Cvoice24.com


হাটহাজারীর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লক্ষাধিক টাকা দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিত: ১১:৪০, ১০ জানুয়ারি ২০১৯
হাটহাজারীর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লক্ষাধিক টাকা দুর্নীতির অভিযোগ

চট্টগ্রামের হাটহাজারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আইয়ুব মিয়া রানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে তাঁর নানান অনিয়ম, দুর্নীতি, চিকিৎসা সেবার বিনিময়ে গ্রাহক থেকে অর্থ আদায়, অফিসের কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার, সেবা প্রার্থীদের হয়রানিসহ আরো অনেক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ৯বছর ধরে একই অফিসে কর্মরত আছেন তিনি। তাঁর খুঁটির জোর এতই শক্ত যে বারবার বদলি হলেও তদবির করে পুনরায় একই অফিসে বহাল রয়েছেন।
 
শুধু বিগত ছয় মাসে বেশ কিছু অনিয়ম করে কয়েক লক্ষাধিক টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর কার্যালয়ের স্থাপনা সংস্কার বাবদ ৩ লক্ষ টাকার একটি বরাদ্ধ পান। নিয়ম অনুযায়ী রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন(আর.এফ.কিউ) এর ভিত্তিতে একজন ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজটি করার কথা রয়েছে। তবে ভুয়া কোটেশন দিয়ে কোন ঠিকাদার দিয়ে কাজটি না করিয়ে শুধুমাত্র ঠিকাদারের কাগজপত্র ব্যবহার করে প্রায় তিন লক্ষ আত্মসাৎ করেছেন। অনিয়মের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৭-৮টি ভুয়া বিলের মাধ্যমে প্রায় দুই লক্ষ টাকার টিএ ও ডিএ বিল উত্তোলনের একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে সূত্রে জানা যায়। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে টাকা উত্তোলন করতে গেলে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে এসব বিলের বিরুদ্ধে লিখিত আপত্তি জানানো হয়।
 
গত মে মাসে উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারীস্থ সরকারি দুগ্ধ ও ছাগল উন্নয়ন খামারের পশু উৎপাদন কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। সেখানে গিয়ে তাঁর দুর্নীতির গতি আরো বেড়ে যায়। খামারে লাগানো ৭শত চারা গাছের নিরাপত্তার জন্য বাঁশের তৈরি কোন খাঁচাই ক্রয় না করে ক্রয়ের ভুয়া ভাউচার তৈরি করে ৩লক্ষ টাকা লোপাট করেছেন তিনি। 
 
খামারে নিযুক্ত লোক দিয়ে বিভিন্ন কাজ করালেও তিনি শ্রমিক মজুরীর বরাদ্ধকৃত ৪ লক্ষ টাকার মধ্যে ইতোমধ্যে ৩ লক্ষাধিক টাকা মজুরী বিল তৈরি করে লোপাট করেছেন। খামারে সচল থাকা একটি ট্যাক্টর ও জীপ গাড়ি রয়েছে।  প্রতিমাসে এ দুটি গাড়ীর ৪০-৫০লিটার  জ্বালানি প্রয়োজন হলেও তিনি প্রতিমাসে ১৩০ থেকে ১৮০লিটার জ্বালানি বিল তৈরি করে সরকারি টাকা লোপাট করে থাকেন। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে কোন কৃষকের গৃহপালিত পশু ও খামার দেখতে গেলে তিনি ১হাজার থেকে দুই হাজার টাকা ভিজিটিং ফি আদায় করে থাকেন। এছাড়া সরকারি দুগ্ধ ও ছাগল উন্নয়ন খামারের গবাদি পশুর ঔষুধ, উদ্ভিদ, সার, অফিসের কম্পিউটার সামগ্রি ক্রয় ও আগস্ট মাসে খামারের স্থাপনা মেরামতের নামে ভুয়া ভাউচারে অন্তত ৪ লক্ষাধিক টাকা লোপাট করেছেন বলে সূত্রে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খামারে চাকরি করা অনেকেই জানান, সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে আইয়ুব মিয়ার অনিয়মের মাধ্যমে লোপাট করা টাকার সকল প্রমাণ বেরিয়ে আসবে।
 
এদিকে সরেজমিন পরিদর্শনে দুগ্ধ খামারে গিয়ে লাগানো কোন গাছের গোড়ায় কোন প্রকার বাঁশের খাঁচা দেখা যায়নি। নাম প্রকাশ না করা শর্তে সেখানে কর্মরত স্টাফরা জানান, কোন প্রকার বাঁশের খাঁচা দিতে তারা দেখেননি।  যদি তিনি ক্রয় করে থাকেন অবশ্যই তার ছবিও প্রমাণ হিসেবে রাখবেন।
 
প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের স্থাপনা মেরামত সংক্রান্ত বিষয়ে কাগজে কলমে দেখানো এস এফ কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী ঠিকাদার সাকের উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি প্রাণি সম্পদ অফিসের কোন কাজ করিনি। আমার সাথে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কোন কথাই হয়নি। আমাকে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের অফিস সহকারি শওকত আলী প্রাণি সম্পদ অফিসের একটি কাজ পেয়েছি বলে জানিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চান। আমি কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজেই কাজটি করিয়ে নিয়েছেন বলে জানান। অফিসার মানুষ বলে আর কিছু বলতে পারিনি।
 
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের অফিস সহকারী শওকত আলীও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। 
 
হাটহাজারী উপজেলা প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা শুধু একটি ইস্টিমেইট দিয়েছি। তারা কি করেছে কিছুই জানি না’।
 
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আইয়ুব মিয়ার মুখোমুখি হলে তিনি চারা, খাঁচা, তেল, বিল উত্তোলণের অভিযোগের ব্যাপারে অফিসের কাগজপত্র দেখে পরে জানাবেন বলে জানান তবে ঠিকাদারের নামে টাকা উত্তোলণের দায় স্বীকার করে বলেন হয়ত কিছু ভুল হয়েছে। 
 
এ সময় তিনি আরো বলেন আমার অনেক সাংবাদিক অাত্বীয় রয়েছে। আপনারাও আমার ভাই আমাকে কিভাবে রক্ষা করবেন তা অাপনারাই জানেন।
 
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের স্থাপনা মেরামতের বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রেয়াজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছুটা কাজ করেছে বলে শুনেছি। বাকিটুকু করবে বলে জানিয়েছে কিন্তু করেছে কিনা জানি না। আপনি কষ্ট করে ডা. আইয়ুব মিয়ার সাথে বসে একটু আলাপ করে নিন’।
 
সরকারি দুগ্ধ ও ছাগল উন্নয়ন খামারের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ পরিচালক আবু হোসেন সরকার বলেন, ‘এসব বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
সিভয়েস/এস

হাটহাজারী প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়