির্দেশ মানছে না স্কুলগুলো
শিশুদের স্কুল ব্যাগের ওজন বাড়ছেই

প্রকাশিত: ১৬:১৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯
শিশুদের স্কুল ব্যাগের ওজন বাড়ছেই

ফাইল ছবি

শিশুর শরীরের ওজনের দশ শতাংশের বেশি ব্যাগ বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়েছেন চার বছর আগেই। রায়ে বলা হয়েছিল, শিশু শিক্ষার্থীদের ব্যাগের ওজন কী পরিমাণ হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। দেখা যাচ্ছে নানা ধরণের সিলেবাসের কারণে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে ভারিব্যাগ বহন করছে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এ বিষয়ে সরকারকে আইন প্রণয়নের নির্দেশ দেয়া হয়।

হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তাফা কামালের স্বাক্ষরে এক পরিপত্রে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ব্যাগে অনুমোদিত বই-উপকরণ ছাড়া অন্য কিছু বিদ্যালয়ে আনতে নিরুৎসাহিত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আট বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপ-পরিচালক; জেলা, উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্ট ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে খুদে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে এনসিটিভির বইছাড়াও অনুমোদনহীন বই। সাথে দেওয়া হচ্ছে ডায়েরি ও অন্যান্য উপকরন। যার ফলে ব্যাগের ওজন শিশুর শরীরের চেয়েও অধিক হয়ে দাড়ায়।যেই বই হওয়ার কথা ছিলো আনন্দপাঠ সে বই তাদের কাছে বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। তথাকথিত মেধাবী হওয়ার অসুস্থ  প্রতিযোগিতার বলী হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।

অনিক। বয়স মাত্র ছয়। ভোরে ঘুম থেকে উঠতে না উঠতে চোখ মুছতে মুছতে নিজের ওজনেরও অধিক ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে স্কুলের উদ্দেশ্য। যে স্কুল তাদের কাছে আনন্দের বিষয় হওয়ার কথা ছিলো সেখানে ব্যাগের বোঝার মতই শিক্ষাটা তাদের কাছে আজ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধুই অনিক নয়, অনিকের এমন ব্যাগের বোঝা বহনের প্রতিচ্ছবি পুরো বাংলাদেশের শিশু শিক্ষার্থীদের।

এই বিষয়ে নগরীর আইডিয়াল স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনিকের কাছে জানতে চাইলে সে বলে, স্কুলে যেতে আমার ভালই লাগে।কিন্তু এতো ভারী ব্যাগ আমার ভাল লাগে না।

এই বিষয়ে অভিভাবক জানান, আসলে কি করব সব জায়গায় তো কম্পিটিশন। তাকে তো পড়তে হবে। স্কুলও বইগুলো কিনতে বাধ্য করছে। নিয়ম তো নিয়মই।

শিক্ষাবিদ ও চট্টগ্রাম ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ সিকান্দর খান জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়তি বই দেওয়াটা স্বাভাবিক। ওরা ব্যবসাকে সফল করতে বইগুলো দিবে। কিন্তু রুটিন অনুযায়ী ক্লাস হয়, এখন শিক্ষার্থী যদি প্রতিদিনের বই একসাথে নিয়ে আসে সেটা তদারকি ও নিরুৎসাহিত করা উচিত। যেমন অভিভাবকের তেমন শিক্ষকেরও। সুতরাং ঐ দিকে নজর দিতে হবে। যে সমষ্টিগত দিক থেকে শরীরের ওজনের দশ শতাংশ করেছে এখানে দেখতে হবে একই বয়সের শিশুর অনেকের ওজন ১৫ কেজি বা অনেকের ২০ কেজি। সুতরাং কেমন প্রভাব পড়ছে তার ভিন্ন ভিন্ন হবে একই রকম হবে না।

এ  বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ প্রতিনিধি আমিনুল হক বাবু বলেন,  আমরা নিজেরাও জরিপ করে দেখেছি এটা শিশুর ওজনের বিশ শতাংশেরও বেশি হয়ে যায়।ক্ষেত্র বিশেষে এটা ত্রিশ শতাংশের মতও হয়ে যাচ্ছে। হাইকোর্টে রুল জারি হয়েছে আমরা সকলে জানি এবং পত্রিকায় দেখেছি। এটাকে কার্যকর করতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।আমরা আশাবাদী সরকার এই বিষয়টি গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করে এমন নির্দেশনা জারি করবেন যাতে ব্যাগের ওজন ১০ শতাংশের কাছাকাছি অন্তত থাকে।

এই বিষয়ে এডুকেশন স্ট্যান্ডিং কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান এড. রেহেনা বেগম রানু বলেন, শহরের ম্যাক্সিমাম স্কুলগুলো এই দশ শতাংশের বিষয়টাকে মানছে না। এটার একটা আইনি তদারকি থাকা উচিত। একটা মনিটরিং সেল থাকা উচিত। কিন্তু মনিটরিং সেল আছে বলে আমার মানা হচ্ছে না। নীতিমালা ও মনিটরিং সেল থাকবে, মনিটরিং হবে এভাবে সারপ্রাইজ ভিজিটিংয়ের মাধ্যমে। যেসব স্কুল এই নির্দেশনা মানবে না তার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত হতে পারে। একটা বাচ্চা তাকে কেনো শিক্ষা উপকরনের নামে এমন একটা বোঝা চাপিয়ে দিবে?

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আফজাল হোসাইন জানান, অনেকের জন্য এটা ভারী হয়ে পড়ে।অনেক সময় দেখা যায় যে তারা হয়তো স্কুলে গিয়ে টায়ার্ড হয়ে পড়ে। যার ফলে এটা মানসিকভাবে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলে।

এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, আসলে এসব আপেক্ষিক, আমরা আগে পলিথিন করে বই নিয়ে স্কুলে যেতাম। এখনের অভিভাবক তাদের সন্তানদের ভালো ব্র্যান্ডের ব্যাগ কিনে দেন এতে ব্যাগের ওজনও দেখা যায় পাঁচ কেজি। টিফিন এক এক দিন এক এক ওজনের থাকে, পানির বোতল থাকে। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

এই বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, বেসরকারি স্কুলগুলো সরাসরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে না। প্রাইমারি স্কুলগুলোতে এনসিটিভির অন্তর্ভুক্ত বইগুলো ছাড়া একটা বইও দেওয়া হয় না। আমাদের থেকে বই নিয়ে তারা সমাপনী দেয়। তবে আমরা একটা সুপারিশ পাঠিয়েছি, যেহেতু মন্ত্রণালয় পুরো দেশের এই অবস্থা তদারকি করে সিদ্ধান্ত নিবে।

-সিভয়েস/এসএ

তানভিরুল মিরাজ রিপন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়