Cvoice24.com


পৌরসভার ‘বৈধ’ টোকেনে ‘অবৈধ’ চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ১৫:০২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮
পৌরসভার ‘বৈধ’ টোকেনে ‘অবৈধ’ চাঁদাবাজি

ছবি : সিভয়েস

কক্সবাজার কলাতলীর মোড়ে পৌরসভার টোল আদায়ের নামে সিএনজি অটোরিকশা থেকে দৈনিক ও মাসিক চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে ‘কলাতলী অটোরিকশা ও সিএনজি শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিডেট’ নামে একটি সমিতির নেতারা। 

পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতি সিএনজি থেকে বৈধভাবে রশিদের মাধ্যমে ১০ টাকা আদায়ের নিয়ম থাকলেও চক্রটি আদায় করছে ৩০ টাকা করে। দৈনিক প্রায় ১২০টি সিএনজি অটোরিকশা চালক থেকে এই টাকা আদায় করা হয় বলে জানা গেছে।

১০ টাকার স্থলে অতিরিক্ত ২০ টাকা চাঁদা আদায় করায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সকল সিএনজি চালকদের মাঝে। সংগঠনের প্রভাবশালী নেতাদের হুমকি ও চাপের মুখে অসহায় হয়ে এই অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে বলেও জানান চালকরা।

এছাড়া ১২০টি সিএনজি অটোরিকশার মধ্যে প্রায় অর্ধ শতাধিক অনিবন্ধিত সিএনজি থেকে মাসে ২ হাজার ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়। আর নিবন্ধিত প্রায় ৭০টির অধিক সিএনজি থেকে আদায় করা হয় মাসে ১০০ টাকা টাকা করে। সব মিলিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে সংগঠনের নেতারা। কলাতলীর মোডে অবৈধভাবে রাস্তার উপর পার্কিং করে দেড় বছর ধরে চালকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের কলাতলীর মোডে রাস্তার উপর পার্কিং করে প্রতিদিন রাখা হয় শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা। ফুটপাতে ভ্রাম্যমান টিকেট কাউন্টার (নাম্বার কাউন্টার) বসিয়ে এসব অটোরিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ‘কলাতলী অটোরিকশা ও সিএনজি শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে। কলাতলীর মোড থেকে এই সমিতির মাধ্যমে টোকেন নিয়ে অটোরিকশাগুলো মেরিন ড্রাইভ রোড হয়ে যাতায়াত করে হিমছড়ি-ইনানী-সোনার পাড়া-শামলাপুর। এসব জায়গা থেকেও সিএনজি অটোরিকশাগুলো ভাড়া নিয়ে কলাতলীর মোডে আসে। এই রোডে প্রায় ১২০টির অধিক অটোরিকশা রয়েছে। এসব অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ৩০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয় ‘কলাতলী অটোরিকশা ও সিএনজি শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিডেটের নামে। সিএনজি থেকে টাকা আদায়ের সময় এই সমিতির নামে কোনো রশিদ বা টোকেনও দেওয়া হয় না। তারা কক্সবাজার পৌরসভার টোল আদায়ের ১০ টাকা একটি টোকেন দিয়ে আদায় করে ৩০ টাকা। 

এই সমিতির একটি সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ ও আমির হোসেন রুবেল নামে তাদের নিজস্ব দুইজন লাইনম্যান রয়েছে। এই দুইজন লাইনম্যান প্রায় ১২০টি সিএনজি’র মধ্যে অনিবন্ধিত প্রায় অর্ধশতাধিক সিএনজি থেকে মাসে আদায় করেন ২ হাজার ২০০ টাকা করে। আর নিবন্ধিত প্রায় ৭০টির অধিক সিএনজি থেকে মাসে ১০০ টাকা করে আদায় করেন এই দুই ব্যক্তি। দৈনিক ও মাসিক ভিত্তিতে প্রায় ১২০টি সিএনজি অটোরিকশা থেকে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। 

জানা গেছে, লাইনম্যান মোহাম্মদ ও রুবেল মাসিক ভিত্তিতে যে টাকাগুলো আদায় করে ওখান থেকে মাসে ২১ হাজার টাকা দেয়া হয় ‘কলাতলী অটোরিকশা ও সিএনজি শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিডেট’ নামে এই সমিতিকে। এই সমিতির অর্থ সম্পাদক আব্দু সালাম ভেট্টু প্রতিদিন সন্ধ্যায় লাইনম্যানদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে তুলে নেন। আর বাকি টাকাগুলো মাসভিত্তিক ভাগ করে দেয়া হয় ট্রাফিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে।  

এছাড়া ১২০টি সিএনজি থেকে দৈনিক ৩০ টাকা করে যে অর্থ আদায় হয় ওখান থেকে ১০ টাকা টোল যায় কক্সবাজার পৌরসভার নামে। আর বাকি ২০ টাকা করে সমিতির নেতারা ভাগভাটোয়ারা করে যাচ্ছে গত দেড় বছর ধরে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কলাতলীর মোড থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কোনো নতুন সিএনজি গাড়ি রাস্তায় নামলে ‘কলাতলী অটোরিকশা ও সিএনজি শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিডেট’ নামের এই সমিতিতে ভর্তি হতে হয়। ওখানে নতুন গাড়ি ভর্তি বাবদ নেওয়া হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। আর ড্রাইভারের কার্ড বাবদ নেওয়া হয় ৫০০ টাকা। রাস্তার উপর পার্কিং, ফুটপাতে টোকেন দেওয়া ও রাস্তায় চলাচল বাবদ দৈনিক বা মাসিক চাঁদা আদায়ের কোনো অনুমতি বা নিয়ম নেই বলে জানা গেছে ‘কলাতলী অটোরিকশা ও সিএনজি শ্রমিক সমবায় সমিতির। কোনো ধরণের অনুমতি না থাকলেও সিএনজি চালকদের জিম্মি করে সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, অর্থ সম্পাদকসহ কয়েকজন মিলেমিশে গত দেড় বছর ধরে এভাবে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে।  

এ বিষয়ে লাইনম্যান মোহাম্মদ বলেন, অনিবন্ধিত ও নিবন্ধিত সিএনজি থেকে মাসিক যে টাকা উত্তোলন করা হয়; এটি প্রায় সব জায়গায় তোলা হয়। ট্রাফিক পুলিশের থেকে রক্ষা পেতে অনিবন্ধিত সিএনজি থেকে মাসে ২২০০ টাকা করে আদায় করে জায়গামত দেয়া হয়। আর ‘কলাতলী অটোরিকশা ও সিএনজি শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিডেট’র নামে যে টাকা তোলা হয়, ওখান থেকে ১০ টাকা পৌরসভার টোল আর বাকি ২০ টাকা শ্রমিকদের স্বার্থের জন্য।

চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে উক্ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মুবিনের মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, পৌর এলাকায় সড়ক ও ফুটপাত দখল করে পার্কিং করার জন্য কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে পৌরসভার ভেতরে সিএনজি অটোরিকশা থেকে দৈনিক ১০ টাকা করে টোল আদায়ের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কলাতলী অটোরিকশা ও সিএনজি শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিডেট নামে কোনো সমিতিকে অনুমতি দেয়া হয়নি। কলাতলীতে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে পার্কিং করলে খোঁজ নিয়ে উচ্ছেদপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এইচ.এম মাহফুজুর রহমান বলেন, কলাতলীর মোডে অবৈধভাবে পার্কিং ও চাঁদা আদায়ের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

-সিভয়েস/এসএ/এমইউ

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়