Cvoice24.com


পুণ্যময় তীর্থস্থান বুড়া মসজিদ

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ৮ জানুয়ারি ২০১৯
পুণ্যময় তীর্থস্থান বুড়া মসজিদ

ছবি : সিভয়েস

চট্টগ্রাম শহরের অদূরে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাড়ে বোয়ালখালী। আর এ বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর বুড়া মসজিদ। এ মসজিদে দেশ-বিদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সমাগম ঘটে বরকত, ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণের আশায়।

জাতি-ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সারাদেশের মানুষের কাছে পুণ্যময় তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত এ বুড়া মসজিদ। প্রায় তিনশ’ বছর আগে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে মসজিদটি ঠিক কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সঠিক দিনক্ষণ জানা যায়নি।

মোঘল আমলের শেষের দিকে প্রথম শনের ছাউনি দিয়ে মসজিদটি গড়া হয়। জনশ্রুতি রয়েছে নামাজের সময় হলে এ মসজিদে গায়েবী আজান হতো।

চট্টগ্রামের তৎকালিন প্রশাসক থানাদার ওয়াসিন চৌধুরী এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর দাদা শেখ নাছির উদ্দিন তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের গৌড় এলাকা থেকে এ এলাকায় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করেছিলেন। শেখ নাছির উদ্দিন এলাকার মুসল্লীদের পাঞ্জাগানা নামায আদায়ের সুবিধার্থে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য বলেন।

ওয়াসিন চৌধুরীর পিতা একজন ইবাদত গুজার ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ইবাদত বন্দেগীতে এতই মশগুল থাকতেন যে, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কোন খবর রাখতেন না। বুড়ো বয়সে মসজিদে নামাজ-যিকির-আজকারে দিন রাত কাটিয়ে দিতেন। দিনের পর দিন কেটে যেত তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনায়।

এতই পরহেজগার ছিলেন যে, সবাই বুড়া হুজুর নামে ডাকত। ইবাদত করতে করতে তিনি একদিন এই মসজিদ থেকে গায়েব হয়ে যান। পরবর্তীতে তাঁর কোন সন্ধান কেউ পাননি বলে কথিত আছে। তাই তাঁর নামানুসারে এটি ‘বুড়া মসজিদ’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।

জানা গেছে, অল্প ক’জন মুসল্লী নামায পড়ার মত জায়গা নিয়ে ছন পাতার বেড়া এবং উপরে দু’নালি ছন দিয়ে মসজিদের প্রথম ঘর নির্মিত হয়। প্রতি বছর ছাউনি ও বেড়া পরিবর্তন করে ২০-২৫ বছর চলে এ মসজিদের কার্যক্রম। সে সময়ে সাপ, বাঘ ও জঙ্গলময় ছিল এই এলাকা। ফলে বাঘের ভয়ে ও ঝোঁপ-ঝাঁড়ের মাঝে অবস্থিত হওয়ায় এ মসজিদে মুসল্লীরা রাতে নামায আদায় করতে পারতেন না। নিরাপদ দুরত্বে থেকে মুসল্লীরা আযান দিয়ে চলে যেত।

পরে চারপাশে বাঁশের বেড়া এবং উপরে ছনের ছাউনি দিয়ে ১০-১৫ হাত লম্বা ও চওড়া করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এভাবে ছিলো বহু বছর।

১৮৮৬ সালে বেড়া ও ছনের ছাউনি ঘর ভেঙ্গে যায় প্রবল ভূমিকম্পের কারণে। ভাঙা অবস্থায় জোড়া তালি দিয়ে আরো ২০-২৫ বছর চলে এ মসজিদের কার্যক্রম। পরে স্থানীয় লোকজন মাটির দেয়াল তুলে পুনঃনির্মাণ করেন এ মসজিদ। এভাবে ৪-৫ বার নির্মাণ করা হয়। প্রায় ১০০ বছর পূর্বে মসজিদের কিয়দংশ পাকাকরণ করা হয়।

১৯৪০ সালে মসজিদের পুরাতন ভিত্তি ভেঙে নতুন করে ছাদ জমিয়ে পাকাকরণ করা হয়। এই ইমারত এখনও পর্যন্ত মসজিদের মধ্যখানে বহমান আছে। ১৯৭৪ সালে ৫-৬’শ জন মুসল্লী নামায আদায় করার ব্যবস্থা করে মসজিদ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৮৬ সালের দিকে দ্বিতীয় তলায় উন্নীত করা হয় এ মসজিদ। ১৯৭৫ সালের দিকে এ মসজিদের পাকা ভবনের গেইট নির্মিত হয়।

বলা বাহুল্য, এই মসজিদে প্রতি শুক্রবার জু’মা নামাজে এলাকার মুসল্লি ছাড়া আশেপাশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও মুসল্লিরা এসে নামাজ আদায় করেন। এখনো এ রেওয়াজ চালু আছে।

-সিভয়েস/এসএ/আরএইচ

 

মিনহাজ মুহি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়