Cvoice24.com

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী
‘আদর্শহীন ব্যক্তিত্ব জনগণকে কিছু দিতে পারেন না’

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮
‘আদর্শহীন ব্যক্তিত্ব জনগণকে কিছু দিতে পারেন না’

ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি আর কারো নাম নিতে চাই না। নামটাও এখন মুখে আনা উচিত নয়। আমার তাদের জন্য করুণা হয়। কারণ তারা দিকভ্রষ্ট-নীতিভ্রষ্ট হয়ে গেছে। এই নীতিভ্রষ্ট আদর্শহীনরা কখনও মানুষকে কিছু দিতে পারে না, দিতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও দিতে পারবে না।

আজ সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস ও হত্যার রাজনীতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ হত্যা করা এবং তাদের অগ্নিসন্ত্রাস কতো নিরপরাধ জীবন কেড়ে নেয়। এখনো কতো মানুষ সেই পোড়া শরীর নিয়ে জীবনযাপন করছে। কাজ করতে পারছে না, পরিবারগুলো কষ্ট পাচ্ছে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে, শুধু এদের ওই অগ্নি সন্ত্রাসের কারণে।

‘একজন রাজনীতিবিদ জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করে। নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা এটা কোন ধরনের রাজনীতি’- প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এইভাবে মানুষের সর্বনাশ করেছে। ক্ষমতায় থেকে মানুষের সম্পদ কেড়ে নিয়েছে। জনগণের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। মানুষের উপর অত্যাচার করেছে। আবার যখন ক্ষমতায় নেই তখন মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে অসংখ্য মানুষের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা কিভাবে- কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইবে? ভোট চাইতে গিয়ে কি বলবে..?’

‘আর এই দুর্নীতিবাজদের সাথে এবং দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারীতে যারা সাজাপ্রাপ্ত; ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তাদের উদ্ধার করতে নেমেছেন আমাদের কিছু জ্ঞানী-গুণী এবং স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী। যে যুদ্ধাপরাধীদের আমরা বিচার করেছি, যুদ্ধাপরাধী হিসাবে শাস্তি কার্যকর হয়েছে, তাদের ছেলেরা নমিনেশন পায় এদের হাত থেকে। পৃথিবীর কোন দেশে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা যুদ্ধাপরাধী, সাজাপ্রাপ্ত তাদের কেউ কখনো কোথাও স্থান করে দেয় না। আর এই দুর্নীতিবাজদের সাথে হাত মিলিয়েছে, খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, অস্ত্র চোরাকারবারীদের সাথে কিসের স্বার্থে, কেন- এটাই প্রশ্ন’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘১০ বছরে যেই পরিবর্তনটা আমরা এনেছি, এই পরিবর্তনটা আবার অনেকের চোখে পড়ে না। যখন মানুষ ভাল থাকে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় তখন তারা বলে এটা নাকি স্বেচ্ছাচারিতা? স্বেচ্ছাচারিতাটা কিভাবে হলো? আমার সেটা প্রশ্ন? স্বেচ্ছাচারিতার কি দেখতে পেলো তারা? তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে দেখলাম ঘোষণা করেছে যে, দশ বছরের স্বেচ্ছাচারিতাকে নাকি পরিবর্তন করবে? তাহলে পরিবর্তন কি? জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, আবার সন্ত্রাস, আবার সেই ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা করা, আবার নির্বাচনের নামে প্রহসন আর দেশের সমস্ত উন্নয়ন ধ্বংস করে দিয়ে দেশকে সম্পূর্ণভাবে আবার অন্ধকার যুগে নিয়ে যাওয়া? এই পরিবর্তন তারা আনতে চান! ৪৭ বছর হলো দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই ৪৭ বছরের মধ্যে এরা ক্ষমতায় ছিল। কি দিয়েছিল মানুষকে? কি পেয়েছে মানুষ? অবশ্য মানুষ কিছু না পেলেও ওই বিএনপি-জামাত জোট তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।’

জিয়া পরিবারের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে দুর্নীতির মামলায় তারা হয় সাজাপ্রাপ্ত না হয় মামলার আসামি, আর আমাদের উপর দুর্নীতির অভিযোগ যখন এনেছিল বিশ্বব্যাংক, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে এবং বাংলার মানুষ আমার সঙ্গে ছিল, সেই চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবিলা করেছি। বিশ্বব্যাংক কোনো দুর্নীতি খুঁজে পায়নি। ওই কানাডার ফেডারেল কোর্ট স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, বিশ্বব্যাংকের সব অভিযোগ মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট। আমাদের কোনো কর্মের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মাথা হেঁট হোক সেটা কিন্তু করি নাই, বরং আজ বিশ্বে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ- বিদেশে যাচ্ছে তারা একটা সম্মান পাচ্ছে, মর্যাদা পাচ্ছে, বাংলাদেশ আজ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। অন্তত সেইটুকু করতে সক্ষম হয়েছি।’

‘তাহলে স্বেচ্ছাচারিতা কোথায় হলো? ওনারা নাকি পরিবর্তন করে ফেলবেন? ঠিক আছে। খুব ভালো। পরিবর্তন তারা করুক। কিন্তু আজকে যারা এক হয়েছে তারা কারা?’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী, সেই যুদ্ধাপরাধীরা কিভাবে মনোনয়ন পায়? কিভাবে তারা প্রার্থী হয়। যারা বাংলাদেশেই চায়নি। আর তাদের দোসর কারা? আমাদের এই স্বনামধন্য, যারা তত্ত্ব কথা দিয়ে অনেক মানুষকে বিভ্রান্তি করতে চেয়েছে। আমি আর কারো নাম নিতে চাই না। আসলে নামটা নিতেও এখন, মনে হয় যেন এই নামই মুখে আনা উচিত নয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর একটি কথা হচ্ছে। ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে, তারা সরকার গঠন নাকি করবে? তার সরকারের প্রধান কে হবে সেটা কিন্তু আজ পর্যন্ত জাতির সামনে দেখাতে পারে নাই। একটা প্রশ্ন রেখে যাই, তাদের সরকারপ্রধান কে হবে? এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, সে হবে? না ওই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানের হত্যায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি সে হবে? না ওই যারা যুদ্ধাপরাধী হিসাবে সাজা দিয়েছি তাদের কেউ হবে? সেটাও তো তারা স্পষ্ট করে জানায়নি। সেটাও তো দেশবাসী জানে না এবং দেশবাসীকেও সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দেশবাসীকেও বেছে নিতে হবে তারা কাকে চায়? তারা কি ধরনের সরকার চায়? সেটা আজ দেশের জনগণের উপরেই আমি এই দায়িত্ব ছেড়ে দিলাম। আমি একটা কথাই বলবো, নৌকা মার্কায় ভোট চাই। দেশের সেবা করে দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন এবং আমার বিশ্বাস আছে বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দেবে।’

সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকয়া সুলতানা, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান’সহ নেতৃবৃন্দ।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন যৌথভাবে উক্ত সভা পরিচালনা করেন।

সিভয়েস/এস.আর

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়