Cvoice24.com

চট্টগ্রাম জেলা ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখা
ডিজিটালাইজেশনে কমছে জটিলতা

প্রকাশিত: ১২:১৯, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮
ডিজিটালাইজেশনে কমছে জটিলতা

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা তুলতে এলে সিএন্ডএফে (ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং) চাকরিরত ওমর ফারুকের সাথে কথা হয়। ফারুকের বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর গ্রামে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পে জায়গা পড়েছে তাদের। যার কারণে সরকারী প্রকল্পের অধীনে চলে গেছে তার ভূমি, চেক পাওয়ার জন্য তাকে একটি টোকেন দেয়া হয়েছিল। গ্রামে এক দালালের খপ্পরে পড়েছিলেন তার মা, যার মধ্যে মূল টাকার মধ্যে দশ শতাংশ টাকা দালালকে দিতে হবে এবং এক শতাংশ টাকা চলে যাবে উৎস করের খাতে। অবশেষে তিনি সরাসরি চলে আসেন জেলা প্রশাসকের এলএ (ভূমি অধিগ্রহণ) শাখায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কক্ষে। সরাসরি কথা বললেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সাথে এবং তার চেকের উৎস কর ছাড়া বাকি টাকা তিনি পেয়ে গেলেন।

প্রয়োজনীয় কাজে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। তার মধ্যে কার্যালয়ের এলএ শাখায় প্রতিদিন শতাধিক মানুষ একসাথে সেবা নিতে আসেন এখানে। সাধারণত জেলা প্রশাসনের প্রত্যেকটি শাখা কর্মব্যস্ত থাকলেও এ শাখায় একটু বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় কর্মকর্তাদের। তাই এই শাখাকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার জন্য ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস তৈরির মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সরকারি অধিগ্রহণকৃত ভূমি সমূহের টাকা প্রদান করা হয় এই শাখা থেকে। তাই ভূমির মালিকরা যাতে নিরাপদে নিজের টাকা সংগ্রহ করতে পারেন সে লক্ষ্যে সরাসরি এবং সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মমিনুর রশিদ।

আগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা ‘দুর্নীতির আখড়া’ হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ব্যাগভর্তি ৫৮ লাখ টাকা’সহ পুলিশের হাতে একজন আটক হওয়ার পর থেকে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ে টাকার গন্তব্যস্থল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। এরপর থেকে দুর্নীতির সকল পথ বন্ধ করতে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। ওই উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পুনরায় বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় স্বচ্ছতা আনার নিমিত্তে নতুন করে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন এবং নতুন একটি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন। www.landmutation.com এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাবেন ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি, জানা যাবে ভূমি অধিগ্রহণের চেকের আপডেট।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল বিধায় ম্যানুয়ালি জমির হিসাব-নিকাশ করা, প্রাক্বলন তৈরি, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে রোয়েদাদ তৈরি থেকে শুরু করে ক্ষতিপূরণ বিতরণ সব কিছুই হবে ব্যাংকিং সফটওয়ারের আদলে তৈরি করা ল্যান্ড এ্যাকুইজিশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নামক একটি সফটওয়ারের মাধ্যমে। যার ফলে অধিগ্রহণ কার্যক্রমের যে কোনো প্রক্রিয়াগত ত্রুটি পরিহার করা সম্ভব হবে।

