Cvoice24.com


ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, হুমকির মুখে পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ৮ জানুয়ারি ২০১৯
ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, হুমকির মুখে পরিবেশ

বাঁশখালীতে ইট ভাটাগুলোত পোড়ানো হচ্ছে অবৈধ কাঠ। ছবি : প্রতিনিধি

বাঁশখালী উপজেলার ইট ভাটা গুলোতে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে বনের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সরকারি নিয়ম নীতি না মেনে সম্প্রতি ইটভাটা গুলোতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। কিন্তু এতে প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই। যেন দেখেও না দেখার ভাব।

নির্দিষ্টভাবে ১২০ ফুট চিমনির মাধ্যমে ইট পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও দু’একটি ছাড়া কয়েকটি ইট ভাটা সেই নিয়মও মানছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী ১ নম্বর পুকুরিয়া ইউনিয়নের চা-বাগান সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে গড়ে তোলা হয়েছে লম্বা চিমনির মেসার্স চৌধুরী ব্রিক নামের ইটভাটা। এছাড়া বাহারছড়ায় লোকালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন আরো একটি ইট ভাটা। যা সম্পূর্ণ পরিবেশ সম্মত নয়।

পাশাপাশি রয়েছে তার পুরাতন আরো একটি ইট ভাটা। তার পাশাপাশি ইলশা গ্রামে নুরুল আবচারের মালিকানাধীন জনসম্মুখে রাস্তার পাশেই কৃষি জমিতে দিন দুপুরে বনের কাঠ ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে এই ইট ভাটা। একে একে ২ কিলোমিটারের ব্যবধানে গড়ে উঠেছে ৪টি ইট ভাটা। তাছাড়া সাধনপুর ইউনিয়নের লটমনি পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা হয়েছে ৩টি ইট ভাটা।

চাম্বল-বড়ঘোনা সড়কের পাশেই মুন্সী খীল এলাকায় লোকালয়ে কৃষি জামিতে ১টি, শেখেরখীল-ছনুয়া সড়কে ১টি, বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদী পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে একটি ইট ভাটা ।  তবে বর্তমানে সেটি মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে বাঁশখালী সাতকানিয়া সীমান্তের চূড়ামণি এলাকায় ৪ টি ইট ভাটা রয়েছে। বাঁশখালীর বাহারছড়ায় ৪টি ইট ভাটার মধ্যে ১টিতে ১২০ ফুট চিমনি থাকলেও অপর গুলোতে পুরাতন আমলের ড্রাম চিমনির মাধ্যমে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ফলে আশপাশের পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

জানা যায়, একবার ইট পোড়াতে প্রায় চার হাজার মণ কাঠ পোড়াতে হয়। এসব কাঠ জোগাড় হচ্ছে আশপাশের সংরক্ষিত বন থেকেই। ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। এতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়ছে। পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন  ইট ভাটা গুলো গড়ে উঠলেও তা নিয়ে কারও যেন কোনো মাথাব্যথা নেই।

শুধু বাহারছড়ায় নয়, চাম্বল, জলদী, শেখেরখীল, পুকুরিয়াতে এভাবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে লোকালয় ও ফসলি জমিতে অনেক ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ।

অবৈধ ইট ভাটার মালিকরা দাবি করেছেন, তাদের পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিয়ে ইট ভাটা চালু রাখতে হচ্ছে। অবৈধ ইট ভাটা চালু রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তারা বলেন, শুরুতে তারা ড্রাম চিমনি পদ্ধতির ভাটায় ইট পোড়াতেন। পরে সরকার ১২০ ফুট উঁচু চিমনি দিয়ে ইট ভাটা তৈরির নির্দেশনা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশিরভাগ ইট ভাটা ১২০ ফুট উঁচু চিমনিতে রূপান্তরিত করা হয়।

ইট ভাটা গুলোতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে ইট ভাটার মালিকরা কয়লার সংকটের কারণে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়লার চেয়ে কাঠের দাম কম হওয়ায় ইট ভাটা গুলোতে প্রতিনিয়ত বেপরোয়াভাবে পোড়ানো হচ্ছে অবৈধ কাঠ।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইট ভাটার মালিক মর্তুজা আলীর সঙ্গে মুটোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

চাম্বল বনবিট কর্মকর্তা শেখ আনিসুজ্জামান বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ইট ভাটা গুলোতে পাহাড় কাটা ও কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণভাবে নিষেধ রয়েছে। তবে পরিবেশবান্ধব নিয়ম অনুসারে ইটভাটা হলে বন বিভাগের কোন আপত্তি নেই। যে সমস্ত  ইট ভাটা পরিবেশবান্ধব নিয়ম না মেনে পাহাড়ি মাটি বা কাঠ ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কেউ যাতে পাহাড় থেকে মাটি ও কাঠ না কাটে সেজন্য কঠোরভাবে নজরদারীতে রাখা হয়েছে। তবে নিয়ম বহির্ভূত কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে  আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিগত কয়েকবছর আগে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অবরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল। পরে অনেক দেনদরবার করে সে যাত্রায় আর অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। অভিযান না চালানোর জন্য রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের চাপও রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, পরিবেশবান্ধব ইট ভাটা তৈরিতে কোন বাধা নাই। তবে পাহাড় থেকে কাটা মাটি ও কাঠ পড়ানোর কোন নিয়ম নাই। যদি কেউ এই নিয়ম না মেনে চলে তদন্তপূর্বক তাদেরকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লক্ষ টাকার জরিমানা করা হবে।

তিনি আরো বলেন, অবৈধ ইটভাটা এবং কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সতর্ক নজরদারি, নিয়মিত অভিযান চালানো এবং ইট ভাটা মালিকদের সচেতন করা হয়েছে। যেসব ইটভাটায় অবৈধ ভাবে পাহড়ি কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছে তাদেরকে শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে।

-সিভয়েস/এসএইচ

 

মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়