Cvoice24.com

ইশতেহার ঘোষণা শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগ : কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮
আওয়ামী লীগ : কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী

উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা'সহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহার ঘোষণা শেষে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী।’

আজ মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর হোটেল প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।

অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবী, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক'সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

ইশতেহারে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বিগত সময়ের অঙ্গিকার বাস্তবায়ন ও ১০ বছরের উন্নয়নের চিত্রপট তুলে ধরা হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। আমাদের এবারের অঙ্গীকার আমরা টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করব। আমরা আমাদের ইশতেহার এমনভাবে তৈরি করেছি যাতে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারি। এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জনগণ কিছু পায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কাজ করতে গিয়ে আমার বা আমার সহকর্মীদেরও ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে। আমি নিজের এবং দলের পক্ষ থেকে আমাদের ভুল-ভ্রান্তিগুলো ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার জন্য দেশবাসীর প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরো সুন্দরতম ভবিষ্যত নির্মাণ করব।’

আগামী নির্বাচনে জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করুন। আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দিব। এটা আমার ওয়াদা। ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বাঙালি জাতি এবার স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনবে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ।

ইশতেহারে বিগত দিনের উন্নয়ন চিত্র : মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৭৫১ ডলারে উন্নীত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলার। দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২১.৮ শতাংশে নেমেছে। জিডিপি’র আকার প্রায় ৫ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি থেকে প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকায় উন্নীত। এইচবিএসসি’র প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ১০.৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ২০১০ থেকে বর্তমান পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ে সর্বমোট ২৬০ কোটি ৮৫ লক্ষ ৯১ হাজার বই বিতরণ করা হয়েছে। নির্বাচিত হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের চলমান প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করব। সংসদকে আরো কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, গণমাধ্যম, বিচারবিভাগকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা লাভের সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা হবে। মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

এছাড়া প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়-পরায়ণতা এবং জনসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে। আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও দক্ষ 'দুর্নীতিমুক্ত' দেশপ্রেমিক এবং গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে পুলিশ'সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে জনবল নিয়োগ করা হবে। আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে দুর্নীতির পরিধি ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হবে।

সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা হবে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

আগামী ৫ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ এবং দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়। দেশে ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। আমরা শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিব। পাকা সড়কের মাধ্যমে সকল গ্রামকে জেলা/উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। ছেলেমেয়েদের উন্নত পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করা হবে। ইন্টারনেট/তথ্য প্রযুক্তি সর্বত্র পৌঁছে যাবে।

এছাড়া ১ কোটি ২৮ লাখ কর্মসৃজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রতি উপজেলা থেকে প্রতিবছর গড়ে ১ হাজার যুব/যুব নারীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তথ্য সম্বলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। তরুণদের সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব বিনোদন কেন্দ্র’। প্রতিটি জেলায় ‘যুব স্পোর্টস কমপ্লেক্স’ গড়ে তোলা হবে। নারীর প্রতি সকল বৈষম্যমূলক আচরণ/প্রথা বিলোপ করা হবে।
বাল্যবিবাহ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আলাদা ব্যাংকিং ও ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।  প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করা হবে।
>>সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে এবং সবার ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে। দারিদ্র্যের হার ১২.৩ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। দারিদ্র্যের হার ১২.৩ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে।

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সফল ধারা অব্যাহত রাখা হবে। কৃষি উপকরণের উপর ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি সুলভ ও সহজপ্রাপ্য করা হবে।
কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা হবে। ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষিপণ্যের দক্ষ সাপ্লাই চেন/ভ্যালু চেইন গড়ে তোলা হবে। কৃষি গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে। ছোট ও মাঝারি আকারের দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠা এবং মৎস্য চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনমত ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতি সহায়তা বৃদ্ধি করা হবে।

২০২০ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং ৫,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হবে।

শিল্প উন্নয়ন, শ্রমিক কল্যাণ ও শ্রমনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, যোগাযোগ,
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণ: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সমুদ্র বিজয়: ব্লু  -ইকোনমি- উন্নয়নের দিগন্ত উন্মোচন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা, শিশু কল্যাণ
প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ কল্যাণ, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন, ধর্ম ও সংস্কৃতি, ক্রীড়া, ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়,
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহ, প্রতিরক্ষা: নিরাপত্তা সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সুরক্ষা, পররাষ্ট্র, এমডিজি অর্জন এবং এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন) বাস্তবায়ন কৌশল (২০১৬-২০৩০) ও ব-দ্বীপ বা ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০।

সিভয়েস/এস.আর

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়