এই সফটওয়ারের মাধ্যমে ৩ ধারা, ৬ ধারা ও ৭ ধারার নোটিশ ওয়েবসাইট থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জমির মালিকের মোবাইলে এসএমএস আকারে চলে যাবে। এছাড়া ক্ষতিপূরণের টাকা গ্রহণকালে বায়োমেট্রিক তথ্য নেয়া হবে যাতে ভবিষ্যতে মালিকানা নিয়ে জটিলতা হলে তা সহজেই নিরসন করা যায়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি ভূমি অধিগ্রহণে আলোচিত তা হলো- ক্ষতিপূরণের টাকা বিতরণ। বিদ্যমান আইনে এলএ চেকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করা হয়। এই ক্ষতিপূরণের টাকা গ্রহণ করতে জমির মালিকগণ বিভিন্ন মধ্য-স্বত্বভোগী দালালের খপ্পরে পড়েন। অনেকসময় এলএ শাখার কিছু অসাধু কর্মচারীও এই ধরণের কাজে জড়িত থাকেন। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সফটওয়ারের মাধ্যমে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তির ব্যাংক হিসাবে ইএফটি (ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) এর মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের টাকা স্থানান্তর করা হয়। তবে এর জন্য বিদ্যমান আইন সংশোধন করতে হবে।

ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ সিভয়েসকে বলেন, একজন ব্যক্তির ভূমি অধিগ্রহণ থেকে চেক বিতরণ পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকটি প্রক্রিয়া ওয়েবসাইটে আপডেট করি। অর্থাৎ অধিগ্রহণকৃত ব্যক্তির দুর্ভোগ এবং হয়রানি কমে গেছে বললেই চলে। বর্তমানে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নানা ভূমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে এতে আমরা মূল ভূমির তিনগুণ অর্থ দিয়ে আমরা নিয়ে নিচ্ছি তা আবার অনলাইনে আপডেট করছি। কিছু সাধারণ মানুষ কর্মকর্তাদের সাথে কথা না বলে দালালের সহায়তা নেয় যার কারণে সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে জেলা প্রশাসনের।

জানা যায়, স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল অধ্যাদেশ, ১৯৮২ এবং স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ম্যানুয়াল, ১৯৯৭ অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই আইনটি বেশ জটিল বিধায় সাধারণ মানুষ অধিগ্রহণ বিষয়ে খুব একটা অবগত নয়। আর এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে কতিপয় মধ্য-স্বত্বভোগী এলএ শাখায় সেবা নিতে যাওয়া অসহায় মানুষদের হয়রানি করে। হয়রানির অন্যতম একটি প্রধান কারণ অধিগ্রহণের বিষয়ে তথ্য না জানা।

এছাড়া অধিগ্রহণ মামলার বিস্তারিত তথ্য, অধিগ্রহণের আলাইনমেন্ট ম্যাপ, গেজেট ইত্যাদি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হচ্ছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ চট্টগ্রাম জেলার সকল অধিগ্রহণ মামলার তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার নতুন অধিগ্রহণ কার্যক্রম গ্রহণে জটিলতা পরিহার করতে পারবে। ওয়েবসাইট এর পাশাপাশি এলএ শাখায় একটি অত্যাধুনিক মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে। যার মাধমে খুব সহজে সেবাপ্রত্যাশী জনগণ ডেটাবেইজ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে ও প্রিন্ট নিতে পারবেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন সিভয়েসকে বলেন, জেলা প্রশাসনের নিয়মিত ও অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে এলএ শাখার কার্যাদি। এটাকে আমরা রুটিন-ওর্য়াক মনে করি। সরকারি প্রকল্পগুলো যতদিন চলমান থাকবে ততদিন মানুষের ভিড় থাকবে। তাই আমরা এই শাখাকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নিয়েছি। অধিগ্রহণ চেকের আপডেট আমরা ওয়েবসাইটে দিয়ে দিচ্ছি, যে কেউ চাইলে সেখানে প্রবেশ করতে পারেন। আবার কারো কোনো অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলেও আমাদেরকে ওয়েবসাইটে অভিযোগ/পরামর্শ দিতে পারবেন। আর প্রাপ্ত অভিযোগ/পরামর্শের ভিত্তিতে আমাদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে কিছু মানুষের তেমন কোনো ধারণা নেই। তাই এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকা এবং যারা এই ওয়েব সম্পর্কে অবগত হবেন তাদেরকে বিষয়টিতে জনমত গঠনের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন।

সিভয়েস/এস.আর

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়