Cvoice24.com


প্রসিদ্ধ ওলি হযরত শাহ বু-আলী কালান্দর শাহ (রঃ)

প্রকাশিত: ১৪:২৪, ২ জানুয়ারি ২০১৯
প্রসিদ্ধ ওলি হযরত শাহ বু-আলী কালান্দর শাহ (রঃ)

ছবি : সিভয়েস

প্রসিদ্ধ ওলি হযরত শাহ বু-আলী কালান্দর শাহ (রঃ)। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যম করলডেঙ্গা গ্রামে এ ওলির মাজার অবস্থিত। এ মাজারকে ঘিরে প্রতিবছর ৫ ফাল্গুন মহাসমারোহে ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯০০ সাল থেকে এ ওরশ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
 
রীতি অনুযায়ী ওরশের দিন র্সূয ডুবার সময় গরু-মহিষ জবাই করা হয়। আর এ সময় মাজারের চারপাশে গাছপালার উপর দিয়ে শির শির করে ধোয়া বের হয়। এসব ধোয়াকে অনেকে বলে অলৌকিক ধোয়া, আবার অনেকে এক ধরনের পোকা বলে অভিহিত করেন। তবে যাই হোক না কেন- সেটাকে অলৌকিকই ধরে নেয়া যায়।

এই অলোকিক দৃশ্য দেখার জন্য ওরশের সময় হাজার-হাজার নর-নারী ও ভক্তরা জড়ো হয় মাজার এলাকায়। যা ধর্মানুরাগীদের উৎসাহ আর উদ্দীপনার এক অন্যমাত্রা যোগ করে।

এ ওলি বু-আলী শাহ নামেই অধিক পরিচিত হলেও শেখ শরফুদ্দিন তাঁর আসল নাম। শেখ শরফুদ্দিন বু-আলী কালান্দর পানিপতি (১২০৯-১৩২৪ খ্রিস্টাব্দ) চিশতিয়া তরিকার একজন সুফি সাধক। যিনি ভারতে বাস করতেন। পানিপথের শহরে তার দরগাহ (মাজার) অবস্থিত যা একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান। তাঁর পিতার নাম শেখ ফখর উদ্দিন, যিনি তাঁর সময়ে মহান পণ্ডিত এবং দরবেশ ছিলেন। তিনি খুব অল্প বয়সে পড়াশোনা শেষ করেন। 

দিওয়ানে হযরত শরফুদ্দিন বু-আলী কালান্দার নামে তিনি ফার্সি কবিতার একটি সংকলন প্রকাশ করেন, যা পরবর্তকালে খাজা শাহাউদ্দিন কর্তৃক পাঞ্জাবী ভাষায় অনূদিত হয়। এই মহান সাধকের অনেক উপাখ্যান লোক মুখে প্রচলিত রয়েছে। 

একটি উপখ্যান এমন রয়েছে যে, প্রায় ৩৬ বছর কার্নাল নদীর পানিতে দাঁড়িয়ে থেকে সাধনা করার ফল স্বরূপ তাঁকে বু আলী (আলীর সুবাস) উপাধি দান করা হয়। এই মর্যাদাপ্রাপ্ত হওয়ার পর অনেক মহান সুফি সাধক তাঁর সাক্ষাত লাভ করার জন্য আসেন। 

অন্য আরেকটি উপাখ্যানে উল্লেখ আছে, একদিন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বেশারতে (স্বপ্ন) আসেন এবং তাকে একটি ইচ্ছা পূরণের আশ্বাস দেন। কালান্দর নবুওয়াতের আবেদন করেন। তখন তাঁকে বলা হল নবুওয়তের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) হচ্ছেন শেষ নবী। তারপর তিনি আলী হতে চাইলেন এবং বলা হল ঐ মর্যাদাটিও আগেই পূর্ণ হয়েছে। এরপর তিনি আলীর অন্তত সুবাস পাওয়ার জন্য আবেদন করলেন এবং তাঁর এই ইচ্ছা পূর্ণ করা হল। 

জনশ্রুতি আছে, চার বছর বয়স থেকেই বু-আলী কালান্দার মায়ের কাছ থেকে পবিত্র কুরআন পাঠ করা শিখেন এবং পণ্ডিত রাম সানাহি থেকে হিন্দু শাস্ত্রের উপর জ্ঞান অর্জন করেন। তরুণ বয়সে তিনি তিনটি তরিকার (সোহারার্দিয়া, কাদেরিয়া এবং নকশাবন্দিয়া) জ্ঞান অর্জন করেন। তাঁর উনিশ জন আধ্যাত্মিক পীর বা দীক্ষাগুরু রয়েছে। যাদের মধ্যে এগারজন মুসলমান এবং আটজন হিন্দু।

বোয়ালখালীর নিকটস্থ এলাকা শাকপুরা থেকে মাজার জিয়ারত করতে আসা মনির মিরাজ বলেন, প্রতিবছর ফাল্গুনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এ মাজারে জিয়ারত করতে আসি। ওরশ শরীফ অনুষ্ঠানকে ঘিরে গরু-মহিষ জবেহ করার সময় মাজারের চারপাশের গাছ থেকে অলৌকিক ধোয়া বের হয়। তা দেখার জন্য প্রতিবছর ওরশের সময় এখানে আসা হয়। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে সামনের ফাল্গুনে ওরশ শরীফে আবারো আসবো।

চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান থেকে বন্ধু ইরফানের সাখে ঘুরতে আসা মিজবাহ্ বলেন, বন্ধু ইরফানের সাথে তাদের এলাকায় ঘুরতে এসেছি। মাজারের অলৌকিক ধোয়ার কথা শুনাতেই এখানে ছুটে আসা। এ অলৌকিক ধোয়া নিজের চোখে দেখার ইচ্ছা আছে। যদি সুযোগ হয়, ইনশাআল্লাহ এ ফাল্গুনের ওরশ শরীফে অলৌকিক ধোয়া দেখার জন্য আসবো।

ফাল্গুন মাসে এ মাজারের ওরশ শরীফকে ঘিরে হাজারো মানুষের ভিড় জমে। 

যেভাবে যাবেন: চট্টগ্রাম শহর থেকে বহদ্দারহাট-বাসর্টামিনাল এসে কানুনগোপাড়া অথবা দাশের দিঘীরপার টেম্পু যোগে মধ্যম করলডেঙ্গা মাজার গেইট হয়ে যাওয়া যায়।

-সিভয়েস/এসএ/এমইউ

মিনহাজ মুহি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়