Cvoice24.com


রিপোর্টের নামে ডাক্তারের স্বাক্ষর বাণিজ্য!

প্রকাশিত: ১৪:৫৮, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮
রিপোর্টের নামে ডাক্তারের স্বাক্ষর বাণিজ্য!

রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তাররা বিভিন্ন ‘টেস্ট’ দিয়ে থাকেন। টেস্ট করাতে রোগীরা দ্বারস্থ হন নগরীর ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। প্যাথলজিস্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্বাক্ষর সম্বলিত রিপোর্টটি দেয়া হয় রোগীকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্যাথলজিস্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্বাক্ষর থাকলেও সেগুলো তারা মাসিক বা এককালীন চুক্তিতে বিক্রি করে থাকেন। ডাক্তার রিপোর্ট তৈরি না করলেও ল্যাব টেকনিশিয়ানের তৈরিকৃত রিপোর্টেই চলছে চিকিৎসা। ফলে ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছে রোগীরা।

ভুল রিপোর্টের কারণে জীবনহানির ঘটনাও ঘটছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, আমরা অভিযানে গেলেও ডাক্তারের স্বাক্ষর সম্বলিত সাদা প্যাড লুকিয়ে রাখা হয়।

সিভয়েসের অনুসন্ধানে উঠে আসে, কতিপয় চিকিৎসক ভয়াবহ স্বাক্ষর বাণিজ্যে চালাচ্ছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো টাকার বিনিময়ে নিজেদের সাদা প্যাডে চিকিৎসকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে।

ভুক্তভোগী সাতকানিয়ার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ জানান, চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু টেস্ট করাতে যান নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। টেস্টের রিপোর্টে লেখা হয় তার শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ রয়েছে। কয়েকদিন পরদিন একই টেস্টের পুরো উল্টো রিপোর্ট দেয় আরেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

আরেক ভুক্তভোগী মুক্তা বেগম জানান, চিকিৎসকের পরামর্শে নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করাতে যান তিনি। বিকেলে পরীক্ষার রিপোর্টে আলসার বলে রিপোর্ট দেন। রিপোর্টে চিকিৎসকের স্বাক্ষরও আছে। স্বামীর পরামর্শে কয়েকদিন পর একই টেস্টের পুরো উল্টো রিপোর্ট দেয় আরেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাইদুল হক আসাদ জানান, বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করেছি। রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিল টেকনিশিয়ান। ল্যাবে কোন চিকিৎসক ছিল না। তিনি কয়েক ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসকের স্বাক্ষরসহ রিপোর্ট দেন।

প্রতিদিন হাজারো রোগী ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর এ স্বাক্ষর বাণিজ্যের ভুক্তভোগী।

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী সিভয়েসকে জানান, চিকিৎসদের স্বাক্ষর বাণিজ্যে বিষয়ে কোন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসেনি, আসলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চিকিৎসকরা এ বিষয়টির সাথে যুক্ত কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী সিভয়েকে জানান, এটা বেশ কিছুদিন যাবত হচ্ছে। আমাদের নজরেও আছে। আমরা বহুবার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করি। টাকা পয়সার মতো অভিযানের সময় লুকিয়ে রাখে স্বাক্ষর করা সাদা প্যাড। কোন চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ ধরনের কাজে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর নগরীর কেয়ার ইনভেস্টিগেশন নামে একটি রোগ নিরূপণ কেন্দ্রে সাতকানিয়ার স্কুল শিক্ষক সৈয়দ ফজলুর রহমান মুরাদের হিস্টোপ্যাথলজির পরীক্ষায় ভুল রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষার রিপোর্টে তার শ্বাসনালির টিস্যুতে ক্যান্সারের জীবাণু রয়েছে উল্লেখ করা হয়।

ভারতের চেন্নাইয়ে অ্যাপোলো ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে হিস্টোপ্যাথলজির পরীক্ষার ৬ ডিসেম্বর দেয়া রিপোর্টে সৈয়দ ফজলুর রহমান মুরাদের শরীরে কোনো ধরনের ক্যান্সারের জীবাণু নেই। তিনি যক্ষা রোগে আক্রান্ত উল্লেখ করা হয়।

এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর নাজির আহমেদ নামে এক ব্যক্তির মেরুদন্ডে ‘ব্রেইন ক্যান্সার’ ধরা পড়েছে উল্লেখ করে রিপোর্ট দেয় শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি।

১৬ অক্টোবর নিশান নামে এক রোগীর সিএসসিআর’র কিডনির ইন্টারভেনাস ইউরোগ্রাফি (আইভিও) পরীক্ষায় কিডনিতে পাথর মিলেছে উল্লেখ করে রিপোর্ট দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

চিকিৎসকদের পরামর্শে ৮ নভেম্বর স্কয়ার হাসপাতালে কিডনির কম্পিউটার ট্রমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান করান তিনি। এবার রিপোর্টে আসে ভিন্ন তথ্য। দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় সিটি স্ক্যান রিপোর্টে নিশানের কিডনিতে পাথরের কোনো নমুনা মেলেনি।

-সিভয়েস/আরএইচ

মিনহাজুল ইসলাম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়